ব্রেক্সিট পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন যুক্তরাজ্যের

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বিচ্ছেদের (ব্রেক্সিট) দিনক্ষণ পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। ব্রেক্সিট প্রশ্নে দেশটির সংসদে কোনো ঐকমত্য না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত এমন পথ বেছে নিল ব্রিটিশরা। গত বুধবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বিচ্ছেদের দিনক্ষণ ৩০ জুন পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে ইইউতে চিঠি দেন।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাত ১১টায় ইইউ-এর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ হওয়ার কথা। সময় বাড়ানোর আবেদনে ইইউ ইতিবাচক সাড়া না দিলে শুক্রবার রাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ব্রেক্সিট কার্যকর হয়ে যাবে। বিচ্ছেদের সময় পেছানোর বিষয়টি ইইউর বাকি ২৭ সদস্য রাষ্ট্রের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।

সমঝোতার ভিত্তিতে এই বিচ্ছেদ কার্যকরে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছায়। কিন্তু যুক্তরাজ্যের সংসদ দুই দফায় সেই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে।

যুক্তরাজ্যের আবেদনের জবাবে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যুক্তরাজ্যের সংসদ ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদন করলে ইইউ স্বল্প সময়ের জন্য বিচ্ছেদ পেছাতে রাজি হবে। সে ক্ষেত্রে আগামী সপ্তাহের মধ্যে চুক্তিটি পাস করতে হবে এবং ২৯ মার্চের আগেই জরুরি ভিত্তিতে আরেকটি ইইউ সম্মেলন করে বিচ্ছেদ পেছানোর আবেদন অনুমোদন করবেন তাঁরা। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলও একই রকম অভিমত দিয়ে বলেছেন, চুক্তিহীন বিচ্ছেদের ঝুঁকি এড়াতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করে যাবেন তাঁরা।

এ দিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বুধবার রাতে আকস্মিকভাবে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। বিচ্ছেদ পেছানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত তাঁর জন্য ভীষণ এক দুঃখের ব্যাপার। তবে ৩০ জুনের পর আর পেছাতে তিনি প্রস্তুত নন বলে জানিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রী জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি বুঝতে পারি ব্রেক্সিট নিয়ে সংসদে যে অনৈক্য আর গৃহবিবাদ তাতে আপনারা চরমভাবে বিরক্ত’। সংসদের আইনপ্রণেতাদের ওপর বিচ্ছেদের সময় পেছানোর দায় চাপিয়ে মে বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধাচারণের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে তিনি জনগণেরে পক্ষে আছেন বলে ঘোষণা দেন।

তাঁর সম্পাদিত ব্রেক্সিট চুক্তিতে সমর্থন দেওয়ার জন্য আইনপ্রণেতাদের প্রতি পুনঃআহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা হয় চুক্তিতে সমর্থন দেবেন অথবা চুক্তি ছাড়া বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেবেন। এ ছড়া বিচ্ছেদ বাতিল করার সিদ্ধান্তও নিতে পারেন, কিন্তু সেটি রাজনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতের সৃষ্টি করবে।’

প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্য দেশটির আইনপ্রণেতাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। তাঁর অনুগত আইনপ্রণেতাদেরও কেউ কেউ বলেছেন, ব্রেক্সিট বিশৃঙ্খলার সব দায় সংসদের ওপর চাপিয়ে ঠিক কাজ করেননি মে।

এ দিকে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী মে ইইউ সম্মেলনে যোগ দিতে ব্রাসেলসে যান। একই দিন ব্রাসেলসে যান বিরোধী দল লেবার নেতা জেরেমি করবিন। তিনি ইইউ সম্মেলনের আগে ব্রেক্সিট প্রশ্নে তাঁর দলের বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে ইইউ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

তিন মাসের জন্য কেন ব্রেক্সিটের সময় পেছানোর আবেদন করা হলো তা নিয়েও যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তুমুল মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। ব্রিটিশ সংসদের ওয়েবসাইটে বিচ্ছেদ বাতিল করার দাবিতে শুরু হয়েছে পিটিশন। একদিনেই সেই পিটিশনের পক্ষে স্বাক্ষরকারীর সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

বিবিসির সাংবাদিক নিকোলাস ওয়াট বলেন, ইইউ নানা শর্তের কথা বললেও শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদের সময় পেছাতে রাজি হবে। কারণ তারা চুক্তিহীন বিচ্ছেদের দায় নিতে চায় না। তবে আগামী সপ্তাহের মধ্যে চুক্তি পাসের শর্ত দেওয়ার মধ্যে কৌশল রয়েছে। কারণ চুক্তিটি পাস হবে না বলেই ধারণা। আর চুক্তিটি পাস না হলে ইইউ দীর্ঘ মেয়াদের জন্য বিচ্ছেদ পিছিয়ে দিতে যুক্তরাজ্যকে চাপ দেবে। বিচ্ছেদ বিরোধীরা সেটাই চান।