বাবুল সুপ্রিয়কে 'আনকালচারড' বললেন মমতা

জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বাবুল সুপ্রিয়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বাবুল সুপ্রিয়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী

ভারতের জনপ্রিয় প্লেব্যাক শিল্পী ও পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়কে ‘আনকালচারড’ বলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশটির আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাবুলের আসনে মমতা দলের প্রার্থী করেছেন অভিনেত্রী মুনমুন সেনকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাবুলের এক ‘সরস’ মন্তব্যের জবাব দিতে এ কথা বলেন মমতা।

২০১৪ সালে এই বাবুল সুপ্রিয়কে বিজেপি মনোনয়ন দেয় পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের আসানসোল কেন্দ্রে। নির্বাচনে তিনি তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের দোলা সেনকে ৭০ হাজার ভোটে পরাজিত করে সাংসদ হন। ওই বছর পশ্চিমবঙ্গে বিজয়ী দুই বিজেপি সাংসদের মধ্যে তিনি একজন। আর অন্যজন হলেন দার্জিলিং কেন্দ্রের প্রার্থী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া। বিজেপির জয়ী এই দুই সাংসদ এখন অবশ্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিমন্ত্রী। এবারও বাবুল সুপ্রিয় এই আসানসোল আসনে বিজেপির মনোনয়ন পাচ্ছেন।

গত মঙ্গলবার মমতার ঘোষিত তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় আসানসোলে আসনে রয়েছে মুনমুন সেনের নাম।

মুনমুন সেন ২০১৪ সালের নির্বাচনে বাঁকুড়া কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। এই কেন্দ্রের সিপিএমের হেভিওয়েট প্রার্থী বাসুদেব আচারিয়াকে তিনি ৯৮ হাজার ৫০৬ ভোটে পরাস্ত করেন। আর বাঁকুড়া কেন্দ্রে প্রার্থী করেছেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জিকে।

আসানসোলে মুনমুন সেনকে প্রার্থী করায় বাবুল সুপ্রিয় এক টুইটবার্তায় কিছুটা খোঁচা মেরে মন্তব্য করেন, ‘মমতাজি সব সময় আমার বিরুদ্ধে আসানসোলে “সেন-সেশনাল” প্রতিদ্বন্দ্বী উপহার দেন। ২০১৪ সালে দিয়েছিলেন দোলা সেনকে আর এবার ২০১৯ সালে দিলেন মুনমুন সেনকে। এ জন্য মমতাজিকে ধন্যবাদ।’

তবে বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র এই রসিকতা যে মমতার আদৌ পছন্দ হয়নি, তা তিনি গতকাল বুধবার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মমতা বলেন, ‘বাবুল সুপ্রিয় মুনমুনকে ভয় পাচ্ছে। তাই “সেনসেশনাল” টুইট করেছে।’ পাশাপাশি তিনি বাবুল সুপ্রিয়কে একজন ‘আনকালচারড মানুষ’ বলেন।

গতকাল বুধবার পশ্চিম বর্ধমানের অন্ডালে বাবুল সুপ্রিয় আরও বলেছেন, ‘মুনমুন সেনের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক। আসানসোলের ভোটে তাঁকে স্বাগত জানাই। তবে লড়াই লড়াইয়ের মতো হবে। দুই লাখ ভোটে এবার জিতব।’

ভোটার তালিকা থেকে গুরুং-রোশনের নাম বাদ
পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি জেলা দার্জিলিংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুং এবং সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির নাম বাদ দেওয়া হয়েছে ভোটার তালিকা থেকে। এ কারণে তাঁরা আর আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পারছেন না। যদি নির্বাচন কমিশনে আবেদনের পর নির্বাচন কমিশন তাঁদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেয়, সে ক্ষেত্রে হয়তো ভোটাধিকারের সুযোগ পেতে পারেন এই দুই নেতা।

দার্জিলিংয়ে পৃথক রাজ্যের দাবিতে ২০১৭ সালের ১২ জুন থেকে উত্তাল হয়ে ওঠে পাহাড়ি জেলা দার্জিলিং। তখন এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই দুই নেতা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দার্জিলিংয়ের এই পৃথক রাজ্যের আন্দোলন স্তব্ধ করার জন্য গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা ও বিমল গুরুংয়ের ডান হাত বিনয় তামাংকে বাগিয়ে আনেন। বিনয় তামাং রাজ্য সরকারের সঙ্গে হাত মেলালে স্তব্ধ হয়ে যায় পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য গড়ার আন্দোলন। আর এই আন্দোলনকে ঘিরে সে সময় অশান্ত হয়ে পড়ে দার্জিলিং। মিছিল, মিটিং, জ্বালাও–পোড়াও ও খুন–জখমের মধ্য দিয়ে চলতে থাকে এই আন্দোলন। এই আন্দোলনকে ঘিরে রাজ্য সরকার বিমল গুরুং, রোশন গিরিসহ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বহু নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে ওই সব নেতা গা–ঢাকা দেন। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়। যদিও ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে বিমল গুরুং ও রোশন গিরিকে ‘প্রোক্লেমড অফেন্ডার’ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন আদালত। এখনো অবশ্য বিমল গুরুং-রোশন গিরিরা আত্মগোপন করে আছেন। অন্যদিকে, বিমল গুরুংয়ের ডান হাত বিনয় তামাং এখন রাজ্য সরকারের সঙ্গে মিশে শাসন করছে গোর্খা টেরিটরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা জিটিএ। জিটিএর চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়েছে বিমল গুরুংয়ের প্রতিপক্ষ সেই বিনয় তামাংকে; যদিও ২ মাস ২১ দিন পর দার্জিলিংয়ে সেই একটানা বন্‌ধ্‌ প্রত্যাহার করা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে।