কাতারায় বাংলাদেশ উৎসব

বাংলাদেশ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশি–বিদেশি অতিথিরা
বাংলাদেশ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশি–বিদেশি অতিথিরা

নানা আয়োজনে ১৯ মার্চ কাতারে উদ্বোধন করা হয়েছে বাংলাদেশ উৎসবের। এ উপলক্ষে কাতারের সাংস্কৃতিক নগরী কাতারায় ২৩ মার্চ সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বাংলাদেশি চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ও খাবার মেলারও আয়োজন করা হয় কাতারায়।
মনিকা হ্যামলিন ও মুনিরুল হুদার সঞ্চালনায় ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল কাতার ২০১৯’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন কাতারে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ। অনুষ্ঠানে ভারত, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, উরুগুয়ে, পর্তুগাল, ইউক্রেন এবং তুরস্কের রাষ্ট্রদূতেরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া কাতারা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা ও বাংলাদেশ ফোরাম কাতারের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ
রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ

অনুষ্ঠানে চিত্রাঙ্কন ও ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। পরে তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। কাতার ও বাংলাদেশ সম্পর্কিত ছবি তোলা প্রতিযোগিতায় প্রথম বিজয়ী হয়েছেন ফেরদৌস হাসান প্রান্ত, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন যথাক্রমে মুহাম্মদ রিয়াসত ইসলাম ও মুহাম্মদ সোহরাব হোসেন। একই সময়ে শিশুদের তিনটি গ্রুপ যথাক্রমে ২-৫ বছর, ৫-১০ বছর এবং ১০-১৪ বছর বয়সীদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশি–বিদেশি অতিথিরা
বাংলাদেশ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশি–বিদেশি অতিথিরা

অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তৃতায় বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ বলেন, বাংলাদেশের রয়েছে হাজার বছরের সমৃদ্ধ শিল্প ও সংস্কৃতি। এই বাংলাদেশ উৎসবের মধ্য দিয়ে কাতারবাসী বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানার সুযোগ পাবে। তিনি এমন আয়োজনে এগিয়ে আসায় কাতারা কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ ফোরাম কাতারকে ধন্যবাদ জানান।
কাতারার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক মরিয়ম আল-সাদ বলেন, এই উৎসবের মাধ্যমে এমন একটি দেশের সংস্কৃতিকে উদ্‌যাপন করা হচ্ছে, যার রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। এই উৎসবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, চিত্রকর্ম ও আলোকচিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খাবারের প্রদর্শনী। এটি বাংলাদেশের মানুষের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও শিল্প অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে।

বাংলাদেশ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশি–বিদেশি অতিথিরা
বাংলাদেশ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশি–বিদেশি অতিথিরা

বাংলাদেশ উৎসব উপলক্ষে কাতারায় বাংলাদেশি খাবারের স্টল বসিয়ে বিদেশিদের সামনে বাংলা খাবারের আয়োজন তুলে ধরেন বাংলাদেশ ফোরাম কাতারের সদস্যরা। এসব স্টলে পিঠাপুলি থেকে শুরু করে নানা ধরনের মিষ্টি ও বিরিয়ানি এবং অন্যান্য দেশীয় খাবার পরিবেশন করা হয়।
উৎসবে বাংলাদেশ থেকে আসা আয়নাবাজি ছবির প্রযোজক জিয়াউদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে কাতারেই প্রথম আয়নাবাজি দেখানো হলো। আয়নাবাজি বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে সমাদৃত হয়েছে, কিন্তু কাতারের বাংলাদেশিরা এত দিন এই ছবিটি দেখতে পারে নাই, সেটা দুঃখের ছিল। এখন বাংলাদেশ ফোরামের মাধ্যমে প্রবাসীরা তা দেখার সুযোগ পেল।
জিয়াউদ্দীন আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে কাতারে বাংলাদেশি সিনেমা প্রদর্শনের জন্য আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি। সেই লক্ষ্যে এখানকার পরিবেশকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ হয়েছে। এখন ঢাকায় গিয়ে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে আলাপ শুরু করব। এটি সম্ভব হলে কাতারে প্রবাসী চার লাখ বাংলাদেশি বিদেশে বসে দেশের সিনেমা দেখার সুযোগ পাবে।’

বাংলাদেশ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশি–বিদেশি অতিথিরা
বাংলাদেশ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশি–বিদেশি অতিথিরা

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ বিদেশি অতিথিদের নিয়ে বাংলাদেশি চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। কাতারার ২২ নম্বর ভবনের দু নম্বর গ্যালারিতে বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী কালিদাস কর্মকার এবং মুস্তাফা আরশাদের আঁকা বেশ কিছু চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। এর আগে ২২ মার্চ শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুদের জন্য আয়োজিত কর্মশালায় তাদের চিত্রাঙ্কন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেন কালিদাস কর্মকার।
প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে কালিদাস কর্মকার বলেন, ‘প্রথমবারের মতো আমি কাতারে এসেছি। চমৎকার এই আয়োজনে অংশ নিতে পেরে ভালো লাগছে। আর যেসব শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে, তাদের মধ্যে প্রতিভা আছে। আমার ভালো লেগেছে।’

বাংলাদেশ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশি–বিদেশি অতিথিরা
বাংলাদেশ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশি–বিদেশি অতিথিরা

রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, শুধু বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি নয়, বরং এই আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নও তুলে ধরা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এমন আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
বাংলাদেশ ফোরামের সভাপতি ইফতেখার আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে কাতারে বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য তুলে ধরার লক্ষ্যে আমাদের কার্যক্রম শুরু হলো। কাতারার মতো অভিজাত এলাকায় এমন আয়োজন এবারই প্রথম। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে বৈচিত্র্যময় উদ্যোগ নেবে বাংলাদেশ ফোরাম কাতার।’
১৯ মার্চ বিকেলে আয়নাবাজি সিনেমা প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সপ্তাহব্যাপী বাংলাদেশ উৎসবের। বাংলাদেশ ফোরাম কাতারের এই আয়োজনে যৌথভাবে সহযোগিতা করছে কাতারা ও বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। ২৫ মার্চ এই উৎসব শেষ হয়।