পিছিয়ে গেল ব্রেক্সিটের দিনক্ষণ

২৯ মার্চ (আগামী শুক্রবার) ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ হচ্ছে না। বিচ্ছেদের দিনক্ষণ পেছাতে যুক্তরাজ্যের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শর্ত সাপেক্ষে দুটি ভিন্ন দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দিয়েছে ইইউ।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের সংসদ যদি আগামী সপ্তাহের মধ্যে ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদন করে, তবে ২২ মে বিচ্ছেদ কার্যকর হবে। আর যদি চুক্তিটি অনুমোদন না করে, তবে মাত্র দুই সপ্তাহ অর্থাৎ ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় পাবে দেশটি। এর মধ্যে বেক্সিট নিয়ে নতুন পরিকল্পনার কথা জানাতে হবে ব্রিটিশদের।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ৩০ জুন পর্যন্ত বিচ্ছেদ পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করেছিলেন। জবাবে দুটি ভিন্ন দিনক্ষণের যে সিদ্ধান্ত এল, সেটিকে ইইউর বেশ চতুর অবস্থান হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ব্রেক্সিট নিয়ে সব সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত রাখার পাশাপাশি এ প্রক্রিয়ায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করল ইইউ।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে ইইউ সম্মেলন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, যুক্তরাজ্যের জন্য এখনো সব সুযোগ খোলা। এগুলো হলো চুক্তির মাধ্যমে বিচ্ছেদ, চুক্তি ছাড়া বিচ্ছেদ, দীর্ঘ মেয়াদের জন্য বিচ্ছেদ পিছিয়ে দেওয়া অথবা বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত বাতিল করা। তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদের জন্য বিচ্ছেদ পেছাতে চাইলে যুক্তরাজ্যকে অবশ্যই আগামী ২২ থেকে ২৬ মে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে ১১ এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে হবে।

আলাদা সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেন, বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত বাতিল করার কোনো সুযোগ নেই। আর দেশের জনগণ যে ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছেদের পক্ষে রায় দিয়েছে, তিন বছর পর সেই জনগণকে ওই ইউনিয়নের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে বলাটা অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, ‘একটি চুক্তির মাধ্যমে বিচ্ছেদ হবে বলে আমি এখনো আশাবাদী।’

এর আগে ইইউ সম্মেলনে বিচ্ছেদ পেছানোর দাবির পক্ষে প্রায় ৯০ মিনিট কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী মে। বিবিসির ইউরোপ-বিষয়ক প্রতিবেদক গ্যাভিন লি বলেন, ওই সময় ইইউ নেতারা বারবার জানতে চেয়েছেন, সংসদ ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদন না করলে প্রধানমন্ত্রী কী করবেন? এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী মে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করেননি। একাধিক ইইউ নেতা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী চুক্তিহীন বিচ্ছেদের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন।

প্রধানমন্ত্রী মে সম্মেলনকক্ষ ছেড়ে আসার পর ইইউ বাকি ২৭টি সদস্য দেশের নেতারা বিচ্ছেদ পেছানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁসহ একাধিক নেতা ব্রেক্সিট নিয়ে যুক্তরাজ্যের আচরণে হতাশা প্রকাশ করেন। ব্রেক্সিট নিয়ে আর সময় নষ্ট না করে ইইউর বাজেটসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার কথা বলেন তাঁরা।

সমঝোতার ভিত্তিতে বিচ্ছেদ কার্যকরে ইইউর সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পাদন করেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। কিন্তু সেই চুক্তি নিয়ে বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি তাঁর নিজ দলের আইনপ্রণেতাদের বড় একটি অংশের ঘোর আপত্তি। এর ফলে সংসদে দুই দফা চুক্তিটি প্রত্যাখ্যাত হয়। চুক্তি নিয়ে সরকারি দলে এখনো বিভক্তি স্পষ্ট। তবে সরকারের একাধিক মন্ত্রী বলেছেন, প্রয়োজনীয় সমর্থন মিলবে, এমনটি নিশ্চিত হলেই কেবল সরকার চুক্তিতে তৃতীয় দফা ভোটের আয়োজন করবে।

এদিকে হাউস অব কমন্সের স্পিকার জন বার্কো ১৬০৪ সালের এক রুলিং তুলে ধরে বলেছেন, প্রত্যাখ্যাত হওয়া চুক্তি অপরিবর্তিত অবস্থায় সংসদে পুনরায় ভোটে আনা যাবে না। এ নিয়ে নতুন সংকটে পড়েছেন থেরেসা মে। তবে চুক্তিতে যথেষ্ট সমর্থন নিশ্চিত করা গেলে স্পিকারের ওই রুলিং উতরে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করছে সরকার।