অস্ট্রেলিয়ায় অর্থের বিনিময়ে নাগরিকত্ব!

চীনের কোটিপতি ব্যবসায়ী হুয়াং জিয়াংমো ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার ডাটন। ছবি: সংগৃহীত
চীনের কোটিপতি ব্যবসায়ী হুয়াং জিয়াংমো ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার ডাটন। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ায় আসন্ন ৪৬তম জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সরব দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। এমন অবস্থায় দেশটির বর্তমান সরকারি দল লিবারেল পার্টির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার ডাটন ও অপর সাবেক এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে এক চীনা ধনী ব্যক্তিকে দেশটির নাগরিকত্ব প্রদানে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

২০১৬ সালে সিডনির একটি চীনা রেস্তোরাঁয় তৎকালীন অভিবাসনমন্ত্রী পিটার ডাটন ওই চীনা কোটিপতি ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেখা করেন। অর্থের বিনিময়ে এ একান্ত সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেন আরেক সাবেক লিবারেল মন্ত্রী সান্টো সান্টোরো। দুই মন্ত্রীই এখন এই অভিযোগ অস্বীকার করছেন। তবে দেশটির অন্যতম গণমাধ্যম সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের একটি তদন্তে এ ঘটনার সত্যতা রয়েছে বলে তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়।

২০১৫ সালে চীনের কোটিপতি ব্যবসায়ী হুয়াং জিয়াংমো অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর ও তাঁর পরিবারের নাগরিকত্ব গ্রহণের জন্য আবেদন করেন। আর সেটি নিশ্চিত করতে তিনি সান্টো সান্টোরোর দ্বারস্থ হন। সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, তৎকালীন ম্যালকম টার্নবুল সরকারের অন্যতম ক্ষমতাবান লিবারেল নেতা ও সাবেক অভিবাসনমন্ত্রী ছিলেন পিটার ডাটন। তাঁর সঙ্গে দেখা করা জন্য সাবেক মন্ত্রী সান্টোরোকে প্রায় ১০ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার প্রদান করে জিয়াংমো। ২০১৬ সালে সিডনির একটি চায়নিজ রেস্তোরাঁর অন্দরমহলে ব্যক্তিগতভাবে জিয়াংমোর সঙ্গে দেখা করেন পিটার ডাটন। পরে নাগরিকত্বের আবেদনপ্রক্রিয়ায় সুনজরে রাখা হয় জিয়াংমো ও তাঁর পরিবারের আবেদনপত্র। এমনকি ডাটনের নজরদারিতে এক মাসের মধ্যেই বিশেষ সুবিধায় একান্ত অনুষ্ঠানে নাগরিকত্ব প্রদান করা হয় জিয়াংমো ও তাঁর পরিবারকে। আবেদন প্রার্থী অসুস্থ অথবা বিশেষ কোনো সমস্যা থাকলেই কেবল অভিবাসন আইনে নাগরিকত্ব জনসম্মুখ অনুষ্ঠানে প্রদান করা হয়।

পরে চীনা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার অভিযোগে জিয়াংমো ও তাঁর পরিবারের নাগরিকত্ব বাতিল ও অস্ট্রেলিয়া পুনঃপ্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এ ঘটনার পর গত ফেব্রুয়ারিতে জিয়াংমো দীর্ঘদিন ধরে দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুদানস্বরূপ দেওয়া প্রায় ২৭ লাখ অস্ট্রেলীয় ডলার ফেরত দেওয়ার দাবি করেন। এর পরপরই বিষয়টি নিয়ে দেশটির গণমাধ্যম সরব হয়ে ওঠে। বিদেশি রাজনৈতিক অনুদান গ্রহণের জন্য দেশটির সরকার গত বছরের নভেম্বরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপরও গত বছরের ডিসেম্বরে দেশটির দুর্নীতি কমিশন অস্ট্রেলিয়ার বিরোধী দল লেবার পার্টির কাছে প্রায় এক লাখ অস্ট্রেলীয় ডলার পায়, যা চীনা অনুদান হিসেবে গ্রহণ করে। আর এর সূত্র ধরে লেবার পার্টির উচ্চপদস্থ কয়েকজন পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তখন।