টারান্ট অস্ত্র কেনেন অনলাইন থেকে

ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলাকারী ব্রেনটন হ্যারিসন টারান্ট। ছবি: সংগৃহীত
ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলাকারী ব্রেনটন হ্যারিসন টারান্ট। ছবি: সংগৃহীত

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে হামলায় ৫০ জন মুসল্লি নিহত হন। মসজিদে রক্তক্ষয়ী হামলা চালান সন্ত্রাসী ব্রেনটন হ্যারিসন টারান্ট। লাইভ করে হামলা চালান তিনি। হামলার আগে ব্রেনটন হ্যারিসন টারান্ট কয়েকটি অস্ত্র কিনেছেন। গান সিটি নামের একটি অস্ত্র বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান থেকে গত তিন মাসে চারটি অস্ত্র কেনেন তিনি। টারান্ট অস্ত্র কেনেন অনলাইনে।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, গান সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড টিপ্পল সোমবার ক্রাইস্টচার্চে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি বলেছেন ব্রেনটন হ্যারিসন টারান্ট অনলাইন থেকে চার মাসে চারটি অস্ত্র কেনেন। তাঁর প্রতিষ্ঠান সন্ত্রাসী টারান্টের কাছে চারটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ বিক্রি করেছে। এসব অস্ত্র গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের মার্চে কিনেছেন টারান্ট। তাঁর কাছে লাইসেন্স ছিল। তাঁর সম্পর্কে অস্বাভাবিক কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর দোকান থেকে বিক্রি হওয়া অস্ত্র কোথায় ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিয়ে করা প্রশ্নের সরাসরি জবাব দিতে অস্বীকার করেছেন টিপ্পল।

ডেভিড টিপ্পল বলেন, ‘দুটি মসজিদে হামলায় ব্যবহৃত সামরিক কায়দার আধা স্বয়ংক্রিয় (এমএসএসএ) আগ্নেয়াস্ত্র। এসব অস্ত্র তাঁর দোকান থেকে কেনা হয়নি। তিনি বলেন, হামলায় ব্যবহৃত একটি অস্ত্র আমি তাঁর কাছে বিক্রি করিনি। আমি ভিডিও দেখেছি, রাইফেল দেখেছি। তবে আমি জানি এ অস্ত্র কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। আমি যেটি ধারণা করছি, সে অনুসারে যদি এটির সিরিয়াল নম্বর হয়, তবে অস্ত্র গান সিটির সংশ্লিষ্ট কোনো দোকান থেকে সংগ্রহ করা হয়নি।’

গান সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড টিপ্পলের মতে, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের আবেদনের পরীক্ষা করার দায়িত্ব পুলিশ বিভাগের। এমনকি ভবিষ্যতেও কেউ যদি একই ধরনের লাইসেন্স নিয়ে আসেন, তাঁর কাছেও তিনি অস্ত্র বিক্রি করবেন বলে জানান তিনি। টিপ্পল বলেন, ‘গান সিটির কাছে অস্ত্র বিক্রির নথি আছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পুলিশকে দিয়েছি।’

স্থানীয় সময় গত শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে ক্রাইস্টচার্চে আল নূর মসজিদে জুমার নামাজ আদায়রত মুসল্লিদের ওপর প্রথমে সন্ত্রাসী হামলা হয়। কিছু পরে লিনউড মসজিদে দ্বিতীয় হামলা হয়। দুটি মসজিদে হামলায় ৫০ জন নিহত হন। আহত হন প্রায় ৫০ জন। কিছু পরে লিনউড মসজিদে দ্বিতীয় হামলা হয়।

আল নূর মসজিদে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে হামলার ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভস্ট্রিম করেন হামলাকারী ব্রেনটন হ্যারিসন টারান্ট। আল নূর মসজিদে আনুমানিক ৩০০ এবং লিনউড মসজিদে শ খানেক মুসল্লি নামাজ আদায় করছিলেন বলে জানা গেছে।

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে রক্তক্ষয়ী হামলার আগে হামলাকারী ব্রেনটন হ্যারিসন টারান্ট দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডেনের কার্যালয়ে ইশতেহার (মেনিফেস্টো) পাঠিয়েছিলেন। সেখানে ব্রেনটন টারান্টের শুক্রবারের হামলার কারণের ব্যাখ্যা ছিল। একই মেনিফেস্টো পাঠানো হয়েছে নিউজিল্যান্ডের কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এবং দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের কাছেও। এই মেইল পাওয়ার দুই মিনিট পরই তা পুলিশের কাছে পাঠানো হয়।

ব্রেনটন হ্যারিসন টারান্ট তাঁর শুক্রবারের রক্তক্ষয়ী হামলার কারণ ইশতেহারে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। ইশতেহারের বলা হয়েছে, আরেক সন্ত্রাসী অ্যান্ডার্স ব্রেইভিকের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিউজিল্যান্ডে হামলা চালিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং লন্ডনের মেয়র সাদেক খানের মৃত্যু কামনা করেছেন। ওই ইশতেহারের নাম তিনি দিয়েছেন ‘দ্য গ্রেট রিপ্লেসমেন্ট’।

হ্যারিসন টারান্টের নৃশংসতার কবল থেকে কয়েক মিনিটের জন্য রক্ষা পেয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়েরা। শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে তাঁরা ওই সময় গিয়েছিলেন মসজিদে। একজন নারী তামিম ইকবাল-মুশফিকুর রহিমদের ভেতরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেন। তাঁর নিষেধেই তড়িঘড়ি করে ওই স্থান ছেড়ে চলে যান ক্রিকেটাররা।