রেকর্ড গড়ে জিতলেন নেতানিয়াহু

ডানপন্থী দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠন করে পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় আসছেন নেতানিয়াহু। ছবি: রয়টার্স
ডানপন্থী দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠন করে পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় আসছেন নেতানিয়াহু। ছবি: রয়টার্স

হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও শেষ পর্যন্ত জিতবেন নেতানিয়াহুই—এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছিল আগে থেকেই। শেষ পর্যন্ত সেটিই সত্যি হলো। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বেনি গান্টজকে হারিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আরও একবার নির্বাচিত হলেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এই নিয়ে রেকর্ড পাঁচবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন তিনি।

দেশটির তিনটি প্রধান টেলিভিশন চ্যানেলের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, নির্বাচনে কোনো পক্ষই এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। ৯৭ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দুই পক্ষই সমান ৩৫টি করে আসন পেয়েছে। কিন্তু ডানপন্থী দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠন করায় ১২০ আসনের মধ্যে ৬৫টি আসন দখল করে জোট সরকার গঠন করতে চলেছেন ডানপন্থী নেতা নেতানিয়াহু। ইসরায়েলে জোট সরকারের ক্ষমতায় আসাটাই অবশ্য নিয়মে পরিণত হয়েছে। দেশটির ৭১ বছরের ইতিহাসে এখনো পর্যন্ত কোনো দলই এককভাবে সরকার গঠন করতে পারেনি।

পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে অন্য একটি রেকর্ডও গড়বেন নেতানিয়াহু। দেশটির প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন-গুরিয়নকে ছাপিয়ে নেতানিয়াহুই হবেন টানা সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী। ২০০৯ সাল থেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন নেতানিয়াহু।

জয় নিশ্চিত হওয়ার পর উল্লাসরত সমর্থকদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন নেতানিয়াহু। শুধু ডানপন্থীদের নয়, বরং ইসরায়েলের সব জনগণের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। নেতানিয়াহু বলেন, ‘ডানপন্থী সরকার গঠিত হবে, এটি ঠিক। কিন্তু আমি দেশের প্রত্যেক মানুষের প্রধানমন্ত্রী হব। আমি খুবই আনন্দিত যে, ইসরায়েলের জনগণ পঞ্চমবারের মতো আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছেন। ডানপন্থী, বামপন্থী, ইহুদি, ইহুদি নন—এমন কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। এঁরা সবাই ইসরায়েলের জনগণ। আর ইসরায়েলের সব জনগণের প্রধানমন্ত্রী হয়ে উঠব আমি।’

তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই নির্বাচনকে অনেকেই নেতানিয়াহুর প্রতি জনগণের আস্থার পরীক্ষা হিসেবে দেখছিলেন। ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে তিনটি মামলায় ফেঁসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে নেতানিয়াহুর। যদিও তিনি সব অভিযোগকেই ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

যেভাবে টিকে গেলেন নেতানিয়াহু
তিনটি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পরও এবং প্রধান প্রতিপক্ষ দল ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টির তরফে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, ঠিকই নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন নেতানিয়াহু। কিন্তু কীভাবে টিকে গেলেন তিনি?

বিবিসির বিশ্লেষণ বলছে, নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময়ই নেতানিয়াহু ইসরায়েলের সাধারণ জনগণকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। প্রতিপক্ষরা ক্ষমতায় এলে ‘বামপন্থী’ সরকার গঠন করবে—এমন সতর্কবার্তা শুনিয়েছিলেন তিনি। নেতানিয়াহু আরও বলেছিলেন, বামপন্থী সরকার ক্ষমতায় এলে স্বীকৃত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হবে, যা ইসরায়েলের জন্য প্রাণঘাতী হুমকি সৃষ্টি করবে।

নির্বাচনের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করে নেতানিয়াহু তাঁর পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কেও জনগণকে একটি ধারণা দিয়েছিলেন। এ ছাড়া পশ্চিম তীরে ইহুদিদের বাসস্থান বৃদ্ধির নিশ্চয়তা দিয়ে কট্টরপন্থী ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছেন নেতানিয়াহু। একই সঙ্গে নিজের সমর্থকদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন এই বলে যে, ভোট না দিয়ে ঘরে বসে থাকলে বিরোধী দল নিশ্চিতভাবেই সরকার গঠন করবে।