পাঠকের মন্তব্যে কড়াকড়ি কেন?

ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলাকারী ব্রেনটন হ্যারিসন টারান্ট। ছবি: সংগৃহীত
ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলাকারী ব্রেনটন হ্যারিসন টারান্ট। ছবি: সংগৃহীত

ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে ভয়াবহ হামলার পর অনলাইনে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়য়ে পড়ার বিষয়টি গণমাধ্যমগুলো কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সে বিতর্কের মুখেই নিউজিল্যান্ডের জনপ্রিয় খবরের ওয়েবসাইট স্টাফ ডটকো ডট এনজেড তাদের সাইটে পাঠকের মন্তব্যে কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

স্টাফ কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের লক্ষ্য ছিল অনলাইনের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখা, তবে অনেক সময় পাঠকের মন্তব্যে অনেক কুসংস্কারের বিষয় উঠে আসে।

স্টাফের প্রধান সম্পাদক প্যাট্রিক ক্রুসডন বলেন, তাঁদের সাইটে যেসব মন্তব্য পোস্ট করা হয়, এর বেশির ভাগই ন্যায্য অভিব্যক্তি। তবে কিন্তু কিছু বাজে মন্তব্য পুরো ব্যবস্থায় বিষ ঢেলে দেয়।

নিউজিল্যান্ডের সাউথ আইল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদ ও এর কয়েক কিলোমিটার দূরের লিনউড মসজিদে ১৫ মার্চ জুমার নামাজের সময় গুলি করে হত্যাযজ্ঞ চালান ব্রেনটন টারান্ট। এ সময় হেলমেটে লাগানো ক্যামেরার মাধ্যমে হত্যাযজ্ঞের দৃশ্য সরাসরি ফেসবুকে সম্প্রচার করেন তিনি। হামলায় ৫০ জন নিহত হন। হামলার ৩৬ মিনিট পর একটি গাড়ি থেকে ব্রেনটনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মসজিদে হামলার আগে ব্রেনটন টারান্ট অনলাইনে নিজের ইশতেহার প্রকাশ করেন। একই ইশতেহার তিনি হামলার ১০ মিনিট আগে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও ই-মেইল করেন। এই ইশতেহারে তিনি ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ ওপর হামলার ঘোষণা দেন।

অস্ট্রেলীয় শ্বেতাঙ্গ টারান্ট তাঁর ওই ইশতেহার মূলধারার সংবাদমাধ্যমে যেন প্রকাশ পায়, তেমন করে তৈরি করছিলেন। তাঁর সরাসরি সম্প্রচার করা ভিডিওদৃশ্য অনেক টেলিভিশন সম্প্রচার করেছে। নিউজিল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ ওই ভিডিও ও ডকুমেন্ট নিষিদ্ধ করেছে।

ওই ভিডিও ও ডকুমেন্ট যেন মূলধারার সংবাদমাধ্যম ব্যবহার করে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য অনেক সংবাদমাধ্যম কাজ করে যাচ্ছে।

প্যাট্রিক ক্রুসডন লিখেছেন, অভিযোগ ওঠা ও ঘৃণিত মতবাদ ওয়েব দুনিয়ার অন্ধকার কোনাগুলোয় শেয়ার হয়েছে। মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোয় তা আসেনি। তবে পাঠকের মন্তব্য অংশে যেন ছড়িয়ে না পড়ে, তা দেখার উপযুক্ত সময় এখন। তাঁদের সাইটের মডারেটররা কুসংস্কার, ব্যক্তিগত আক্রমণের মন্তব্য প্রকাশ করবে না। এ ছাড়া আপভোট ও ডাউনভোট সুবিধাও বন্ধ থাকবে। বিতর্কিত বিষয়, যেমন: ক্রাইস্টচার্চে হামলা, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন, ভ্যাকসিন ও তৃতীয় লিঙ্গদের বিষয়ে মন্তব্য প্রকাশ করা হবে না। অনেকে এ নিয়ে সেন্সরশিপ আরোপ বা বাক্‌স্বাধীনতায় বাধার কথা বলতে পারেন। অনেকেই পুরো মন্তব্য বিভাগ বন্ধ করে দেওয়ার কথাও বলতে পারেন।

নিউজিল্যান্ডের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট হিসেবে সাইটটিতে প্রতি মাসে ১৮ লাখ ইউনিক পাঠক রয়েছে। তাদের পরের অবস্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড ডটকো ডট এনজেড।

দেশটির বিচার বিভাগ বলছে, আগামী ৫ এপ্রিল ক্রাইস্টচার্চ হাইকোর্টে টারান্টকে হাজির করার কথা বলেছে। তবে তাঁকে সরাসরি আদালতে নেওয়া হবে, নাকি ভিডিও দেখানো হবে, তা স্থির হয়নি।

গত শনিবার ক্রাইস্টচার্চের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট হত্যার অভিযোগে হামলাকারী ব্রেনটন হ্যারিসন টারান্টের আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। ওই দিন আবার তাঁকে আদালতে হাজির করা হবে জানিয়ে পুলিশ বলেছে, তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আনা হতে পারে।

কারাগারে তাঁর নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে—এমন আশঙ্কায় তাঁকে নির্জন প্রকোষ্ঠে রাখা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে ইতিমধ্যে ক্রাইস্টচার্চের বাইরে দেশটির অন্য কোনো এক কারাগারে নেওয়া হয়েছে তাঁকে।