নিজেকেই বিসর্জন দিলেন মে

থেরেসা মে
থেরেসা মে

সম্পাদিত ব্রেক্সিট চুক্তিতে সংসদের সমর্থন আদায়ে শেষ পর্যন্ত নিজেকেই বিসর্জন দিলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। গতকাল বুধবার দলীয় সংসদ সদস্যদের সভায় তিনি বলেন, ‘চুক্তিতে সমর্থন দিন, আমি পদত্যাগ করব।’

ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী আইনপ্রণেতারা চুক্তিতে সমর্থনের বিনিময়ে মের পদত্যাগ দাবি করছিলেন। তাঁরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে পরবর্তী ধাপের সমঝোতায় (ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণ) ব্রেক্সিটপন্থী কাউকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চান।

ইইউর সঙ্গে বিচ্ছেদ কার্যকরে প্রধানমন্ত্রী মে দীর্ঘ ১৮ মাসের সমঝোতার পর একটি চুক্তিতে পৌঁছান। কিন্তু যুক্তরাজ্যের সংসদ দুই দফা চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করেছে। বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী ৭৫ জন আইনপ্রণেতা এই চুক্তির বিরোধী। চলতি সপ্তাহের মধ্যে চুক্তিতে অনুমোদন লাভের সময় বেঁধে দিয়েছে ইইউ। অন্যথায় দীর্ঘ সময়ের জন্য বিচ্ছেদ পিছিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আসন্ন ইইউ নির্বাচনে অংশ নিতে হবে যুক্তরাজ্যকে।

প্রধানমন্ত্রী চুক্তি পাসে ব্যর্থ হওয়ায় বুধবার পার্লামেন্ট ব্রেক্সিট বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতার মতামত যাচাইয়ে ৮টি বিকল্প নিয়ে ভোটাভুটির আয়োজন করে। এই ভোটাভুটির ফলাফল সরকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে বলে আশঙ্কা ছিল। ওই ভোটাভুটি শুরুর আগেই প্রধানমন্ত্রী দলীয় সাংসদদের ডেকে বলেন, ‘সংসদীয় দলের মনোভাব আমি পরিষ্কার শুনতে পেয়েছি। ব্রেক্সিট সমঝোতার দ্বিতীয় ধাপে নতুন নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা আছে। আমি তাতে বাধা হব না।’

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর সাবেক মন্ত্রী বরিস জনসন ও ইয়ান ডানকান স্মিথ এবং কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী ইউরোপিয়ান রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নেতা জেকব রিচ মগসহ বিদ্রোহীদের অনেকেই বিচ্ছেদ চুক্তিতে সমর্থনের ইঙ্গিত দিচ্ছেন। তাঁদের কাছে এই চুক্তি এখন ‘মন্দের ভালো’।

তবে সরকারি দলের ডজনখানেক আইনপ্রণেতা কোনো অবস্থাতেই এই চুক্তি সমর্থন করবেন না বলে জানিয়েছেন। ইআরজির সহসভাপতি মার্ক ফ্র্যানকোইচ বলেন, বন্দুকের মুখেও তিনি এই চুক্তিতে সমর্থন দেবেন না।

অন্যদিকে সরকারের শরিক দল ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) চুক্তির বিরোধিতায় অটল। দলটির প্রধান অ্যারলেন ফোস্টার বলেন, চুক্তিতে উল্লেখিত ‘ব্যাকস্টপ’ ব্যবস্থার কারণে তাঁরা এতে সমর্থন দিতে পারবেন না। আয়ারল্যান্ড সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার কৌশল ‘ব্যাকস্টপ ব্যবস্থা’ নর্দান আয়ারল্যান্ডকে যুক্তরাজ্যের বাকি অংশ থেকে আইনিভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে বলে অভিযোগ রয়েছে।

আগামীকাল শুক্রবার ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে তৃতীয় দফা ভোটাভুটির আয়োজন করতে চান থেরেসা মে। তার আগে পর্যাপ্ত সমর্থন আদায়ে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। এদিন চুক্তিটি পাস হলে ২২ মে বিচ্ছেদ কার্যকর হবে। আর ওই দিনই থেরেসা মে দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে জানিয়েছেন। তবে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন। ওই সময়ের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন ক্ষমতাসীনেরা। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, চুক্তিটি পাস না হলে মে পদত্যাগ না–ও করতে পারেন।

সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি পার্লামেন্ট
প্রধানমন্ত্রী মে পার্লামেন্টকে মতামত দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে তাঁর বিতর্কিত চুক্তি চাপিয়ে দিচ্ছেন—এত দিন এমন অভিযোগের খই ফুটিয়েছেন দেশটির আইনপ্রণেতারা। সরকারের কাছ থেকে সংসদীয় কার্যবিধির নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নিয়ে গতকাল বুধবার তাঁরা নিজেদের ইচ্ছামাফিক নানা বিকল্প প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটির আয়োজন করেন। গোপন ব্যালটে হওয়া ভোটে এসব প্রস্তাবের কোনোটিই সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতার সমর্থন পায়নি। মোট ১৬টি প্রস্তাব জমা পড়ে। স্পিকারের বাছাই করা ৮টি প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। এসব প্রস্তাবের মধ্যে পুনরায় গণভোট, চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার কয়েকটি বিকল্প ছিল।

বেক্সিটবিষয়ক মন্ত্রী স্টিফেন বারক্লে বলেন, এসব ভোটে প্রমাণিত হয়েছে যে বিকল্প কোনো প্রস্তাবেই সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন নেই। এ ভোটে আইনপ্রণেতাদের বিভক্তি আরও স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, ছাড়ের মানসিকতা ছাড়া কোনো চুক্তি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। প্রধানমন্ত্রী মে সব পক্ষের কথা মাথায় রেখে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে চুক্তি সম্পাদন করেছেন। তিনি ওই চুক্তিতে সমর্থন দেওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।

তবে এসব ভোটাভুটির উদ্যোক্তা ক্ষমতাসীন দলের অলিভার লেটউইন বলেন, ফলাফল হতাশাজনক। সর্বোচ্চ সমর্থন পাওয়া প্রস্তাবগুলো নিয়ে আগামী সোমবার আবার ভোটাভুটির সুপারিশ করেন তিনি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব পাস হয়ে গেলে সোমবার আর ভোটাভুটির প্রয়োজন হবে না।

রাজনৈতিক ভাষ্যকারেরা বলেছেন, সংসদ একের পর এক প্রস্তাবগুলোকে কেবল ‘না’ বলছে। কোন প্রস্তাবকে যে ‘হ্যাঁ’ বলবে সেটিই এক বিরাট রহস্য।