মেদিনীপুরের বাম দুর্গে ত্রিমুখী লড়াই

মানস ভূঁইয়া ও দিলীপ ঘোষ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি।
মানস ভূঁইয়া ও দিলীপ ঘোষ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি।

২০১৪ সালের আগ থেকে পশ্চিমবঙ্গে বাম দুর্গ বলে পরিচিত ছিল মেদিনীপুর। ১৯৮০ সাল থেকে এই মেদিনীপুর লোকসভা আসনে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল বাম দল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিআইয়ের। কিন্তু ২০১৪ সালে এই বাম দুর্গকে তছনছ করে দিয়েছিল তৃণমূল। এবার এ আসনে লড়তে যাচ্ছে বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী। ফলে, মেদিনীপুরের ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা।

১৯৮০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মেদিনীপুরের সাংসদ ছিলেন সিপিআইয়ের নেতারা। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত নারায়ণ চৌবে, ১৯৮৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সিপিআইয়ের প্রখ্যাত নেতা ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত। এরপর ২০০১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ছিলেন সিপিআই নেতা প্রবোধ পান্ডা। ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত তো যুক্তফ্রন্ট সরকারের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়ের কাছে পরাস্ত হন সিপিআই নেতা প্রবোধ পান্ডা। এবার আর দল তাঁকে মনোনয়ন দেননি। সেখানে তৃণমূল এবার মনোনয়ন দিয়েছে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ এবং রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভূঁইয়াকে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস থেকে তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন।

মেদিনীপুর আসনে এবার বিজেপি প্রার্থী করেছে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। তিনি মেদিনীপুরের খড়গপুর বিধানসভা আসনের বিজেপির বিধায়ক। তিনি প্রথমবার পেলেন লোকসভার টিকিট। বাম দল প্রার্থী করেছে সিপিআই নেতা বিপ্লব ভট্টকে। কংগ্রেস করেছে শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়কে।

এ আসন নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, এখানে চার দলের চারজন নামী প্রার্থী হলেও মূল লড়াই হবে তৃণমূল, বিজেপি ও বাম প্রার্থীর মধ্যে। তাঁরা কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছেন।

২০১৪ সালে সর্বশেষ লোকসভার নির্বাচনে এই আসনের ফলাফলে দেখা যায়, তৃণমূল প্রার্থী অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায় পেয়েছিলেন ৫ লাখ ৭৯ হাজার ৮৬০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রার্থী সিপিআইয়ের প্রবোধ পান্ডা পেয়েছিলেন ৩ লাখ ৯৫ হাজার ১৯৪ ভোট। বিজেপি প্রার্থী প্রভাকর তেওয়ারি পেয়েছিলেন ১ লাখ ৮০ হাজার ১১২ ভোট। কংগ্রেস প্রার্থী বিমল কুমার রাজ পেয়েছিলেন মাত্র ৪৮ হাজার ৮৮৩ ভোট।

এবার মেদিনীপুরের বিজেপির জনপ্রিয়তা কিছুটা বেড়েছে। বাম দলও এই আসন থেকে পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। এতে এ আসনে যে এবার ত্রিমুখী লড়াই হবে, তা বলা যায়।

বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেছেন, এবার তাঁর দলই জিততে চলেছে এ আসনে। মানুষ এবার মমতাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে।

তৃণমূল প্রার্থী মানস ভূঁইয়া কংগ্রেস ঘরানার নেতা। রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন। সভাপতি হন ২০১৩ সালে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলে যোগ দেন। এরপর বিধায়ক ও মন্ত্রী হন।

বিপ্লব ভট্ট মেদিনীপুর পৌরসভার একজন বাম নেতা হিসেবে পরিচিত। বাম দল মনে করছে, এবার তৃণমূল-বিজেপির তীব্র লড়াই তাদের জয় এনে দিতে পারে। সেই আশা নিয়ে নির্বাচনী ময়দানে রয়েছেন বিপ্লব ভট্ট।

মেদিনীপুর লোকসভা আসনের নির্বাচন ষষ্ঠ দফায় আগামী ১২ মে। এর মধ্যে ঘটে যেতে পারে আরও অনেক রাজনৈতিক পরিবর্তন। মানুষ ঘুরে যেতে পারে সিদ্ধান্ত থেকে। মেদিনীপুরের মানুষ অপেক্ষা করছেন ১২ মের নির্বাচন আর ২৩ মে ফলাফলের দিনের জন্য।