প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের পদত্যাগে সমাধান দেখছেন ব্রেক্সিটপন্থীরা

থেরেসা মে। ছবি: এএফপি
থেরেসা মে। ছবি: এএফপি

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট ব্রেক্সিটের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়ায় ভীষণ উদ্বেগে রয়েছেন ব্রেক্সিটপন্থীরা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিচ্ছেদের (ব্রেক্সিটের) সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা তাঁদের। সে কারণে ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের সম্পাদিত ব্রেক্সিট চুক্তিতে সমর্থনের ইঙ্গিত দিচ্ছেন তাঁরা। তবে এই সমর্থনের বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে থেরেসা মের পদত্যাগ দাবি করেছেন ব্রেক্সিটপন্থীরা। ইইউর সঙ্গে সমঝোতার পরবর্তী ধাপ ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণের দায়িত্বে ব্রেক্সিটপন্থী কোনো প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে চান তাঁরা।

গত সোমবার এক প্রস্তাব পাসের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সংসদীয় কার্যবিধির নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেয়। এরপর থেকে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী আইনপ্রণেতাদের সংগঠন ইউরোপিয়ান রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নেতারা নড়েচড়ে বসেন।

ইআরজির প্রধান জ্যাকব রিচ মগ বলেন, তিনি এত দিন প্রধানমন্ত্রীর সম্পাদিত বাজে চুক্তির চাইতে চুক্তি ছাড়াই বিচ্ছেদের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু এখন পার্লামেন্ট যেসব বিকল্পের কথা বলছে, সেগুলো ওই চুক্তির চেয়েও বাজে। এ ছাড়া পার্লামেন্ট চুক্তিহীন বিচ্ছেদের সুযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে। তাই মন্দের ভালো হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর চুক্তিতে সমর্থন দিতে রাজি তিনি। তবে সরকারের শরিক দল ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) চুক্তিতে সমর্থন দিলে তবেই তিনি এটি সমর্থন করবেন।

সংসদীয় গণতন্ত্রে ক্ষমতাসীন দলের আইনপ্রণেতারা সমর্থন দিলেই যেকোনো চুক্তি পাস হয়। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী আইনপ্রণেতাদের বিরোধিতার কারণে ব্রেক্সিট চুক্তি পাসে দুই দফা ব্যর্থ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মে। সরকারের শরিক দল ডিইউপিও চুক্তির বিরোধিতায় সরব।

এ দিকে বুধবার সংসদের কার্যবিধির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন সর্বদলীয় আইনপ্রণেতারা। এ দিন ব্রেক্সিট বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন যাচাইয়ে ১৬টি বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। এসবের মধ্য থেকে স্পিকারের বাছাই করা ছয়টি প্রস্তাবের ওপর বুধবার সন্ধ্যায় ভোটাভুটির কথা ছিল। এসব ভোটে চূড়ান্ত কোনো ফল না মিললে আগামী সোমবারও একই ধরনের ভোটাভুটির আয়োজন করবে পার্লামেন্ট।

দাবি ছিল, মতামত যাচাইয়ের এসব ভোটে দলগুলো যাতে সদস্যদের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ (হুইপ) না করে। মন্ত্রিসভা থেকে গত সোমবার পদত্যাগ করা স্টিভ ব্রাইন বিবিসিকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আইনপ্রণেতাদের মুক্তভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ না দিলে মন্ত্রিসভার অন্তত ডজনখানেক সদস্য পদত্যাগ করবেন।

বুধবার বিকল্প নিয়ে পার্লামেন্টে ভোটাভুটির আগে নিজ দলের আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা আছে প্রধানমন্ত্রী মের। এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে আশা করা হচ্ছিল। তবে বিবিসির নরমান স্মিথ বলেন, ‘থেরেসা মে নাছোড়বান্দা। তিনি পদত্যাগের বিষয়ে ধোঁয়াশা রেখে দিতে পারেন এবং ব্রেক্সিটপন্থীদের উদ্বেগকে কাজে লাগিয়ে চুক্তিতে সমর্থন আদায় করে নিতে চাইবেন।’

হাউস অব কমন্সের নেতা অ্যান্ড্রিয়া লিডসম বলেন, পর্যাপ্ত সমর্থন নিশ্চিত করা গেলে বৃহস্পতি অথবা শুক্রবার ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে তৃতীয় দফা ভোটাভুটির আয়োজন হতে পারে। কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী এই নেতা বলেন, ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে বিবাদ দূরে রেখে আপাতত বিচ্ছেদ নিশ্চিত করা জরুরি।