শপথ নিলেন ভারতের প্রথম লোকপাল

ভারতে দুর্নীতি রোধ আন্দোলন পূর্ণতা পেল লোকপাল নিযুক্তির মধ্য দিয়ে। দেশটির প্রথম লোকপাল হিসেবে শপথ নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত
ভারতে দুর্নীতি রোধ আন্দোলন পূর্ণতা পেল লোকপাল নিযুক্তির মধ্য দিয়ে। দেশটির প্রথম লোকপাল হিসেবে শপথ নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত

ভারতে দুর্নীতিরোধ আন্দোলন পূর্ণতা পেল লোকপাল নিযুক্তির মধ্য দিয়ে। আজ শনিবার দেশের প্রথম লোকপাল হিসেবে শপথ নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ রাষ্ট্রপতি ভবনে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান। ভারতীয় সংসদের উভয় কক্ষের বর্তমান ও সাবেক সদস্য এবং বর্তমান ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করার অধিকার লোকপালের থাকবে।

লোকপালের মোট সদস্য সংখ্যা ৮। তাঁদের মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে চারজন হবেন বিচার বিভাগীয় সদস্য। সেই চারজনের মধ্যে রয়েছেন এলাহাবাদ হাইকোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি দিলীপ ভোসলে, ঝাড়খন্ড হাইকোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি প্রদীপ কুমার মোহান্তি, মণিপুর হাইকোর্টের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি ও বর্তমানে গুজরাট রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রধান অভিলাসা কুমারী এবং ছত্তিশগড় হাইকোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি অজয় কুমার ত্রিপাঠি। অন্য চার সদস্য হলেন—সশস্ত্র সীমা বলের সাবেক প্রথম মহিলাপ্রধান অর্চনা রামসুন্দরম, মহারাষ্ট্র সরকারের সাবেক মুখ্য সচিব দীনেশ কুমার জৈন, ভারতীয় রাজস্ব বিভাগের সাবেক কর্তা মহেন্দ্র সিং ও গুজরাট ক্যাডারের সাবেক আইএএস কর্তা ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ গৌতম।

রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব খবর জানিয়ে বলা হয়েছে, লোকপালের মেয়াদ পাঁচ বছর অথবা ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত। পিনাকীচন্দ্র ঘোষের বয়স এখন ৬৬ বছর। ২০১৭ সালের মে মাসে তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদ থেকে অবসর নেন। ওই বছরের জুন মাস থেকে তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য রয়েছেন।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যিনি এ যুগের ‘গান্ধী’ বলে পরিচিত হয়েছেন, লোকপাল নিযুক্তির মধ্য দিয়ে সেই আন্না হাজারের স্বপ্ন কিছুটা পূর্ণতা পেল। ২০১১ সালে দুর্নীতি দূর করার দাবিতে তিনি দিল্লিতে অনশন সত্যাগ্রহ শুরু করেছিলেন। সেই অহিংস আন্দোলন কাঁপিয়ে দিয়েছিল সেই সময়কার কেন্দ্রীয় সরকারকে। দাবি ছিল একটাই। দুর্নীতি দূর করতে সরকারকে জন লোকপাল আইন আনতে হবে। সেই আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় স্তরে নিয়োগ করতে হবে লোকপাল, প্রতিটি রাজ্যে লোকায়ুক্ত। দীর্ঘ টালবাহানার পর ২০১৩ সালে ভারতীয় সংসদে লোকপাল ও লোকায়ুক্ত বিল পাস হয়। পরের বছর ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি সেই বিলে সই করে তা আইনে রূপান্তর করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি।


লোকপালের অধীনে থাকছেন দেশের প্রধানমন্ত্রীও। তবে প্রতিরক্ষা বাহিনী এই আইনের আওতায় পড়ছে না। তদন্ত চলাকালীন অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিদের সম্পত্তি ক্রোক করার অধিকারও লোকপালের রয়েছে।

আইন হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় স্তরে লোকপালের নিযুক্তিতে কেটে গেল পাঁচটি বছর। সময় আরও দীর্ঘায়িত হতে পারত সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ না করলে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের হস্তক্ষেপের ফলে চলতি বছরের গোড়া থেকে লোকপাল নিযুক্তি গতি পায়। সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি রঞ্জনা প্রসাদ দেশাইকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সম্ভাব্য লোকপাল ও তাঁর সদস্যদের তালিকা তৈরির। তিনটি তালিকা তৈরি করে পাঠানো হয় নিযুক্তি কমিটির কাছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেই নিযুক্তি বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠতে পারল না।

আইন অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার স্পিকার, লোকসভার বিরোধী নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি অথবা তাঁর মনোনীত অন্য কোনো বিচারপতি এই কমিটির সদস্য। কিন্তু কমিটি পূর্ণতা পায়নি লোকসভায় কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খারগে ‘বিরোধী নেতার’ মর্যাদা না পাওয়ায়। বিরোধী নেতার মর্যাদা পেতে হলে প্রধান বিরোধী দলের সদস্যসংখ্যা লোকসভার মোট সদস্যের (৫৪৩) অন্তত ১০ শতাংশ (৫৫) হতে হবে। ২০১৪ সালের ভোটে কংগ্রেসের সদস্য ছিল মাত্র ৪৪। লোকপাল নিযুক্তির বৈঠকে মল্লিকার্জুন খারগেকে ‘বিশেষ আমন্ত্রিত’ হিসেবে চিঠি পাঠানো হয়। আইনে ‘বিশেষ আমন্ত্রিত’ সদস্যের উল্লেখ না থাকায় খারগে বৈঠকে যেতে অস্বীকার করেন। কংগ্রেস আইনের সংশোধনের দাবি জানিয়ে বিরোধী নেতার জায়গায় প্রধান বিরোধী দলের নেতাকে সদস্য করার প্রস্তাব দিয়েছিল। বিজেপি তা মানেনি। ফলে কংগ্রেসও লোকপাল নিযুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়।