প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের আজ সবচেয়ে ভালো দিন

প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত দুই বছরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জীবনে এমন ভালো দিন আর আসেনি। ছবি: রয়টার্স
প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত দুই বছরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জীবনে এমন ভালো দিন আর আসেনি। ছবি: রয়টার্স

প্রেসিডেন্ট হিসেবে গত দুই বছরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জীবনে হয়তো এমন ভালো দিন আর আসেনি। ঘাড়ের ওপর যে মেঘ চেপে বসেছিল, তা অনেকটাই হালকা হয়ে গেছে—এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট মুলারের প্রতিবেদন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য একটা বড় বিজয় এনে দিয়েছে। এ প্রতিবেদনের কারণে এখন ডেমোক্র্যাটদের নতুন রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে ভাবতে হবে। ডেমোক্র্যাটরা হোয়াইট হাউস থেকে প্রেসিডেন্টকে সরাতে চাইলে এখন তা ব্যালট বাক্সের মাধ্যমেই করতে হবে; যা ২০২০ সালের নভেম্বর মাসের আগে সম্ভব নয়।

রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামের ভাষায়, আজ তাঁদের জন্য খারাপ দিন, যাঁরা আশা করেছিলেন মুলার তদন্তে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নামিয়ে আনা হবে।

শপথ গ্রহণের পর থেকেই নির্বাচনী প্রচারের সময় রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ ট্রাম্পের মাথার ওপর কালো মেঘ হয়ে বিরাজ করেছে। এখন সেই মেঘ দূর হলো। যে আঁতাতের অভিযোগকে অস্ত্র করে ডেমোক্র্যাটরা তাঁর পুনর্নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চলাবেন ভেবেছিলেন, সেই রণকৌশল এখন তাঁদের পুনর্বিবেচনা করতে হবে। অভিশংসনের বিষয়টিও আর তাঁদের প্রধান রাজনৈতিক বিবেচনা থাকবে না। ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য এই মুহূর্তে তাঁদের একমাত্র যে অস্ত্রটি রইল, তা হলো ২০২০ সালের নির্বাচনে তাঁকে পরাস্ত করা।

প্রায় দুই বছর একটানা তদন্তের পর বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট মুলার এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প বা তাঁর নির্বাচনী প্রচার দল রাশিয়ার সঙ্গে কোনো আঁতাতে লিপ্ত ছিল, তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে বিচারপ্রক্রিয়ায় ট্রাম্প কোনো বাধা দেননি, মুলার তাঁর প্রতিবেদনে এমন কোনো সিদ্ধান্তও দেননি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা উইলিয়াম বার গতকাল রোববার কংগ্রেসে রবার্ট মুলারের প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ পেশ করেছেন। পুরো তদন্তটি প্রকাশের বদলে তিনি শুধু মুলার তদন্তের সারসংক্ষেপ এই চিঠিতে লিপিবদ্ধ করেছেন। রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাতের বিষয়টি ছিল মুলারের তদন্তের প্রধান বিষয়।

এদিকে এই তদন্ত নিয়ে অসংখ্যবার ক্ষোভ প্রকাশ করলেও গতকাল প্রতিবেদন প্রকাশের পর ট্রাম্প তাঁর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে পিছপা হননি। তিনি মুলারের প্রতিবেদনে তাঁকে ‘সম্পূর্ণ দোষমুক্ত’ বলে দাবি করেছেন। বিচারপ্রক্রিয়ার বাধাদানের বিষয়টি তিনি পুরোপুরি এড়িয়ে এক টুইটে ঘোষণা করেছেন, ‘কোনো আঁতাত নেই। কোনো বাধা সৃষ্টি করা হয়নি। চূড়ান্ত ও সম্পূর্ণ দোষমুক্তি। আমেরিকাকে মহান রাখুন।’

যাঁরা ট্রাম্পকে দোষী দেখতে ও মুলারের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাঁকে অবিলম্বে অভিশংসিত করতে আগ্রহী ছিলেন, তাঁদের জন্য এ সিদ্ধান্ত প্রচণ্ড হতাশার সৃষ্টি করেছে। তাঁদের জন্য একমাত্র আশার সলতে হলো, এ প্রতিবেদন বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধাদান প্রশ্নে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে মুলারের অনাগ্রহ প্রকাশ। উইলিয়াম বারের পাঠানো চিঠিতে এ কথা স্বীকার করা হয়েছে, ট্রাম্প কোনো অপরাধ করেছেন, এমন কোনো প্রমাণ মুলার খুঁজে পাননি, তবে তাঁকে তিনি পুরোপুরি দোষমুক্ত বলেও ঘোষণা করেননি। উইলিয়াম বার ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রড রোজেনস্টাইন মুলারের ‘গোপনীয়’ প্রতিবেদনটি সমীক্ষার পরে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা প্রদানের চেষ্টা করেছেন, সে কথা প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁরা বিষয়টি নিয়ে তদন্তে আর সময় ব্যয় করবেন না।

প্রধান আইন কর্মকর্তার এ কথা যথেষ্ট নয়, এই যুক্তিতে কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাটরা অবিলম্বে পুরো প্রতিবেদন ও তদন্তকালে সংগৃহীত প্রমাণপত্র অবিকৃত অবস্থায় তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি করেছেন। ডেমোক্র্যাটরা প্রতিবেদনটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ারও দাবি করেছেন। উইলিয়াম বার অবশ্য বলেছেন, তিনি যতটা সম্ভব স্বচ্ছ থাকতে চান, কিন্তু প্রতিবেদনে অনেক অতি গোপনীয় বিষয় থাকায় চলতি আইন অনুসারে তা অবিকৃত অবস্থায় উন্মুক্ত করা সম্ভব নয়।

তাঁর এই ব্যাখ্যা অবশ্য বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের খুশি করতে পারেনি। প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও সিনেটে ডেমোক্রেটিক নেতা চাক শুমার এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মুলার তাঁর তদন্তে কোথাও বলেননি, ট্রাম্প বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা প্রদানের মাধ্যমে কোনো আইন ভঙ্গ করেননি। বস্তুত, এ ব্যাপারে তিনি কোনো সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেননি। তাঁরা দাবি করেছেন, উইলিয়াম বারের চিঠিতে যত প্রশ্নের উত্তর মিলেছে, তার চেয়ে অধিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

প্রতিনিধি পরিষদের বিচার বিভাগীয় কমিটির প্রধান জেরি ন্যাডলার ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, বিচার বিভাগ প্রতিবেদনটির যে ব্যাখ্যা হাজির করেছে, তা সন্তোষজনক নয়, এতে বিস্তর ফাঁকফোকর রয়েছে। তিনি প্রধান আইন কর্মকর্তাকে তাঁর চিঠির বক্তব্য ব্যাখ্যার জন্য শুনানিতে ডেকে পাঠাবেন। মুলারকে শুনানিতে ডেকে পাঠানোর কথাও কোনো কোনো ডেমোক্র্যাট বলেছেন।