'যদি জঙ্গলে বোমা, তবে পাকিস্তান জবাব দিল কেন?'

বালাকোটে ১২টি মিরাজ ২০০০ বোমা ফেলে ভারতের বিমানবাহিনী। ছবি: সংগৃহীত
বালাকোটে ১২টি মিরাজ ২০০০ বোমা ফেলে ভারতের বিমানবাহিনী। ছবি: সংগৃহীত

পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার জবাব দিতে ১২ দিন পর পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী। পাকিস্তান খাইবার পাখতুনখাওয়ার বালাকোটে জইশ-ই-মুহাম্মদের ঘাঁটিতে বোমা ফেলে যুদ্ধবিমান মিরাজ। হামলার ছবি প্রকাশ না করলেও ওই দিন কতজন জঙ্গি নিহত হয়েছিল, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। পাকিস্তান বলছে, শুধু গাছে বোমা হামলা হয়েছে। এবার ওই হামলা নিয়ে ভারতের বিমানবাহিনীর প্রধান বললেন, যদি জঙ্গলেই বোমা ফেলি, তাহলে পাকিস্তান কেন পাল্টা আঘাত করতে ছুটে এল।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে সীমানা পেরিয়ে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলা চালিয়েছিল ভারতের বিমানবাহিনী। ১২টি মিরাজ ২০০০ (গ্লাইড) বিশেষ বোমা ফেলে ধ্বংস করেছে জইশ-ই-মুহাম্মদ, হিজবুল্লাহ মুজাহিদীন ও লস্কর-ই-তাইয়েবার ঘাঁটি। ওই দিনের হামলায় ৩০০ জঙ্গি নিহতের দাবি করে আসছে ভারত। ওই বিমান হামলার ছয় দিন পর আজ সোমবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান বিএস ধানোয়া।

ওই দিনের হামলায় কতজন জঙ্গি নিহত হয়েছে—এর উত্তরে ভারতের বিমানবাহিনীর প্রধান বলেন, ‘আমরা আমাদের লক্ষ্যে আঘাত হেনেছি। তবে কতজন মারা গেছে তা আমরা বলব না, সরকার বলবে। আর আমরা গুনতে পারি না কতজনের মৃত্যু হয়েছে। কতজন মানুষ সেখানে ছিল, তার ওপরে আসলে সংখ্যা নির্ভর করে। হতাহতের সংখ্যা গোনার মতো পরিস্থিতিতেও ওই দিন ছিলেন না বিমান সেনারা। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করা, আক্রমণের পর হতাহত গোনা নয়।’

২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে সীমানা পেরিয়ে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলা চালায় ভারতের বিমানবাহিনী। ছবি: সংগৃহীত
২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে সীমানা পেরিয়ে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলা চালায় ভারতের বিমানবাহিনী। ছবি: সংগৃহীত

বিমানবাহিনী টার্গেটে হামলা চালাতে পারেনি—সেই অভিযোগ সরকারিভাবে খারিজ করে দিয়ে বিএস ধানোয়া বলেন, টার্গেট সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব। আমরা যদি কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করি, সেখানেই আক্রমণ করি...না হলে কেন তারা (পাকিস্তান) আমাদের হামলার জবাব দিল? আমরা যদি জঙ্গলেই বোমা ফেলতাম, তাহলে জবাব দেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। তাঁর দাবি, লক্ষ্যে আঘাত করা হয়েছে বলেই জবাব দিতে এসেছিল পাকিস্তান। তবে বিমান সেনাদের অভিযানে কতজনের মৃত্যু হয়েছে, তা তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি। বিএস ধানোয়া জানান, ‘চলতি অপারেশন’ সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করবেন না।

দুই দেশের সর্বশেষ সংকটের শুরু ১৪ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় দেশটির আধা সামরিক সিআরপিএফের গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জনের বেশি জওয়ান নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ এ হামলার দায় স্বীকার করে। এ ঘটনার ১২ দিন পর ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বালাকোটে বিমান হামলা চালায় ভারত। নয়াদিল্লির দাবি, ওই হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদের বড় ঘাঁটি গুঁড়িয়ে গেছে। নিহত হয়েছে ৩০০ জঙ্গি। জঙ্গি ঘাঁটিতে আকাশপথে মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী। কিন্তু ওই হামলায় এখন পর্যন্ত মাত্র একজনের আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে বলে দাবি হামলাস্থল পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের বালাকোটের বাসিন্দাদের। এরপরই প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জঙ্গিদের লাশ কই। তবে ইতালির এক সাংবাদিক দাবি করেছেন, ভারতের আঘাত হানা জায়গা থেকে কয়েকটি দেহ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান বিএস ধানোয়া। ছবি: সংগৃহীত
ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান বিএস ধানোয়া। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে সেই হামলার পরদিনই ভারতের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে পাকিস্তানের একাধিক যুদ্ধবিমান। তার মধ্যে ছিল এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। পরে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ দেশের সৈন্য ঘাঁটিই ছিল পাকিস্তানের আক্রমণের লক্ষ্য। কিন্তু তা অস্বীকার করেছে পাকিস্তান।

ভারতীয় যুদ্ধবিমানের একজন পাইলটকে আটকের দাবি করে তাঁর ভিডিও প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। যদিও কিছুক্ষণ পরেই সেই ভিডিও মুছে ফেলা হয়েছে। সেই ভিডিওতে একজন ব্যক্তিকে চোখ বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। ভারতের পক্ষ থেকে একজন পাইলট নিখোঁজ হওয়ার কথা স্বীকার করা হয়েছে। ভারতের দুটি বিমান ভূপাতিত করে পাকিস্তান, আটক করে ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে। অবশ্য গত শুক্রবার ভারতীয় পাইলট অভিনন্দনকে ছেড়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনা কমার লক্ষণ দেখা গেছে।