৩ ফোনে শান্ত ভারত-পাকিস্তান

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর তিনটি ফোনে ভারত ও পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনা কমে যায়। ছবি: ফাইল ছবি
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর তিনটি ফোনে ভারত ও পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনা কমে যায়। ছবি: ফাইল ছবি

পুলওয়ামায় জইশ-ই-মুহাম্মদের আত্মঘাতী হামলায় সিআরপিএফের ৪০ জনের বেশি জওয়ান নিহত হওয়ার পরই পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অব কন্ট্রোল) বালাকোটে বিমান হামলা চালায় ভারত। ২১ মিনিটের ওই হামলার পরদিনই ভারতের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে পাকিস্তানের একাধিক যুদ্ধবিমান। এরই মধ্য পাকিস্তানে আটক হন ভারতের উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তে শুরু হয় উত্তেজনা। দুই দেশেই একে অপরের দিকে মারণাস্ত্র তাক করে রাখে। বিশ্বের অনেক দেশই ভারত-পাকিস্তানকে শান্তির পথ বেছে নেওয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু উত্তেজনার পারদ আর নামে না। এরই মধ্যে বিদেশ থেকে দুই দেশে ক্রিং ক্রিং বেজে উঠল ফোন। এই ফোনের পরই আপাত-উত্তেজনা কমে যায়। মেলে সমাধানের ইঙ্গিত।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর তিনটি ফোনে ভারত ও পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনা কমে যায়। ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় থেকে তিনি ফোন করেন দিল্লি ও ইসলামাবাদে। পম্পেওর ভূমিকার কারণে দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনার পারদ নিচে নেমে যায়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপমুখপাত্র রবার্ট পাল্লাডিনো গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, মাইক পম্পেওর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার পরই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার চলমান সমস্যা কমতে শুরু করে।

রবার্ট পাল্লাডিনো বলেন, ‘কূটনীতিকের কাজটা নিজে দায়িত্ব নিয়ে করেছিলেন পম্পেও। তিনি তিনটা ফোন করেছিলেন ভারত ও পাকিস্তানে। আর ওই ফোনে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার পারদ দ্রুত নামিয়ে দেয়।’ তিনি বলেন, তিনটি ফোনে দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে উত্তেজনার পারদ নামিয়ে দিতে পেরেছিলেন মাইক পম্পেও। হ্যানয় থেকে পম্পেওর দুটি ফোন যায় নয়াদিল্লিতে। এ সময় পাশে বসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে ও দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের কাছে ফোন করেন। এর কিছুক্ষণ পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোন যায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশির কাছে।

পাল্লাডিনো জানান, ‘ওয়াশিংটন চায় সমস্যা মেটাতে। আমরা চাই নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ আলোচনায় বসুক।’ তিনি বলেন, ‘সমস্যা সমাধানের ভিতটা তৈরি করে দিয়েছেন মাইক পম্পেও। এবার নিজেদের মধ্যে সেই আলোচনাটা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত ভারত ও পাকিস্তানের। দুটি দেশের কাছেই আমাদের আহ্বান এটাই। এখন যা অবস্থা, তাতে দুদেশের মধ্যে যুদ্ধে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কটা একেবারেই শেষ হয়ে যাবে।’

সম্প্রতি হ্যানয়ে শীর্ষ বৈঠক করেন উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং-উন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই সময় মাইক পম্পেও ভিয়েতনামে ছিলেন। তখন ভারত ও পাকিস্তানে ফোন করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

দুই দেশের সর্বশেষ সংকটের শুরুটা হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় দেশটির আধা সামরিক সিআরপিএফের গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জনের বেশি জওয়ান নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ এ হামলার দায় স্বীকার করে। এ ঘটনার ১২ দিন পর ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বালাকোটে বিমান হামলা চালায় ভারত। নয়াদিল্লির দাবি, ওই হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদের বড় ঘাঁটি গুঁড়িয়ে গেছে। নিহত হয়েছে ৩০০ জঙ্গি। জঙ্গি ঘাঁটিতে আকাশপথে মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী। কিন্তু ওই হামলায় এখন পর্যন্ত মাত্র একজনের আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে বলে দাবি হামলাস্থল পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের বালাকোটের বাসিন্দাদের। এরপরই প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জঙ্গিদের লাশ কই। তবে ইতালির এক সাংবাদিক দাবি করেছেন, ভারতের আঘাত হানা জায়গা থেকে কয়েকটি দেহ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়ার বালাকোটে বিমান হামলায় ‘জঙ্গি হত্যার’ তথ্যপ্রমাণ প্রকাশ করবে না ভারত।

এদিকে সেই হামলার পরদিনই ভারতের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে পাকিস্তানের একাধিক যুদ্ধবিমান। তার মধ্যে ছিল এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। পরে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ দেশের সৈন্য ঘাঁটিই ছিল পাকিস্তানের আক্রমণের লক্ষ্য। কিন্তু তা অস্বীকার করেছে পাকিস্তান।

ভারতীয় যুদ্ধবিমানের একজন পাইলটকে আটকের দাবি করে তাঁর ভিডিও প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। যদিও কিছুক্ষণ পরই সেই ভিডিও মুছে ফেলা হয়েছে। সেই ভিডিওতে একজন ব্যক্তিকে চোখ বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। ভারতের পক্ষ থেকে একজন পাইলট নিখোঁজ হওয়ার কথা স্বীকার করা হয়েছে। ভারতের দুটি বিমান ভূপাতিত করে পাকিস্তান, আটক করে ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে। অবশ্য গত শুক্রবার ভারতীয় পাইলট অভিনন্দনকে ছেড়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনা কমার লক্ষণ দেখা গেছে।