ভেনেজুয়েলায় নজিরবিহীন দুর্ভোগ

স্মরণকালের নজিরবিহীন দুর্ভোগে ভুগছে ভেনেজুয়েলাবাসী। ছবি: রয়টার্স
স্মরণকালের নজিরবিহীন দুর্ভোগে ভুগছে ভেনেজুয়েলাবাসী। ছবি: রয়টার্স

ভেনেজুয়েলার প্রায় এক-চতুর্থাংশ নাগরিকের মানবিক সহায়তার জরুরি প্রয়োজন। তাদের খাদ্য ও মৌলিক সেবার প্রচণ্ড অভাব নিয়ে জাতিসংঘের অভ্যন্তরীণ এক প্রতিবেদন গতকাল বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের নজরে আসে।

প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর কথার সঙ্গে আজ শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনটির বেশ পার্থক্য রয়েছে। মাদুরো বলেন, দেশটিতে কোনো সংকট নেই, তাঁদের মানবিক সহায়তার দরকার নেই। তিনি দেশটির অর্থনৈতিক সংকটের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপকে দায়ী করেছেন।

মাদুরো ও যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত বিরোধীদলীয় নেতা হুয়ান গুয়াইদোর রাজনৈতিক সংঘাতের মাঝখানে রয়েছে জাতিসংঘ। মাদুরোর পুনর্নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করে স্বঘোষিত অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন গুয়াইদো।

ভেনেজুয়েলার সরকারি বাহিনী গত মাসে কলম্বিয়া ও ব্রাজিল থেকে আসা যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত ত্রাণসামগ্রীর বহরের প্রবেশে বাধা দেয়। মাদুরো সরকার অবশ্য মিত্র রাশিয়ার সহায়তা নিয়েছে। ‘মানবিক সহায়তার দলীয়করণের কারণে সংকটের সময় স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন নীতি মেনে সহায়তা পাঠানোর বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছে।’ ভেনেজুয়েলায় ‘মানবিক সহায়তার অগ্রাধিকার পর্যালোচনা’ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের প্রতিবেদনের ৪৫ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা আছে এই কথা। তবে ভেনেজুয়েলার তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

২০১৯ সালের মার্চ মাসে জাতিসংঘ পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ‘বৃহৎ পরিসরে’ নানা সূত্র ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, রেড ক্রস, একাডেমিয়া এবং সুশীল সমাজ। বৈশ্বিক নানা ক্ষেত্র থেকে ভেনেজুয়েলা সংকটে আরও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বাসযোগ্য ও সরকারি তথ্যের অভাবে প্রয়োজনীয় সহায়তার জায়গাগুলো খুঁজে বের করা মুশকিল হয়ে পড়ছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, প্রায় ২৯ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে ৯৪ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ দেশ ছেড়ে চলে গেছে। প্রায় ২ কোটি মানুষ তাদের পথ অনুসরণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ভেনেজুয়েলার নজিরবিহীন এই দুর্ভোগের জন্য দায়ী। আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ, টিকা, পানি, বিদ্যুৎ, শিক্ষা এবং খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।’
জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, স্বাস্থসেবা প্রয়োজন প্রায় ৩ কোটি মানুষের। ওষুধ এবং চিকিৎসার অভাবে বছর জুড়ে ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও এইচআইভিতে ভুগতে থাকা আরও প্রায় ৩ লাখ রোগীর জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যক্ষ্মা, ডিফথেরিয়া, হাম ও ম্যালেরিয়ার মতো প্রতিরোধযোগ্য রোগও দেশটিতে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। নিরাপদ পানির অভাবে ছড়িয়ে পড়ছে হেপাটাইটিস। পানি, পয়োনিষ্কাশন এবং স্বাস্থ্যবিধির প্রয়োজন প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষের।

খাদ্য–সংকটের কারণে অপুষ্টিতে ভুগছে প্রায় ২ কোটি মানুষ। ক্রমে সংঘর্ষ বাড়তে থাকা দেশটিতে খাদ্যাভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে আড়াই কোটির বেশি অধিবাসী। প্রতিবেদন অনুসারে, প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ শিশু স্কুলে যেতে পারছে না। স্কুলের জন্য প্রয়োজনীয় পোশাক, জুতা বা পরিবহনব্যবস্থা না থাকায় শিশুরা বরং পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে কাজ করছে। স্কুলে যেতে না পারায় আরও প্রায় ১ কোটি শিশু মানসিকভাবে ভীষণ ভেঙে পড়েছে।