বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যস্থতাকারীর নাম চাইলেন আদালত

অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি মামলার নিষ্পত্তি সব পক্ষের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে হবে কি না, সেই সংশয় রয়েই গেল। সুপ্রিম কোর্টের এই প্রস্তাবে বিবদমান সব পক্ষ এখনো একমত হতে পারেনি। এই বিষয়ে চূড়ান্ত নির্দেশ দেওয়ার আগে আজ বুধবার সুপ্রিম কোর্ট বিবদমান পক্ষদের মধ্যস্থতাকারীদের নাম জানাতে বলেছেন।

সুপ্রিম কোর্ট অন্যতম বিচারপতি এস এ বোবড়ে বলেন, ‘আমরা অতীত বদলাতে পারব না। কে আক্রমণ করেছিল, বাবর কী করেছিলেন, সেই সময় কে রাজা ছিলেন, মন্দির ছিল নাকি মসজিদ, সেই সব আমরা পাল্টাতে পারব না। আমরা শুধু বর্তমান পরিস্থিতি বিচার করতে সক্ষম। আমরা মনে করছি, মধ্যস্থতার ফলে উত্তেজনা প্রশমিত হবে।’

অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি বিতর্কিত স্থানের মালিকানা নিয়ে বিবাদ চলছে গত ৭০ বছর। দেশের একাধিক রাজ্যে একাধিক আদালতে এই মামলার শুনানি হয়েছে। কিন্তু বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি এখনো। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধূলিসাৎ হওয়ার পর সেখানে তৈরি অস্থায়ী মন্দিরে ভগবান শিশু রামচন্দ্রের (রাম লালা) মূর্তির পূজা হয়ে আসছে। আদালতের রায়ে স্থিতাবস্থা জারি থাকলেও বিতর্কিত ২ দশমিক ৭৭ একর জমির মালিকানা কার, তার মীমাংসা এখনো হয়নি। এলাহাবাদ হাইকোর্ট ২০১০ সালে বিতর্কিত জমি সমান তিন ভাগে ভাগ করে বিরাজমান ভগবান রাম লালা, নির্মোহী আখড়া ও সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ​যত আবেদন জমা পড়ে, সুপ্রিম কোর্ট সবগুলো এক করে বিবেচনা করছেন। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ মধ্যস্থতায় আগ্রহ দেখিয়েছেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি এ এস বোবড়ে, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি অশোক ভূষণ ও বিচারপতি এস এ নাজির।

সুপ্রিম কোর্ট মনে করছেন, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এই স্পর্শকাতর বিষয়টির মীমাংসার একটা চেষ্টা করা দরকার। কিন্তু হিন্দু সংগঠনগুলোর এতে আপত্তি। আজ সেই আপত্তির কথা তাঁরা আদালতকেও জানিয়ে দেন। তাঁরা বলেন, এতে লাভের লাভ কিছুই হবে না। শুধু সময় নষ্ট হবে। তা ছাড়া হিন্দুদের কাছে এটা বিশ্বাসের প্রশ্ন। এই যুক্তি শুনে বিচারপতিরা বলেন, ‘আমরা একটা চেষ্টা করছি। সেই চেষ্টা সফল হবে না সেটা আগাম বলা যায় না।’

এই মামলায় রয়েছে মোট পাঁচটি পক্ষ। এদের মধ্যে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড ও নির্মোহী আখড়া মধ্যস্থতায় রাজি হলেও রাম লালা বিরাজমান, হিন্দু মহাসভা ও মহন্ত সুরেশ দাস অরাজি। তাঁদের আপত্তি সত্ত্বেও মধ্যস্থতাকারীদের নাম দাখিল করার নির্দেশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানান, ‘আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি দেখছি। মধ্যস্থতার সাফল্যের সম্ভাবনা এক শতাংশ থাকলেও আমরা সেই সুযোগটা নিতে চাই।’

লাগাতার শুনানির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট এই বিবাদের মীমাংসা করবেন জানিয়েছেন। বিজেপি ও সংঘ পরিবার চেয়েছিল, লোকসভা ভোটের আগেই সর্বোচ্চ আদালতে এই মামলার নিষ্পত্তি হোক। এই মহল সরকারের ওপর অধ্যাদেশ জারি করার জন্যও চাপ সৃষ্টি করেছিল।