অ্যাসাঞ্জকে পেতে দুই মাস সময় যুক্তরাষ্ট্রের

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ছবি: রয়টার্স
উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ছবি: রয়টার্স

গ্রেপ্তার হওয়া উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে (৪৭) যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভাব্য ফেরত পাঠানোর বিষয়ের যৌক্তিকতা প্রমাণে দুই মাসের কম সময়ের মধ্যে ওয়াশিংটনকে যুক্তরাজ্যে একটি চূড়ান্ত ও বিস্তারিত ফৌজদারি মামলা করতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মার্কিন সরকারি কর্মকর্তা গত শুক্রবার এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে প্রত্যর্পণ করতে দেশটির কর্তৃপক্ষ যুক্তরাজ্যের কাছে এরই মধ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠিয়েছে।

এই কর্মকর্তা বলেন, ওই পরোয়ানা পাঠানো হলেও অ্যাসাঞ্জকে প্রত্যর্পণে গত বৃহস্পতিবার থেকে ৬০ দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই একটি আনুষ্ঠানিক অনুরোধ দাখিল করতে হবে। অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হলে তাঁকে কোন কোন আইনি অভিযোগের সম্মুখীন করা হবে, অনুরোধে সে বিষয়ে বিস্তারিত রূপরেখা থাকতে হবে।

২০১০ সালে লাখ লাখ গোপন মার্কিন নথি ফাঁস করে হইচই ফেলে দেয় উইকিলিকস। এরপর ওই বছরই অস্ট্রেলীয় নাগরিক অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সুইডেনে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। এতে তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত যুক্তরাষ্ট্র সুযোগ পেয়ে যায়। গ্রেপ্তার এড়াতে ওই বছরের ডিসেম্বরে তিনি যুক্তরাজ্য পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন যুক্তরাজ্যের একজন বিচারক। কিন্তু অ্যাসাঞ্জের আশঙ্কা ছিল, সুইডেন তাঁকে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই তুলে দেবে এবং সেখানে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। এই আশঙ্কা থেকে ২০১২ সালে জামিনে থাকা অবস্থায় লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রয় নেন তিনি। এরপর থেকে গত প্রায় সাত বছর তিনি সেখানেই ছিলেন।

গত মঙ্গলবার ইকুয়েডর সরকার জানায়, তারা অ্যাসাঞ্জকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করছে। এরপর আশ্রয়ের শর্ত ভঙ্গ ও নথিপত্রে ত্রুটি থাকার যুক্তি দেখিয়ে গত বুধবার তাঁর আশ্রয় প্রত্যাহার করে নেয় ইকুয়েডর কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার লন্ডনে দূতাবাসের মধ্যে ঢুকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। মার্কিন কর্তৃপক্ষের হাতে অ্যাসাঞ্জকে তুলে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ নিয়ে আগামী ২ মে আদালতে শুনানি হবে।

এক বছরের কিছু আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার কৌঁসুলিরা অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে করা একটি ফৌজদারি অভিযোগপত্র গোপনে হাতে পান। বৃহস্পতিবার অ্যাসাঞ্জ গ্রেপ্তার হওয়ার পরই কেবল অভিযোগপত্রটি খোলা হয়েছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সরকারি কম্পিউটারে অননুমোদিত প্রবেশাধিকার পেতে অ্যাসাঞ্জ সাবেক মার্কিন সেনা গোয়েন্দা বিশ্লেষক চেলসি ম্যানিংয়ের সঙ্গে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। গত বছরের মার্চে যুক্তরাষ্ট্র এই অভিযোগ নথিভুক্ত করে।

মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ৬০ দিনের ওই মেয়াদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে নথিভুক্ত করা ওই অভিযোগে এখন পরিবর্তন বা কিছু সংযোজন করতে পারে। তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আনা হবে কি না, সে বিষয়ে কিছু বলতে এই কর্মকর্তা অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, এমন সম্ভাবনা রয়েছে।