নিউজিল্যান্ডের ঘটনায় মুসলিম বিশ্বের নিন্দা

আহত একজনকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: এএফপি
আহত একজনকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: এএফপি

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় এশিয়ার রাজনৈতিক ও মুসলিম নেতারা তীব্র ঘৃণা ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সন্ত্রাসী হামলায় এসব দেশের অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানান তাঁরা।

আজ শুক্রবার জুমার নামাজের সময়ে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারী গুলি ছোড়ার দৃশ্য ফেসবুক করেন। এতে এটি ভাইরাল হয়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনা সারা বিশ্বে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
এই হামলার ঘটনায় ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, গুলিবর্ষণের ঘটনায় ইন্দোনেশিয়া তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। বিশেষ করে ঘটনাটি এমন সময়ে ঘটেছে, যখন জুমার নামাজ আদায় করছিলেন সবাই।
কিছুক্ষণ আগে তাঁর বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সে সময়ে মসজিদে ছয়জন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক ছিলেন। শোনা যাচ্ছে, তাঁদের মধ্যে তিনজন বাঁচতে পেরেছেন। বাকি তিনজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
নিউজিল্যান্ডে নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত তানতোয়ি ইয়াহিয়া রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মসজিদে কোনো ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক আটকে আছেন কি না, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ক্রাইস্টচার্চে ৩৩১ জন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক বাস করেন। এর মধ্যে ১৩৪ জন শিক্ষার্থী।

মালয়েশিয়ার ক্ষমতাসীন জোটের সবচেয়ে বড় দলের নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম জানান, এই হামলার ঘটনায় একজন মালয়েশিয়ার নাগরিক আহত হয়েছেন। ঘটনাটিকে বিশ্বশান্তি ও মানবতার ওপর এক কালো ছায়া হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি। আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, বর্বর এই হামলার কথা জানতে পেরে আমি বেদনাহত, যে ঘটনা মানবিক মূল্যবোধের বিরোধী ও সাধারণ মানুষের প্রাণ নিয়েছে। নিউজিল্যান্ডের মানুষ ও আক্রান্ত পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা ও সহানুভূতি জানাচ্ছি।
নিউজিল্যান্ডের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো নির্দিষ্ট করে মৃতের সংখ্যা ও পরিচয় জানায়নি। দেশটির মিডিয়া জানিয়েছে, একাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে এ ঘটনায়।

এ ঘটনাকে তুর্কি প্রেসিডেন্ট তাইয়েপ এরদোয়ান ‘বর্ণবাদী ও ফ্যাসিবাদী হামলা’ বলে অভিহিত করেছেন। প্রেসিডেন্টের বিশেষ মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন টুইটারে লিখেছেন, ‘এই হামলা প্রমাণ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। এর আগেও আমরা দেখেছি ইসলামভীতি কেমন বিকৃত ও খুনে মানসিকতার জন্ম দেয়। এ ধরনের মানসিকতার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। ইসলামবিরোধী ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত।’

ভারতের বেসরকারি মুসলমান শিক্ষিত সমাজ ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল বোর্ড’–এর প্রতিষ্ঠাতা কামাল ফারুকি এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্রমশ বাড়তে থাকা এই ঘৃণা বেশ চিন্তার বিষয় বলে জানিয়েছেন তিনি, ‘মুসলিমবিরোধী ভাইরাস বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ছে। সব ধর্মাবলম্বীর এ ঘটনায় চিন্তিত হওয়া উচিত।’

নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ফিজিতে নিযুক্ত আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত ওয়াহিদউল্লাহ ওয়াইসি টুইটারে জানিয়েছেন, এই ঘটনায় তিনজন আফগান আহত হয়েছেন, ‘এই ঘৃণিত ঘটনায় যেসব আফগান প্রাণ হারিয়েছেন ও আহত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমার সমবেদনা।’

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ ফয়সালও এই ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করেছেন। টুইটারে #PakistanAgainstTerror (সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান) হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে এই হামলার ঘটনায় পাকিস্তানের অবস্থান প্রকাশ করেছেন তিনি।

হামলাকারীর প্রকাশ করা ভিডিও দেখে অনলাইনে প্রচুর মানুষ নিজেদের ভয় ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন। তবে এই ভিডিও হামলাকারী নিজেই পোস্ট করেছেন কি না, এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো বিবৃতি দেয়নি।

আক্রান্ত অনেক মানুষ নিউজিল্যান্ডের অভিবাসী ও উদ্বাস্তু বলে উল্লেখ করেছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডার্ন, ‘তারা আমাদের অংশ। কিন্তু যে এই ঘৃণ্য হামলা করেছে, সে আমাদের অংশ নয়। নিউজিল্যান্ডে তাদের কোনো জায়গা নেই।’