দোলাচলে মমতা

সত্যিই কি এবার ভয় পেয়ে গেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
সত্যিই কি এবার ভয় পেয়ে গেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে প্রচারে নেমেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাও বসে নেই। রাজ্যজুড়ে প্রচার চলছে। তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস ও বাম দল প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করেছে। বিজেপির প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত হয়েছে।

নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। তারা কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় রুটমার্চ বা টহল শুরু করেছে। তারা স্থানীয় থানার পুলিশ নিয়েও পথে নেমেছে। সর্বাধুনিক অস্ত্র নিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী টহল দিচ্ছে। নেমেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর নারী সদস্যরাও।

কেন্দ্রীয় বাহিনীর এই টহলদলকে স্বাগত জানিয়েছে রাজ্যের বিরোধী দল। কিন্তু তৃণমূল সন্তুষ্ট নয়। তৃণমূলের পক্ষ থেকে এর মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অতি সক্রিয়তার অভিযোগ তুলে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনও বিষয়টি খতিয়ে দেখা শুরু করেছে।

কলকাতার উল্টোডাঙ্গায় রুটমার্চের সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর দু-একজন সদস্য কথা বলেছেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। এরপরেই তৃণমূল অভিযোগ তোলে, কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী অতি সক্রিয় হয়ে পড়েছে।

তৃণমূলের এই অভিযোগের সত্যতা নির্বাচন কমিশন খতিয়ে দেখছে। সে জন্য নির্বাচন কমিশন কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মার কাছে ওই দিনের উল্টোডাঙ্গার রুটমার্চের ভিডিও ফুটেজ তলব করেছে।

জানা গেছে, প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন সংবাদমাধ্যমের কাছেও চাইতে পারে সেই ভিডিও ফুটেজ। রাজ্যের নির্বাচন দপ্তর থেকে কলকাতা উত্তরের জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা দিব্যেন্দু সরকারের কাছে সেই ফুটেজ চেয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই ফুটেজ পাওয়ার পর তিনি নির্বাচন কমিশনে সবিস্তারের রিপোর্ট দেবেন।

গতকাল পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে রাজ্য নির্বাচন দপ্তরে বিএসএফের আইজি বৈঠক করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এই বৈঠকেই রুট মার্চের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়।

এবার নির্বাচনের অনেক আগে কেন্দ্রীয় বাহিনী কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গে এসে গেছে। রাজ্যের বিভিন্ন দল তাঁদের স্বাগত জানিয়েছে। তবে তৃণমূল কংগ্রেস এতে সন্তুষ্ট নয়। এক নেতা তো বলেই ফেলেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী এবার ভোটকেন্দ্রে থাকলে তৃণমূলের ভোট লুট করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।

রাজ্যের ৪২ আসনে জেতার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া ঘোষণা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত নাও হতে পারে। ওই নেতার কথায়, মানুষ কেন্দ্রীয় বাহিনী আসায় স্বস্তি পেয়েছে। তারা মনে করছে, এবার আর পঞ্চায়েত নির্বাচনের মতো ভোট লুট করা যাবে না। ৩৪ শতাংশ আসনে যেভাবে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল, সেই সুযোগ হয়তো এবার আসবে না। সেই কারণে এবার তৃণমূল মাঠে নেমে পড়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে।

অস্ত্র নিয়ে টহল দিচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
অস্ত্র নিয়ে টহল দিচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এত শক্তিশালী তৃণমূল এবার ভোট কেনার জন্য নানা সুযোগের কথাও বলেছে। আসানসোলের তৃণমূল মেয়র জিনেন্দ্র তিওয়ারি ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর পৌর করপোরেশন এলাকায় যেসব বুথ তৃণমূলকে ৫ হাজার ভোটের লিড দিতে পারবে, তাদের দেওয়া হবে ১ কোটি রুপির পুরস্কার। ৩ হাজার লিডে ৫০ হাজার রুপি, ২ হাজার লিডে ৩০ হাজার রুপি আর ১ হাজার লিডে ১০ হাজার রুপি দেওয়া হবে। আসানসোলে এবার বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সাংসদ ও শিল্পী বাবুল সুপ্রিয়। আর তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন সুচিত্রা সেনের মেয়ে মুনমুন সেন।

অর্থ দিয়ে ভোট কেনার এই ঘোষণা দেওয়ার পর গতকালই নির্বাচন কমিশনে গিয়ে অভিযোগ জানায় বিজেপির নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার ও রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁরা মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি, রাজ্যমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, কলকাতার মেয়র ও পৌরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং বীরভূমের তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগ তোলে। এরপরেই আসানসোলের মেয়রকে শোকজ করে নির্বাচন দপ্তর। এর আগে অবশ্য অনুব্রত মণ্ডল এবং বাবুল সুপ্রিয়কেও নির্বাচন কমিশন শোকজ করে। বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নির্বাচন কমিশনের অনুমতি না নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে গান বাঁধেন। অন্যদিকে, মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনী এই রাজ্যে পাঁচ বছর থাকবে না। থাকব আমরা। দেখব আমরা।’

তাই এখন অনেকের মনে এই প্রশ্ন উঠে এসেছে, সত্যিই কি এবার ভয় পেয়ে গেছেন মমতা। এককভাবে ৪২ আসনে জয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে সন্দিহান মমতা। এবার কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে। তারা হয়তো ভোট লুটের সুযোগ নাও দিতে পারে। আর ভোট লুট করতে না পারলে ৪২ আসনে এককভাবে জয় করা সম্ভব হবে না।

নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত পরিচালিত কোনো জনমত সমীক্ষায় এই আভাস দেওয়া হয়নি যে মমতা ৪২ আসনের ৪২ টিতেই জিততে চলেছেন। সর্বশেষ সমীক্ষায় বলা হয়েছে, মমতা জিততে পারেন ৩১টি আসনে আর বিজেপি জিততে পারে ১১টি আসনে। গত নির্বাচনে মমতা জিতেছিলেন ৩৪টি আসনে। এবার সেখান থেকে কমতে পারে ৩টি আসন।