জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষ, এখনো ক্ষমা চায়নি ব্রিটেন

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষপূর্তিতে পাঞ্জাবে নানা আয়োজন করা হয়। ছবি: রয়টার্স।
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষপূর্তিতে পাঞ্জাবে নানা আয়োজন করা হয়। ছবি: রয়টার্স।

১৩ এপ্রিল, ১৯১৯। আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে এই দিনে জালিয়ানওয়ালাবাগে ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস এক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এতে নিহত হয়েছিলেন ৪০০ নিরস্ত্র মুক্তিকামী ভারতীয় নাগরিক, মতান্তরে সংখ্যাটি হাজারের কাছাকাছি। গত বুধবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডকে ভারতে ব্রিটিশ ইতিহাসের একটি 'লজ্জাজনক ক্ষত' বলে উল্লেখ করেছেন।

ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ‘জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড’ ঘটে জালিয়ানওয়ালাবাগ নামের একটি বাগানে। ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের অমৃতসরের ৬-৭ হেক্টর এলাকাজুড়ে রয়েছে জালিয়ানওয়ালাবাগ বাগানটি।

জালিয়ানওয়ালাবাগে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে কয়েক শ নিরীহ মানুষ প্রাণ হারানোর পর শতবর্ষ পেরিয়ে গেলেও এখনো ক্ষমা চায়নি ব্রিটেন। আগের বিতর্কের জের ধরে সংসদে সংক্ষেপে একটি আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনার প্রস্তাব নাকচ করে দেন থেরেসা মে।

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের ১০০ বছর পর একে ট্র্যাজেডি হিসেবে অভিহিত করে থেরেসা মে বলেন, ১৯৯৭ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ সফরে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সেখানে গিয়ে তিনি উপলব্ধি করেন ভারতের সঙ্গে আমাদের অতীত ইতিহাস খুব একটা সুখকর ছিল না।

কী ঘটেছিল সেদিন?
১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগে জড়ো হন প্রায় ১৫-২০ হাজার ভারতীয়। তাঁদের অধিকাংশই শিখ সম্প্রদায়ের। ভারতীয়রা সেখানে একত্র হয়েছিলেন পাঞ্জাবি নববর্ষ উদযাপন করতে। পাঞ্জাবের নবান্ন উৎসব পালনের পাশাপাশি তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল দমন-নিপীড়নমূলক রাওলাত আইনের বিপক্ষে প্রতিবাদ জানানো। এই আইনের ফলে খর্ব হয়েছিল গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শুরু হয় বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার এবং অনির্দিষ্ট সাজার অন্যায্য সুযোগ। ফলে সাধারণ মানুষ এককাট্টা হয়ে নির্বিচারে গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ ছাড়া জাতীয় দুই নেতা সত্য পাল এবং ড. সাইফুদ্দিন কিশ্লের নির্বাসন আদেশ প্রত্যাহার করার দাবি জানান তাঁরা। বৈশাখী উৎসব পালন করতে আসা জনতা তখনো জানে না কী অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।

হঠাৎ করেই বাগানে ঢুকে পড়েন ৫০ জন ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাসদস্য। কর্নেল রেজিনাল্ড ডায়ারের নির্দেশে সাধারণ নাগরিকদের বাগান থেকে বের হওয়ার সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার আদেশে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে সৈনিকেরা। টানা ১০ মিনিটে প্রায় ১৬৫০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে তারা। কী হচ্ছে তা বুঝে ওঠার আগেই প্রাণ হারায় উপস্থিত জনতার একাংশ। পালানোর পথ না পেয়ে দেয়াল বেয়ে ওপরে উঠে অন্য পাশে যাওয়ার চেষ্টা করে অনেকে। কেউ সফল হয়ে কোনোমতে প্রাণ নিয়ে বেঁচে যান, কেউ ব্যর্থ হয়ে প্রাণটা হারান। বুলেটের আঘাত থেকে বাঁচতে অনেকে কুয়ায় ঝাঁপ দেওয়াকেই শ্রেয় মনে করেন।

ব্রিটিশদের হিসাবে এই হত্যাকাণ্ডে নিহত হয় ৪০০ জন। কিন্তু ভারতীয়দের হিসাবে তা ১ হাজারের কাছাকাছি। উপমহাদেশে ঔপনিবেশিকতার দিনগুলো কতটা নির্মম ছিল তা বুঝতে এই একটি ঘটনাই যথেষ্ট।
ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আলাদা আলাদা বার্তায় জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষপূর্তিতে শহীদদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।