দার্জিলিংয়ে তৃণমূলকে হারাতে জোট বেঁধেছে গোর্খারা

দার্জিলিংয়ে তৃণমূলকে হারাতে জোট বেঁধেছে গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (জিএনএলএফ) এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
দার্জিলিংয়ে তৃণমূলকে হারাতে জোট বেঁধেছে গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (জিএনএলএফ) এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে দার্জিলিংয়ে হারাতে এবার জোট বেঁধেছে গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (জিএনএলএফ) ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। দুটো দলই দার্জিলিংয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।

২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি দার্জিলিং ও আসানসোলে জিতেছিল। জয়ী প্রার্থীরা হলেন সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া ও সংগীতশিল্পী বাবুল সুপ্রিয়। এঁরা দুজনই এখন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। ২০০৯ সালে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থন নিয়ে দার্জিলিং আসনে জিতেছিল বিজেপি।

কিন্তু কী হবে এবার? মমতা দার্জিলিংয়ে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন অমর সিং রাইকে। বিজেপি বা অন্য দল এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। দার্জিলিংয়ে এখনো শক্তিশালী দল হিসেবে পরিচিত গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও জিএনএলএফ। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুং ২০১৭ সালের জুন মাসে দার্জিলিংকে পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনকে ঘিরে অশান্ত হয়ে পড়ে দার্জিলিং। আড়াই মাসের বেশি দিন ধরে একটানা বন্‌ধ্‌ চলে দার্জিলিংজুড়ে। এরপরে মমতা মাঠে নেমে শান্ত করেন দার্জিলিংকে। ভাঙন ধরানো হয় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চায়। মমতা কাছে টেনে নেন জনমুক্তি মোর্চার দ্বিতীয় শক্তিধর নেতা বিনয় তামাংকে। এ কারণে ভেঙে যায় জনমুক্তি মোর্চা। একদিকে বিমল গুরুং ও রোশন গিরি আর অন্যদিকে বিনয় তামাং ও অনিত থাপা। এরপর একের পর এক মামলা দায়ের হয় বিমল গুরুং, রোশন গিরিসহ জনমুক্তি মোর্চার অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে। এ কারণে বিমল গুরুংরা আত্মগোপন করেন। দার্জিলিংয়ের স্বশাসিত সংস্থা গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) চেয়ারম্যান পদে রাজ্য সরকার বসান বিনয় তামাংকে।

এই পরিস্থিতিতে মমতা দার্জিলিংয়ের কর্তৃত্ব নিয়ে নেন। ঘোষণায় চলে আসে, দার্জিলিং আসনও তাঁরা পাচ্ছেন। কিন্তু মেনে নিতে পারেননি বিমল গুরুং ও জিএনএলএফের নেতারা। ইতিমধ্যে জনমুক্তি মোর্চাও সক্রিয় হয়েছে গোপন ডেরা থেকে। তারা সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদন জানিয়েছেন। এ মাসের শেষে সেই আবেদনের শুনানি হবে। বিজেপি মনে করে, বিমল গুরুংরা জামিন পেলে ঘুরে যাবে দার্জিলিংয়ের পরিস্থিতি। সেই লক্ষ্যে এবার এক হয়েছে জনমুক্তি মোর্চা ও জিএনএলএফ। গত সোমবার তারা সংবাদ সম্মেলন করে বিবৃতি দিয়েছে, এই দুই দল পাহাড়ের অন্যান্য দলকে নিয়ে লোকসভা নির্বাচনে লড়বে। এই দুই দল এত দিন একে অন্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও এবার নির্বাচনের প্রশ্নে এক হয়ে গেছে।

জনমুক্তি মোর্চা ও জিএনএলএফের লক্ষ্য দার্জিলিং থেকে তৃণমূলকে হটানো। সংবাদ সম্মেলনে এই দুই দল তৃণমূলকে ‘মীর জাফর’ বলে মন্তব্য করেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, মিথ্যা মামলা আর পুলিশ দিয়ে তাঁদের হয়রানি করছে রাজ্য সরকার। বিরোধীদের কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে। হত্যা করা হচ্ছে গণতন্ত্রকে। গোর্খাদের ভাগ করা হচ্ছে। এটা মানবে না দার্জিলিংবাসী। তাই তারা ফের ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। লড়বে তারা আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে। একতরফা গোল দিতে দেবে না মমতাকে।

কে হবেন এই আসনের প্রার্থী, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্রার্থী হিসেবে জিএনএলএফ নেতা সুবাস ঘিসিংপুত্র মন ঘিসিং এবং বর্তমান বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিযার নাম উঠে এসেছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যজুড়ে এক বছর ধরে প্রচার চালিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের লোকসভার ৪২ আসনেই এবার জিতবে তৃণমূল। এই ৪২ আসনে এবার আর ভাগ বসাতে পারবে না বিরোধীরা। এই লক্ষ্যে দলীয় নেতা–কর্মীদের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, কোনো অজুহাত নয়। জিততে হবে ৪২ আসনেই। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মমতা এই ৪২ আসনের মধ্যে জিতেছিলেন ৩৪টিতে। চারটি গিয়েছিল কংগ্রেসের ঝুলিতে আর দুটি করে গিয়েছিল বিজেপি ও বামফ্রন্টের থলিতে।

সবশেষ গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচনী সমীক্ষায় টাইমস নাউ ও ভিএমআর এক যৌথ সমীক্ষায় বলেছে, মমতা এবার এই রাজ্যে জিততে পারে ৩১টি আসন। গত নির্বাচনের চেয়ে তিনটি আসন কম।