লিনউড মসজিদে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়েছিলেন সাহসী তরুণ

সৈয়দ মাজহারউদ্দিন
সৈয়দ মাজহারউদ্দিন

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদে হামলার পর দ্বিতীয় হামলাটি হয় লিনউড মসজিদে। ওই মসজিদে হামলার সময় বন্দুকধারীকে জাপটে ধরে অস্ত্র কেড়ে নিয়েছিলেন এক সাহসী তরুণ। তবে অস্ত্র ফেলে রেখে হামলাকারী পালিয়ে যান। সৈয়দ মাজহারউদ্দিন নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় উঠে এসেছে সেই ঘটনা।

গতকাল শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদে স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার দিকে জুমার নামাজ আদায়রত মুসল্লিদের ওপর স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে হামলা চালান ব্রেনটন হ্যারিসন টারান্ট নামের এক অস্ট্রেলীয় যুবক। অল্পের জন্য ওই হামলা থেকে বেঁচে যান বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা। কাছাকাছি লিনউড মসজিদে দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হয়। দুই মসজিদে হামলায় নিহত হয়েছেন ৪৯ জন। এর মধ্যে আল নুর মসজিদে ৪১ জন এবং লিনউড মসজিদে সাতজন নিহত হন। একজন হাসপাতালে মারা যান। আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪০ জন। এর মধ্যে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

আজ শনিবার নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের অনলাইন সংস্করণে সৈয়দ মাজহারউদ্দিনের বয়ানে ওই সাহসী তরুণের কথা তুলে ধরা হয়।

মাজহারউদ্দিন বলেন, সাহসী তরুণ নিজের জীবন বিপন্ন করে বন্দুকধারীকে জাপটে ধরেন এবং অস্ত্র কেড়ে নেন।

মাজহারউদ্দিন বলেন, নামাজ আদায়রত অবস্থায় তিনি গুলির শব্দ শুনতে পান। শব্দ শুনে তিনি বুঝতে পারেন বন্দুকধারী খুব কাছেই অবস্থান করছেন। লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, মসজিদটি ছোট। ৬০ থেকে ৭০ জন নামাজ আদায় করতে পারেন। মূল প্রবেশদ্বারে বয়স্ক মুসল্লিরা নামাজ আদায় করছিলেন। বন্দুকধারী সেদিকে দিয়ে ঢুকেই ওই মুসল্লিদের ওপর গুলি করা শুরু করেন। বন্দুকধারী গুলিবর্ষণ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার সরঞ্জাম পরেছিলেন। ওই সময় এক তরুণ বন্দুকধারীকে জাপটে ধরেন।

মাজহারউদ্দিন বলেন, ওই তরুণ সাধারণত মসজিদটি দেখভাল করেন। তিনি সুযোগ বুঝে বন্দুকধারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং অস্ত্রটি কেড়ে নেন। ওই সাহসী তরুণ বন্দুকধারীর দিকে অস্ত্রটি তাক করার চেষ্টা করেন কিন্তু তিনি ট্রিগার খুঁজে পাচ্ছিলেন না। এরপর তিনি বন্দুকধারীকে ধরার জন্য তাঁর পেছন পেছন দৌড় দেন। কিন্তু বাইরে একটি গাড়িতে কয়েকজন অপেক্ষমাণ ছিল। ওই গাড়িতে করে পালিয়ে যান হামলাকারী।

মাজহারউদ্দিন জানান, তাঁর পাশে দুই বন্ধুর একজনের বুকে এবং অন্যজনের মাথায় গুলি লাগে।

এর মধ্যে এক বন্ধু ঘটনাস্থলেই মারা যান। অন্যজনের ভয়াবহ রক্তপাত হচ্ছিল। তিনি জরুরি সেবা পেতে যোগাযোগ শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আমি দৌড়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পর পুলিশ আসে। পুলিশ আমাকে আর ভেতরে যেতে দেয়নি। তাই আমি আমার বন্ধুকে বাঁচাতে পারলাম না। তাঁর অনেক রক্ত ঝরছিল। অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছাতে আধা ঘণ্টারও বেশি সময় নিয়েছে।’