ব্রেক্সিট: আরও সময় চাইবে যুক্তরাজ্য

প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে
প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে

বিচ্ছেদের দিনক্ষণ পিছিয়ে দিতে আবারও দাবি জানাবে যুক্তরাজ্য। গতকাল মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এমনটি জানান। ব্রেক্সিটের অচলাবস্থা নিরসনে তিনি বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিনের সঙ্গে আলোচনারও প্রস্তাব দেন।

করবিনের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়ায় আজ বুধবার মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন ওয়েলস-বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নাইজেল অ্যাডামস। দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থীরা বেজায় খেপেছেন। তাঁরা বলছেন, লেবার পার্টির সঙ্গে সমঝোতা মানেই তুলনামূলক নমনীয় বিচ্ছেদের (সফটার ব্রেক্সিট) দিকে ধাবিত হওয়া, যা প্রকৃত বিচ্ছেদ নয়।

গতকাল ব্রেক্সিট নিয়ে করণীয় ঠিক করতে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী মে। সাত ঘণ্টাব্যাপী চলে সেই বৈঠক। কিন্তু অন্তঃকলহের কারণে তা ছিল ফলশূন্য।

ওই বৈঠক শেষে আকস্মিক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী মে বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিনের সাহায্য কামনা করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে ১২ এপ্রিল নির্ধারিত বিচ্ছেদের দিনক্ষণ সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের জন্য পেছাতে হবে। তার আগে লেবার নেতা জেরেমি করবিনের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক বিষয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে চান, যাতে চুক্তিটি সংসদে পাস হয়।

মে বলেন, ভবিষ্যৎ সম্পর্ক বিষয়ে যে ভিন্নমত, সেটি বিচ্ছেদ চুক্তি (উইথড্রোয়াল অ্যাগ্রিমেন্ট) থেকে আলাদা। ইইউ বিচ্ছেদ চুক্তির পরিবর্তন করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তাই ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকলেও সম্পাদিত বিচ্ছেদ চুক্তির বিকল্প নেই।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানায়, করবিনের সঙ্গে সমঝোতা না হলেও বিচ্ছেদের দিনক্ষণ পেছানোর আবেদন করা হবে। সে ক্ষেত্রে ব্রেক্সিট নিয়ে করণীয় ঠিক করতে পার্লামেন্টে বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে ভোটাভুটির আয়োজন করবে সরকার।

লেবার নেতা জেরেমি করবিনের আজ বিকেলেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার কথা। তিনি ইইউয়ের কাস্টমস ইউনিয়নের সুবিধা বজায় রাখার পাশাপাশি তাঁর দলের অন্য দাবিগুলো নিয়ে আলাপ করবেন বলে জানান।

বিবিসির রাজনীতিবিষয়ক সম্পাদক লরা কুয়েন্সবার্গ বলেন, মে তাঁর দলের আইনপ্রণেতাদের ভোটে ব্রেক্সিট চুক্তি পাস করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কট্টর ব্রেক্সিটপন্থীদের কোনোভাবেই বশে আনতে পারেননি। ফলে, এখন তিনি বিরোধী দলের সমর্থন নিয়ে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পথ খুঁজছেন। কুয়েন্সবার্গ বলেন, দলীয় ঐক্যের চেয়ে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নকে প্রাধান্য দিলেন মে।

টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়েছে, গতকালের বৈঠকে ১৬ জন মন্ত্রী চুক্তি ছাড়া বিচ্ছেদ কার্যকরের পক্ষে মত দিয়েছেন।

ব্রেক্সিট-বিষয়ক মন্ত্রী স্টিফেন বারক্লে বিবিসিকে বলেন, সরকার চুক্তির মাধ্যমে বিচ্ছেদ চায়। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো ক্ষমতাসীন দলের ৩৫ জন সদস্য প্রধানমন্ত্রীর চুক্তিতে সমর্থন দিতে এখনো অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। যে কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত নমনীয় বিচ্ছেদের পথ বেছে নিতে নিচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে কট্টর ব্রেক্সিটপন্থীদের শর্ত মেনে নিয়ে চুক্তি পাস হলে পদত্যাগ করবেন বলে ঘোষণা দেন মে।

ইইউয়ের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে বিচ্ছেদ কার্যকরে দীর্ঘ ১৮ মাসের চেষ্টায় একটি চুক্তি সম্পাদন করেন প্রধানমন্ত্রী মে। কিন্তু তিনবার চেষ্টা করেও তিনি সেই চুক্তি সংসদে পাস করাতে পারেননি। গত ২৯ মার্চ বিচ্ছেদ কার্যকরের কথা ছিল। ব্রিটিশ রাজনীতিকদের অনৈক্যের কারণে তা হয়নি। দিনটি পিছিয়ে এখন ১২ এপ্রিল নির্ধারিত রয়েছে।

অন্যদিকে, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত যাচাইয়ে পার্লামেন্টে বিভিন্ন বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটির আয়োজন করা হয়। কিন্তু দুই দফা ভোটাভুটির পরও বিকল্প কোনো প্রস্তাবে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত পায়নি।

যুক্তরাজ্য আবেদন জানালে এবং ইইউ তাতে সম্মতি দিলে বিচ্ছেদের দিনক্ষণ আবারও পেছাবে। অন্যথায় চুক্তি ছাড়াই এদিন বিচ্ছেদ ঘটবে।