মোদি এলে শান্তি আলোচনার সুযোগ থাকবে: ইমরান

ইমরান খান ও নরেন্দ্র মোদি
ইমরান খান ও নরেন্দ্র মোদি

বিশ্বের বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ ভারতের জাতীয় নির্বাচন শুরু হচ্ছে কাল বৃহস্পতিবার। এই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন জরিপে অনেকটাই এগিয়ে ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির সরকার। পিছিয়ে নেই রাহুল গান্ধীর কংগ্রেসও। আর নির্বাচন নিয়ে দেশটির অন্যতম প্রতিবেশী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও বেশ সজাগ। তিনি বলেছেন, নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি জয়ী হলে কাশ্মীর ইস্যুতে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার ভালো সুযোগ তৈরি হতে পারে। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার এলে কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, ভারতে কাল থেকে অনুষ্ঠেয় ভোটের আগে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে বিদেশি সাংবাদিকদের একটি ছোট্ট দলের সঙ্গে কথা বলেছেন ইমরান খান। এ সময় তিনি বলেন, এবারের লোকসভা নির্বাচনে যদি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি জয়ী হয়, তাহলে কাশ্মীর ইস্যুতে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার একটি ভালো সুযোগ তৈরি হতে পারে। আর যদি নির্বাচনে বিরোধী দল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসে, তাহলে কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সমাধানে একটি ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

তেহরিক–ই–ইনসাফের প্রধান ইমরান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডানপন্থী দল বিজেপি নির্বাচনে জয়ী হলে কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে একটি সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হতে পারে। কাশ্মীরের মুসলমান এবং ভারতের মুসলমানরা নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে ভারতে অচ্ছুত আচরণের শিকার হওয়া সত্ত্বেও এটা হতে পারে। ভারতে এখন যা ঘটছে, কখনো আমার ভাবনায় আসেনি যে এমনটা ঘটতে পারে। মুসলিম হওয়ার কারণে সেখানে আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে।’

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভয়ভীতি ও জাতীয়তাবাদের অনুভূতির ওপর ভিত্তি করে নির্বাচনের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

ভারতকে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার আগেই ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানের মধ্যে থাকা পাকিস্তানভিত্তিক সব জঙ্গিগোষ্ঠীকে নির্মূল করার জন্য বদ্ধপরিকর ইসলামাবাদ। এ জন্য সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন আছে শক্তিধর সেনাবাহিনীর। কাশ্মীরে বিভিন্ন অঘটনে যারা জড়িত, তাদের ধ্বংস করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, কাশ্মীর একটি রাজনৈতিক সমস্যা। সামরিক শক্তি দিয়ে এর সমাধান সম্ভব নয়। পাকিস্তান থেকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা যদি সীমান্ত পেরিয়ে সেখানে ঢোকে, তাহলে বেশি দুর্ভোগে পড়ে যান কাশ্মীরবাসী। কারণ, এর ফলে ভারতের সেনাবাহিনী সেখানে অভিযান চালায়।

পারমাণবিক শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশ ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি যুদ্ধ হয়েছে কাশ্মীরকে নিয়ে।

দুই দেশের সর্বশেষ সংকটের শুরু ১৪ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় দেশটির আধা সামরিক সিআরপিএফের গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জনের বেশি জওয়ান নিহত হয়। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ এ হামলার দায় স্বীকার করে। এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে সীমানা পেরিয়ে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলা চালিয়েছিল ভারতের বিমানবাহিনী। ভারতের দাবি, ২১ মিনিটের ওই হামলায় মিরেজ ১০০০ থেকে ২০০০ কেজি ওজনের বোমা জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণকেন্দ্রে আঘাত হানে। বিশেষ বোমা ফেলে ধ্বংস করা হয় জইশ-ই-মুহাম্মদ, হিজবুল্লাহ মুজাহিদীন ও লস্কর-ই-তাইয়েবার ঘাঁটি। নয়াদিল্লির দাবি, ওই হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদের বড় ঘাঁটি গুঁড়িয়ে গেছে। নিহত হয় ৩০০ জঙ্গি। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্য উত্তেজনা চলছে।

তবে নির্বাচনের কয়েকটি জরিপে বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের আত্মঘাতী ওই বোমা হামলা ও ভারত সরকারের ত্বরিত পদক্ষেপে জন্য দেশপ্রেমের একটি ঢেউ তৈরি হয়েছে দেশে। আর তা গেছে মোদি ও বিজেপির পক্ষে।

ইমরানের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী দু-এক সপ্তাহে যদি দেখা যায় নির্বাচন মোদির বিরুদ্ধে যাচ্ছে, তাহলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরও এক দফা সামরিক অভিযান চালানো হতে পারে।

ভারতে ১১ এপ্রিল শুরু হয়ে পাঁচ দফায় ভোট গ্রহণ হবে। ১৯ এপ্রিল ভোট শেষে ২৩ এপ্রিল ফল ঘোষণা করা হবে।