মিমি ভাবছেন তিনিই জিতবেন

নির্বাচনী প্রচারে মিমি চক্রবর্তী। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
নির্বাচনী প্রচারে মিমি চক্রবর্তী। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কলকাতার যাদবপুর আসনে সহজ জয় পাবে বলে ভাবছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে কলকাতার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, তৃণমূল যেমনটা ভাবছে, এই আসনে জয় ততটা সহজ হবে না। কারণ, এবার যাদবপুর আসনে তিন প্রভাবশালী প্রার্থী লড়ছেন।

তৃণমূল যাদবপুর আসনে প্রার্থী করেছে চলচ্চিত্র তারকা মিমি চক্রবর্তীকে। তিনি উঠতি নায়িকা। তবে রাজনীতির অঙ্গনে এই প্রথম পা রেখেছেন।

মমতার অঙ্ক—মানুষ এখনো তারকাদের পছন্দ করে। তাই যাদবপুর আসনে বিরোধীদের ঘায়েল করতে কোনো নামী তারকাকে প্রার্থী করতে হবে—সেই ছক অনুযায়ী মিমিকে প্রার্থী করেছেন তিনি।

মিমির জন্ম জলপাইগুড়িতে। এখন থাকেন কলকাতায়। রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ ৩০ বছর বয়সী এই নায়িকা মমতার প্রভাব ও নিজের অভিনয়-খ্যাতিকে সম্বল করে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন।

মিমি মনে করেন, তিনিই জিতবেন। কারণ, নির্বাচনী প্রচারে তিনি যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই উপচে পড়া ভিড়।

টালিগঞ্জে সভা করার পর মিমি বলেছেন, ‘আমি মিশে আছি টালিগঞ্জে। আপনারা আমাকে জেতান। আমি আপনাদের ঘরের মেয়ে। আমি আপনাদের পাশে আছি।’

টালিগঞ্জে মিমি ভক্তদের অনুরোধে একটি সিনেমার গানও গেয়ে শুনিয়েছেন।

যাদবপুর আসনে দ্বিতীয় শক্ত প্রার্থী হচ্ছেন সিপিএম নেতা ও কলকাতা পৌর করপোরেশনের সাবেক মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য।

অধ্যাপক অনুপম হাজরা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
অধ্যাপক অনুপম হাজরা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

বিকাশ মেয়র ছিলেন ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত। তাঁর জন্ম কালীঘাট এলাকায়। বয়স ৬৭ বছর। তিনি পাঁচ বছর ত্রিপুরার অ্যাডভোকেট জেনারেল ছিলেন। কলকাতার চাঞ্চল্যকর সারদা ও নারদ মামলায় লড়ছেন। চিটফান্ডের ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি এখনো আদালতে মামলা লড়ছেন।

বিকাশ এখন চষে বেড়াচ্ছেন তাঁর নির্বাচনী এলাকা। প্রতিটি সভায় বলছেন, এবার মানুষ যদি ভোট দিতে না পারে, তবে রক্তাক্ত বিপ্লব হবে। শাসক দলকে ছেড়ে দেবে না মানুষ। মানুষের মনে এখনো জেগে আছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের চিত্র—৩৪ শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসক দল তৃণমূলের জয়ের ছবি। তাই মানুষ এবার একজোট হয়েছে। তারা আর শাসক দলকে ভোট লুট করতে দেবে না।

যাদবপুর আসনে এবার বিজেপি দাঁড় করিয়েছে তৃণমূল থেকে পদত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেওয়া এক প্রার্থীকে। তিনি অধ্যাপক অনুপম হাজরা।

২০১৪ সালে অনুপম বীরভূমের বোলপুর আসন থেকে তৃণমূলের হয়ে জিতেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন।

সিমিএম নেতা ও সাবেক মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
সিমিএম নেতা ও সাবেক মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

অনুপম বিশ্বভারতী থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছেন। তিনি সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

অনুপম বলেছেন, মানুষ এবার তৃণমূলকে ভোট দেবে না। তৃণমূলের সময় শেষ হয়ে আসছে। মানুষ ঝুঁকছে বিজেপির দিকে। তাই যাদবপুরে এবার বিজেপি জিতবে।

তবে এবার এই আসনে কংগ্রেস কোনো প্রার্থী দাঁড় করাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে।

যাদবপুর কলকাতা-লাগোয়া লোকসভা আসন। এই আসনের বর্তমান সাংসদ নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসুর ভ্রাতুষ্পুত্র অধ্যাপক সুগত বসু। এবার তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। তাঁর স্থলে তৃণমূলের প্রার্থী অভিনেত্রী মিমি।

গত নির্বাচনে এই আসনে সুগত বসু পেয়েছিলেন ৫ লাখ ৮৪ হাজার ২৪৪ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সিপিএমের প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী। তিনি পেয়েছিলেন ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৪১ ভোট। আর বিজেপির প্রার্থী স্বরূপ প্রসাদ ঘোষ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫১১ ভোট।