বাঁকুড়ায় তৃণমূলকে বেগ দেবে সিপিএম ও বিজেপি

সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অমিয় পাত্র ও সুভাষ সরকার। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অমিয় পাত্র ও সুভাষ সরকার। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গে বাঁকুড়া লোকসভা আসনটি দীর্ঘদিন ধরেই বাম ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। এই আসন থেকে একটানা নয়বার সাংসদ হয়েছিলেন প্রবীণ সিপিএম নেতা বাসুদেব আচারিয়া। তাঁর জয়যাত্রা শেষ হয় ২০১৪ সালে, তৃণমূলের ঝড়ে। এবার এই আসনে সিপিএম প্রার্থী বদল করেছে। প্রবীণ সিপিএম নেতা ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্রকে এবার প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁকে লড়তে হবে প্রবীণ তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও বিজেপি প্রার্থী চিকিৎসক সুভাষ সরকারের সঙ্গে বিরুদ্ধে।

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে মমতার ঝড়ে তছনছ হয়ে যায় বাঁকুড়ার সিপিএমের সাজানো বাগান। ২০১৪ সালে মমতা ঠিক করেন, ৩৪ বছর ধরে টানা সাংসদ পদে থাকা বাসুদেব আচারিয়াকে হারাতে হবে। ওই আসনে তিনি প্রার্থী করেন সুচিত্রা সেন–তনয়া মুনমুন সেনকে। বাসুদেব আচরিয়াকে ৯৮ হাজার ৫০৬ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন মুনমুন সেন। তৃতীয় স্থান পান বিজেপির প্রার্থী চিকিৎসক সুভাষ সরকার।

এবার এই আসনে বিজেপি বাদে তৃণমূল ও সিপিএম প্রার্থী বদল করেছে। বিজেপির প্রার্থী থাকছেন চিকিৎসক সুভাষ সরকার। তৃণমূল এবার এই আসনে মুনমুন সেনকে সরিয়ে দিয়েছে। এখানে লড়বেন প্রবীণ তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কংগ্রেস এই আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি।

কংগ্রেস চাইছে এ আসনে জিতে আসুক সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাই তারা পৃথক প্রার্থী দেয়নি।

রাজনীতির অঙ্গনে সুব্রত মুখোপাধ্যায় পরিচিত নাম। সত্তরের দশকে সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের কংগ্রেসি মন্ত্রিসভায় তিনি ছিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ৭৩ বছরের এই প্রবীণ নেতা ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জড়িত ছিলেন তৃণমূলের সঙ্গে। ২০০০ সালে তিনি কলকাতা পৌর করপোরেশনের মেয়র হন। এই দায়িত্বে ছিলেন ২০০৫ সাল পর্যন্ত। সুব্রত মুখোপাধ্যায় রাজ্য কংগ্রেসের নির্বাহী সভাপতিও হয়েছিলেন। ২০১০ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে বনিবনা না হলে তিনি ফের ফিরে আসেন তৃণমূলে। এখন তিনি রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়নমন্ত্রী। তিনি কলকাতার বালিগঞ্জ বিধানসভা আসনের বিধায়ক।

এবারে মূল লড়াইটা হবে তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএম ও বিজেপির। দীর্ঘদিনের এই বাম দুর্গে এবার সিপিএম ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। কারণ, আসনটি সিপিএমের হলেও সিপিএম এখন অনেকটা কোণঠাসা। শাসক দল তৃণমূলের চাপের মুখে তাদের রাজনীতি করতে হচ্ছে। তবে সিপিএম আশাবাদী। তারা তাদের আগের অবস্থানকে অনেকটা উদ্ধার করতে পেরেছে। এবারে তারকা প্রার্থী মুনমুন সেন নেই। লড়াইটা তাই ত্রিমুখী।

বাঁকুড়ার আসনটি নিয়ে দোলাচলে রয়েছে তৃণমূল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, নির্বাচনে তৃণমূলকে বেগ দেবে সিপিএম ও বিজেপি। তবে তৃণমূল মনে করছে, বেগ পেতে হলেও জয় তাদেরই হবে।

বাঁকুড়া আসনের নির্বাচন ষষ্ঠ দফায় অনুষ্ঠিত হবে ১২ মে। সিপিএম ও বিজেপির সঙ্গে কতটা টক্কর দেবে তৃণমূল, তা সেদিন বোঝা যাবে।