নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন, হাল ছাড়ছেন না মে

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে

ব্রেক্সিট নিয়ে সৃষ্ট সংকটের কারণে নিজ দলের মধ্যেই রোষানলে পড়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দিতে নানা তোড়জোড়ের মধ্যেই আজ সোমবার তিনি মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন। এর আগে গত রোববার সন্ধ্যায় দলের বিদ্রোহীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন মে। তবে এসব বৈঠক থেকে তাৎক্ষণিক কোনো সমাধানের বার্তা মেলেনি।

গত রোববার খবর বের হয়, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে থেরেসা মেকে সরিয়ে দিতে মন্ত্রিসভায় তোড়জোড় চলছে। এদিন সন্ধ্যায় ব্রেক্সিট চুক্তির কট্টর সমালোচকদের অন্যতম বরিস জনসন, ইয়ান ডানকান স্মিথ, ডেভিড ডেভিস এবং জেকব রিস মগকে সাথে নিয়ে কান্ট্রি হাউস চেকার্সে জরুরি বৈঠক করেন মে। বৈঠকের বিস্তারিত জানা যায়নি, তবে বিরোধের কোনো সমাধান হয়েছে বলেও ইঙ্গিত নেই।

এর আগে পরিস্থিতি সামাল দিতে দলের প্রভাবশালী সদস্যরা গণমাধ্যমে হাজির হয়ে বলেন, এখন নেতৃত্ব বদলের উপযুক্ত সময় নয়। কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী ইয়ান ডানকান স্মিথ বিবিসিকে বলেন, মন্ত্রীসভার যেসব সদস্য প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধাচারণ করছেন তাঁদের পদত্যাগ করা উচিত।

তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সমঝোতায় প্রধানমন্ত্রী মে’র ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করেন। ডানকান স্মিথ বলেন, ‘সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী ৩০ জুন পর্যন্ত বিচ্ছেদের সময় পেছানোর দাবি করেছেন। কিন্তু সময় পেছানো হলো ১২ এপ্রিল পর্যন্ত। এটা আমাদের জন্য জাতীয় অবমাননা।’ প্রধানমন্ত্রীর এটা মেনে নেয়া উচিত হয়নি বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী লিয়াম ফক্স বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, জনগণ বিচ্ছেদের পক্ষে রায় দিয়েছে। কিন্তু সংসদে বেশির ভাগ আইনপ্রণেতা বিচ্ছেদের বিরোধী। অন্যদিকে সংসদে সরকারি দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতাও নেই। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী বদল করলেও সংসদে ব্রেক্সিট নিয়ে অবস্থানের কোনো নড়চড় হবে না।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর পদত্যাগের দিনক্ষণ জানালে ব্রেক্সিট চুক্তিতে বিদ্রোহীরা সমর্থন দেবে বলে আলোচনা আছে। কনজারভেটিভ দলের প্রভাবশালী আইনপ্রণেতা নাইজেল ইভান বলেন, অনেকেই থেরেসা মে কে ইইউ’র সঙ্গে সমঝোতার পরবর্তী ধাপের (ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণ) আলোচনায় দেখতে চান না।

তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় মের ভবিষ্যত নিয়ে দিনক্ষণ বেঁধে দেয়ার সম্ভাবনা নাকচ করেছে। অবশ্য গত ডিসেম্বরে অনাস্থা ভোটের চাপে পড়ে মে ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২২ সালের নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন না।

চলতি সপ্তাহের মধ্যে ব্রেক্সিট চুক্তি পাশের শর্ত বেঁধে দিয়েছে ইইউ। কিন্তু চুক্তিতে যথেষ্ট সমর্থনের ইঙ্গিত না পেলে এ নিয়ে আর ভোটাভুটির আয়োজন করবেন না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যের সংসদে চুক্তিটি দুই দফা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। কট্টর ব্রেক্সিটপন্থীরা বলছেন, এই চুক্তি যুক্তরাজ্যকে ইইউ’র অধীনস্ত করে রাখবে। আর বিচ্ছেদবিরোধীরা বলছেন, তাঁরা ইইউ’র সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে চান।

সর্বদলীয় আইনপ্রণেতাদের একটি অংশ ব্রেক্সিটের নিয়ন্ত্রণ সংসদের হাতে নিয়ে নিতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ব্রেক্সিটবিষয়ক মন্ত্রী স্টিফেন বার্ক্লে বলেন, এ চেষ্টায় তাঁরা সফল হলে বড় ধরণের সংকট তৈরি হবে। কেননা, সরকারী দলের নিজস্ব ইশতেহার রয়েছে। এর বাইরে সংসদ কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকারকে বাধ্য করতে চাইলে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনিবার্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আগামী তিনদিন ব্রেক্সিটের সর্বসম্মত উপায় খুঁজতে সংসদে নানা বিকল্প নিয়ে ভোটাভুটির কথা রয়েছে। তবে ব্রেক্সিটবিষয়ক মন্ত্রী স্টিফেন বার্ক্লে বলেন, এসব ভোটের ফলাফল মানতে সরকার বাধ্য নয়।

এদিকে ইইউ বলেছে, আগামী ১২ এপ্রিল চুক্তি ছাড়াই যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ ঘটার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে।