ইরানি এলিট ফোর্সকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করল যুক্তরাষ্ট্র

ইরানের ‘এলিট বাহিনী’ রেভল্যুশনারি গার্ডের সদস্যরা। ছবি: এএফপি
ইরানের ‘এলিট বাহিনী’ রেভল্যুশনারি গার্ডের সদস্যরা। ছবি: এএফপি

ইরানের ওপর চাপের পারদ আরও একধাপ বাড়ানোর অংশ হিসেবে সে দেশের ‘এলিট বাহিনী’ রেভল্যুশনারি গার্ডকে (আইআরজিসি) বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার হোয়াইট হাউসে এ বিষয়ে একটি বিবৃতিতে সাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অন্য একটি জাতির পুরো সেনাবাহিনীকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা ভুক্ত করার এটা প্রথম পদক্ষেপ। অপর দিকে, এই ঘোষণার বিপরীতে ইরান তাৎক্ষণিক নিন্দা জানিয়েছে।

গত বছর ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৫ সালে তেহরানের সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসে। ওই চুক্তি বাতিলের বর্ষপূর্তির মাথায় এসে আবারও নতুন এই ইরানবিরোধী ঘোষণা দিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

তবে মানবাধিকার খর্ব ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সমর্থনের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র আগেও আইআরজিসি ও এর সঙ্গে সংযুক্ত সংস্থার অংশবিশেষের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।

সোমবারের ওই বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের নেওয়া ওই নজিরবিহীন পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে, রাষ্ট্র হিসেবে ইরান শুধু সন্ত্রাসীদের অর্থ সহায়তা দেয় না বরং তাদের বাহিনী আইআরজিসি সক্রিয়ভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, অর্থ সহায়তা ও ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। ট্রাম্প আরও বলেন, এই পদক্ষেপ ইরানের ওপরে চাপ প্রয়োগের পরিধি ও মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করবে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, যদি কেও ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করে তার মানে সে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থ জোগান দিচ্ছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর হবে।

পম্পেও এ ব্যাপারে বলেন, ইরান সরকারকে স্বাভাবিক আচরণ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তার ওপর চাপ প্রয়োগ নীতি অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, ইরানের নেতৃত্ব অতটা বিপ্লবী নয়। সে দেশে জনগণ আরও ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। এরপর এক টুইট বার্তায় তিনি জানান, ইরানের জনগণের স্বাধীনতা ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই সাহায্য করতে হবে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা জুড়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর আরও একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সুযোগ পাবে। বিশেষ আইআরজিসি ইরানের অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় দেশটির ব্যবসা খাতক দুর্বল করার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

তবে গণমাধ্যম লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের অর্থনীতিতে আইআরজিসির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্রের ওই নিষেধাজ্ঞা খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। তবে ওই বাহিনীকে কালো তালিকা ভুক্ত করাটা বরং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বুমেরাং হতে পারে। বিশেষ করে, ইরানের শিয়া মিলিশিয়া ও সে দেশের কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন আইআরজিসির সঙ্গে গভীর ভাবে যুক্ত। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক ও সেনা কর্মকর্তাদের ইরানে কাজ করায় সময় জটিলতা তৈরি হবে।

গত কয়েক দিন ধরে আইআরজিসিকে যুক্তরাষ্ট্র কালো তালিকাভুক্ত করতে পারে এমন গুঞ্জন চলছিল। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল প্রথমবারের মতো প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত জানায়। এর আগে অবশ্য আইআরজিসির সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগে ডজনখানেক ব্যক্তিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সে সময় পুরো আইআরজিসিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়নি।

আইআরজিসির কমান্ডার মোহাম্মদ আলী জাফারি ২০১৭ সালে এক সতর্ক বার্তায় বলেন, ট্রাম্প যদি এলিট ফোর্সের ব্যাপারে এ ধরনের ধারণা পোষণ করেন, তবে ‘আইআরজিসি দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে থাকা মার্কিন সেনাবাহিনীকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) হিসেবে বিবেচনা করবে।’