প্রিয়াঙ্কা নির্ভার, মোদির হুংকার

নরেন্দ্র মোদি ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী
নরেন্দ্র মোদি ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী

অর্ধেক উত্তর প্রদেশের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি এই প্রথম। এই প্রথম কংগ্রেসের মতো সর্বভারতীয় দলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। কিন্তু দেখেশুনে মনে হচ্ছে, এত বড় গুরুদায়িত্ব প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর মনে তেমন কোনো চাপ সৃষ্টি করেনি। তাই হয়তো এমন হাসিঠাট্টার মধ্যে কংগ্রেসের হয়ে প্রচারাভিযান তিনি চালিয়ে যেতে পারছেন।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেন বৃষস্কন্ধ। দলের সব দায় যেন তাঁর একারই। এবারের ভোট তাই ‘মোদি বনাম অন্যরা’। লড়াইয়ের অভিমুখও তিনি ঘুরিয়ে দিয়েছেন পশ্চিমের প্রতিবেশীর দিকে। এই নির্বাচনী যুদ্ধের থিম তাঁর কাছে দেশপ্রেম বনাম দেশদ্রোহ।

আমেথি-রায়বেরিলির জনপদ প্রিয়াঙ্কার কাছে অতি চেনা আঙিনা। ভোটের আগে সেই আঙিনায় স্বচ্ছন্দ বিচরণ তিনি আগেও করেছেন। এবার তার পরিধি বেড়েছে। লক্ষ্ণৌ থেকে বারানসি পর্যন্ত রাজ্যের ৪২টা লোকসভা কেন্দ্রে প্রচারের দায়িত্ব তাঁর। শুরু করেন তিন দিন ধরে বারানসি সফর দিয়ে। নদীপথে সেই ভ্রমণে তাঁর লক্ষ্য ছিল মাঝি-মাল্লা ও অতি সাধারণ মানুষজনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন। তারপর ফিরে গেছেন আমেথি-রায়বেরিলিতে। এরপর তাঁর গন্তব্য অযোধ্যা। হাসিঠাট্টার সঙ্গে চলছে তাঁর জনসম্পর্ক।

এই যেমন বুধবার রাতে আমেথি থেকে রায়বেরিলি যাওয়ার সময় দেখা গেল তার প্রথম ঝলক। উত্তর ভারতের বহু বছরের প্রথা, বড় দাঁড়িপাল্লার একদিকে প্রার্থীকে বসিয়ে অন্য পাল্লায় কখনো মিষ্টি, কখনোবা পিতল-কাঁসা-রুপার বাসন ওজন করা হয়। ওজন করা মিষ্টি বিতরণ করা হয় দলীয় কর্মী ও গ্রামবাসীর মধ্যে। বাসন বিক্রি করে সেই টাকা দেওয়া হয় দলীয় তহবিলে। বুধবার রাতে প্রিয়াঙ্কার জন্যও অপেক্ষায় ছিল ফুল-পাতায় মোড়া ওই রকমই এক দাঁড়িপাল্লা ও ডাঁই করা মিষ্টি।

প্রিয়াঙ্কা কিন্তু চমৎকার এড়িয়ে গেলেন সেই প্রথা। ওজনের কাছে দাঁড়িয়ে সহাস্যে দলীয় কর্মীদের কাছে জানতে চাইলেন তাঁর ওজন কি ১০০ কেজি? হাসতে হাসতে কাছে থাকা স্থানীয় নেতাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনারা কি মনে করেন আমার ওজন এক কুইন্টালেরও বেশি?’ উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়া প্রিয়াঙ্কাকে দেখে স্থানীয় নেতারা ঘাড় নাড়তে শুরু করেন। প্রিয়াঙ্কা সেই ফাঁকে স্থানীয় এক নেতাকে ‘আপনি বসে পড়ুন’ বলে এগিয়ে যান।
পরের দিন গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর দুটি মন্তব্য অন্য এক রাজনৈতিক জল্পনা উসকে দেয়। রায়বেরিলি সফরের সময় স্থানীয় কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কেউ কেউ দাবি জানান, প্রিয়াঙ্কাই যেন রায়বেরিলি থেকে ভোটে দাঁড়ান। সোনিয়া গান্ধীর নাম রায়বেরিলি থেকে ইতিমধ্যেই ঘোষিত। কিন্তু এখনো তিনি রায়বেরিলি আসতে পারেননি নানা কারণে। প্রিয়াঙ্কা দলীয় নেতা-কর্মীদের সেই কথা জানালে কেউ কেউ তাঁকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বলেন। উত্তরে হাসিমুখে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘বারানসি থেকে নয় কেন?’

বারানসি প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী কেন্দ্র। সাত দফার ভোটের শেষ পর্ব ১৯ মে, সেদিন সেখানে ভোট। বারানসির জন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার অনেক সময় রয়েছে। অন্য দলের প্রার্থীদের নামও ঘোষণা হয়নি। প্রিয়াঙ্কার হাসিমুখের মন্তব্য অন্য রকমের জল্পনার জন্ম দিল।

প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে কংগ্রেস যখন সরকারের পাঁচ বছরের ‘সার্বিক ব্যর্থতা’, চাকরিহীন প্রবৃদ্ধি, কৃষি-সমস্যা, নোট বাতিল, জিএসটি, রাফাল দুর্নীতি ও কাছের শিল্পপতিদের তোষণের অভিযোগ তুলে ধরছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রচারে তখন উঠে আসছে এক দৃঢ় সরকার, যে সরকার পাকিস্তানকে মুখের ওপর জবাব দিয়ে দেয়। সরকার নিশ্চিত করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। গত বুধবার পশ্চিম উত্তর প্রদেশের মিরাট এবং গতকাল বৃহস্পতিবার ওডিশায় নির্বাচনী জনসভায় মোদি দেশের নিরাপত্তার বিষয়টিই বড় করে তুলে ধরেন। ওডিশার কোরাপুটে তিনি টেনে আনেন পাকিস্তানের বালাকোটে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিতে বিমান হানার বিষয়টি। বিরোধীদের কটাক্ষ করে তিনি বলেন, বিমান হানার এক মাস পরও পাকিস্তান সেখানে লাশ গুনছে, অথচ বিরোধীরা তার প্রমাণ চাইছে। তারা ‘মিশন শক্তি’ নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।
পাঁচ বছর আগে নরেন্দ্র মোদির স্লোগান ছিল ‘আচ্ছে দিন’। পাঁচ বছর পর সেই স্লোগানের নামগন্ধও উচ্চারিত হচ্ছে না। এবারের লড়াই ‘দেশপ্রেম বনাম দেশদ্রোহ’-এর। প্রধানমন্ত্রীর দুদিনের নির্বাচনী প্রচার সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।