'নিউজিল্যান্ডের অন্ধকারতম দিন'

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে প্রধান আলোচিত খবর ছিল। বিশ্বের শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিটিই তাদের অনলাইনে হামলার ঘটনাপ্রবাহের প্রতি মুহূর্তের হালনাগাদ জানিয়েছে। টেলিভিশন ও বেতার চ্যানেলগুলো সংবাদ প্রচার করেছে সারাক্ষণ। বিশ্বের প্রথম সারির অনেক সংবাদমাধ্যম এই ঘটনার প্রভাব নিয়ে তাৎক্ষণিক মতামত ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। তবে হামলার ভিডিও ও হামলাকারীর মৌলবাদী ও বর্ণবিদ্বেষী ইশতেহার প্রচার করে জনমনে ভীতি ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে নিউজিল্যান্ডসহ অনেক দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমের সমালোচনাও হয়েছে বিস্তর।

বিবিসি, হাফিংটন পোস্ট, দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, ভারতের এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়ার শীর্ষ খবর ছিল ক্রাইস্টচার্চ হামলা। হামলাকে ‘নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে কালোতম দিন’ বলেছে তাদের অনেকেই। বার্তা সংস্থা এপিসহ অনেক সংবাদমাধ্যমে হামলায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বেঁচে যাওয়ার প্রসঙ্গটি গুরুত্বসহকারে এসেছে।

বার্তা সংস্থা এএফপি ফেসবুকে হামলার সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিওটি আসল বলে শনাক্ত করেছে। ভিডিওটি যে মিথ্যা নয়, এটি নির্ণয় ডিজিটাল ভেরিফিকেশন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে বার্তা সংস্থাটি। হামলাকারী অস্ট্রেলীয় নাগরিক (২৮) হামলার আগে গতকাল সকালে তাঁর টুইটারে ‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’ শিরোনামের ৭৪ পাতার একটি ইশতেহারের লিংক পোস্ট করেন। ওই ইশতেহার বিশ্লেষণ করে এএফপি জানিয়েছে, বন্দুকধারীর লক্ষ্য শুরু থেকেই মুসলিমরাই ছিল। একই নামে ফ্রান্সে উদ্ভাবিত একটি ষড়যন্ত্রতত্ত্বের প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিয়েছে এএফপি। ওই তত্ত্বে প্রচার করা হয়েছিল, ইউরোপে অভিবাসীদের উচ্চ জন্মহারের কারণে সাদারা নিজ দেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সে হামলার খবর ও ছবি প্রকাশ করে শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, ‘নিউজিল্যান্ডের অন্ধকারতম দিন।’
যুক্তরাজ্যের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বিশ্লেষক অন্বিতা বসু সন্ত্রাস ছড়ানোয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকার দিকে আলোকপাত করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্বেগ নিশ্চিতভাবেই বাড়িয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা চার্লি ওয়াজেলের একটি তাৎক্ষণিক মতামত নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। শিরোনাম ‘আ নিউ এজ অব ভাইরাল টেরর’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ কীভাবে ইন্ধন পাচ্ছে, ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াজেল বিশ্লেষণ করেছেন সেটি।
যুক্তরাজ্যের ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকা যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর বিশ্লেষণ করেছে। নিউজিল্যান্ডের সরকারের অনুরোধে ইউটিউব, ফেসবুক ও টুইটার ক্রাইস্টচার্চ হামলার ভিডিও অনলাইন থেকে সরিয়ে ফেলতে যেখানে জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছে, সেখানে যুক্তরাজ্যের মূলধারার গণমাধ্যম মেইল অনলাইন, দ্য সান ও দ্য মিরর হামলার সম্পাদনাকৃত ভিডিও তাদের ওয়েবসাইটে প্রচার করেছে। অস্ট্রেলিয়ার স্কাই নিউজ, টেন ডেইলি, নিউজ ডট কম ডট, চ্যানেল নাইন, দ্য হেরাল্ড-সান ভিডিওর কর্তিত অংশ তাদের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পেজে প্রচার করেছে। এবিসি নিউজ ইশতেহারের অংশবিশেষ প্রচার করেছে।
সিএনএনকে কলাম লেখক মেহেদি হাসান বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের জন্য এই হামলা ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকবে।’ পাকিস্তানের ডন পত্রিকা এএফপির তথ্য দিয়ে লিখেছে, ‘ইসলামভীতি ও বর্ণবাদী ঘৃণার বিপদ এ ধরনের হামলা।’