উত্তর-পূর্ব ভারতে দলছুটদের ডেকেছে কংগ্রেস

ত্রিপুরায় গতকাল সোমবার এক দলীয় কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। ছবি: সংগৃহীত
ত্রিপুরায় গতকাল সোমবার এক দলীয় কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। ছবি: সংগৃহীত

উত্তর–পূর্ব ভারতের আট রাজ্যেই এখন বিজেপি বা তাদের ‘বন্ধুদলের’ সরকার। কিন্তু বেশির ভাগ রাজ্যেই কংগ্রেসের সাবেক নেতারাই ক্ষমতার শীর্ষে। আর তাঁদের ভরসাতেই ফের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে শক্তিশালী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন কংগ্রেস নেতারা।

উত্তর–পূর্বাঞ্চলের চার রাজ্যে বর্তমানে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীরা ক্ষমতায় রয়েছেন। কিন্তু একমাত্র ত্রিপুরাতেই রয়েছেন বিজেপির চিন্তাভাবনায় গড়ে ওঠা রাজনীতিবিদ। বাকিরা সবাই অন্য দল থেকে আসা।

এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় রাজ্য আসামের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি বিজেপির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তাঁর উত্থান অসম গণপরিষদে (অগপ) হাত ধরে। দলবদল করে বিজেপিতে এসে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে প্রদেশ বিজেপির সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। কেন্দ্রের মন্ত্রীও হয়েছেন।

মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন্দ্র সিং বিজেপিতে যোগদানের আগে ছিলেন কংগ্রেসের মন্ত্রী। মাত্র ছয় মাস আগে দলবদল করে এখন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী তিনি।

অরুণাচল প্রদেশের পেমা খান্ডু কংগ্রেসের টিকিটে জিতেই মুখ্যমন্ত্রী হন। কিন্তু সদলবলে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেই যোগ দেন বিজেপিতে।

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব অবশ্য কোনো দিনও অন্য কোনো দল করেননি। বিজেপিতে রয়েছেন প্রথম থেকেই। তাঁর মন্ত্রিসভার উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মণ ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমাও বিজেপিই করেছেন চিরকাল।

কিন্তু ত্রিপুরার নয় সদস্যের মন্ত্রিসভার ছয়জনই কংগ্রেসের সাবেক নেতা। বিজেপি বিধায়কদের মধ্যেও দলত্যাগী কংগ্রেসিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।

মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে আঞ্চলিক দলের সরকার। মেঘালয়ে এনপিপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী কনার্ড সাংমা কংগ্রেস পরিবারেই বড় হয়েছেন। তাঁর বাবা পূর্ণ অ্যাজিটক সাংমা ছিলেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতা। ভারতীয় লোকসভার অধ্যক্ষও (স্পিকার) ছিলেন তিনি।

আর নাগাল্যান্ডের এনডিপিপি-বিজেপি জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী নেফু রিও একসময় কংগ্রেসেরও মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এখন তিনি নিজেই আঞ্চলিক দল গড়ে ক্ষমতায় বসেছেন।

বাকি দুই রাজ্য মিজোরাম ও সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীরা অবশ্য চিরকাল আঞ্চলিক দলই করে এসেছেন। সিকিমে পবন চ্যামলিংয়ের নেতৃত্বে টানা ২৫ বছরে ক্ষমতায় রয়েছে এসডিএফ। আর মিজোরামে এর আগে টানা ১০ বছর মুখ্যমন্ত্রিত্ব করার পর ফের গত বছর এমএনএফের হয়েই ক্ষমতায় ফিরেছেন।

উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় দলবদল কংগ্রেসকে বেশ বেকায়দায় ফেলেছে। কংগ্রেসকে দুর্বল করতে এই অঞ্চলে বিজেপির প্রধান কারিগরও একসময় রাহুল গান্ধীদের দলই করতেন।

আসামে কংগ্রেসের ডাকসাইটে নেতা ও মন্ত্রী হীমন্তকে নিজেদের দলে নিয়ে এসে রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেস ভাঙানোর কাজে লাগিয়েছিল বিজেপি। হীমন্তের নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয় উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় গণতান্ত্রিক জোট (নেডা)।

লোকসভা ভোটের আগে অবশ্য নেডা বেশ দুর্বল। বেশির ভাগ শরিকই বিজেপির সঙ্গ ছাড়ছে। ভাঙছে বিজেপিও। দলে হীমন্তের প্রতিপত্তি কমছে বলেও গুজব রটছে আসামে।

এই অবস্থায় দলছুটদের ফিরিয়ে আনতে মরিয়া কংগ্রেস। ত্রিপুরার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা সমীর রঞ্জন বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবাইকে ঘরে ফিরতে বলছি। কারণ, কংগ্রেসই পারে দেশকে সুস্থিতি দিতে। বিজেপির হাতে সর্বনাশ হচ্ছে দেশের। তাই অভিমান ভুলে ফিরে আসুন কংগ্রেসিরা। বরণ করে নেব সসম্মানে।’

আরেক প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তাপস দে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘দিল্লিতে বিজেপি হারছেই। আর এর প্রভাব পড়তে চলেছে উত্তর–পূর্বাঞ্চলেও। কোথায় বিজেপি? সবই তো কংগ্রেসের। তাঁদের ঘরে ফেরার ডাক দিচ্ছি আমরা।’