শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ নিষিদ্ধ করল ফেসবুক

চাপের মুখে ফেসবুক নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। ছবি: রয়টার্স
চাপের মুখে ফেসবুক নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

ফেসবুক নিজের প্ল্যাটফর্মে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ ও শ্বেতাঙ্গ বিচ্ছিন্নতাবাদ নিষিদ্ধ করেছে। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে বন্দুকধারীর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার এ নিষেধাজ্ঞা দেয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও বলেছেন, ক্রাইস্টচার্চের মতো ঘটনা এড়াতে আরও অনেক কিছু করার আছে।

১৫ মার্চ ক্রাইস্টচার্চে জুমার নামাজের সময় আল নুর ও লিনউড মসজিদে বন্দুক হামলা চালান অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ব্রেনটন টারান্ট (২৮)। ওই হামলায় ৫০ জন নিহত হন। দুই মসজিদের মধ্যে আল নুরে হামলার সময় শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের স্বঘোষিত অনুসারী ব্রেনটন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করেন। গ্রেপ্তারের পর ১৬ মার্চ তাঁকে আদালতে হাজির করার পর তিনি হাতকড়া পরা আঙুলের মাধ্যমে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের প্রতীক ফুটিয়ে তোলেন।

হামলার পর থেকেই নাগরিক অধিকারের পক্ষে কাজ করা সংগঠনগুলো অভিযোগ করে আসছে, ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো এবং ভিডিও সম্প্রচারের প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব চরমপন্থা মোকাবিলায় ব্যর্থ। ফ্রান্সে মুসলমানদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন এরই মধ্যে ফেসবুক ও ইউটিউবের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে।

চাপের পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুক এরই মধ্যে নিজের প্ল্যাটফর্মে নজরদারি বাড়িয়েছে। এ ছাড়া শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী গোষ্ঠীগুলোর পরিচালিত অনেকগুলো পেজ বন্ধ করে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি। এ ধারায় গত বুধবার প্রতিষ্ঠানটি নিজের প্ল্যাটফর্মে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ ও শ্বেতাঙ্গ বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রশংসা, সমর্থন ও প্রতিনিধিত্ব নিষিদ্ধ করে। এক ব্লগপোস্টে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানায়, আগামী সপ্তাহ থেকে তাদের নতুন এই নীতি কার্যকর হবে। ফেসবুকের প্ল্যাটফর্ম ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির মালিকানাধীন ছবি শেয়ারের মাধ্যম ইনস্টাগ্রামেও একই নীতি কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বেশ আগেই শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের বশবর্তী হয়ে ‘বিদ্বেষপ্রসূত’ কিছু পোস্ট করা নিষিদ্ধ করেছে। তবে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ বা বিচ্ছিন্নতাবাদকে ‘বর্ণবাদী’ আচরণ হিসেবে গণ্য করেনি।

এদিকে ক্রাইস্টচার্চে গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বলেন, ‘তারা (ফেসবুক) পদক্ষেপ নিয়েছে দেখে আমি খুশি। তবে আমার এখনো মনে হয়, তাদের এই পদক্ষেপ যথেষ্ট কি না, তা নির্ণয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘ক্রাইস্টচার্চের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার মতো বিষয় রয়েছে। আমরা চাই না এ ধরনের ঘটনা থেকে আবারও কারও শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন পড়ুক।’ নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বিদ্বেষপ্রসূত পোস্ট মোকাবিলা করে সবার জন্য ‘অবাধ, উন্মুক্ত ও নিরাপদ ইন্টারনেট’ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।