ভারতে ক্যাডার সার্ভিসের দিন গেল!

ভারতে প্রথাগত নিয়োগপদ্ধতি ভেঙে যুগ্ম সচিব পদে সরকারের বিভিন্ন পদে বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগের বিষয়টি এখন আলোচনায়। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ে চুক্তিভিত্তিতে এমন নয়জনকে নিয়োগের বিষয়টি সরকারের অভ্যন্তরে ও বাইরে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। গত শুক্রবার ভারতের ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি) যুগ্ম সচিব স্তরে নয়জনের নিয়োগের কথা জানায়।

ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস বা আইএএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়ে বিশেষ নিয়োগের এ বিষয় ভারতীয় প্রশাসনিক স্তরে নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের রদবদল হিসেবেই দেখা হচ্ছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে আইএএসের কর্তৃত্ব বা আধিপত্য কমিয়ে এবং তাদের নিয়মনীতির বাইরে মোদি সরকারের নতুন নিয়মনীতির প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এতে সরকারি নিয়মনীতিতে বাঁধাধরা আইএএস পাস হয়ে আসার নিয়ম থাকছে না। অথচ ভারত সরকারের স্টিল ফ্রেম অবকাঠামো হিসেবে বিবেচনা করা হয় আইএএস ক্যাডারদের।

যেসব খাতে নিয়োগের জন্য সুপারিশ এসেছে, সেগুলো হচ্ছে কৃষি, সমবায় ও কৃষিকল্যাণ, বেসামরিক পরিবহন, বাণিজ্য, অর্থনীতি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, আর্থিক সেবা, নতুন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সড়ক ও হাইওয়ে এবং জাহাজ খাত।

সরকারের রাজস্ব বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, চুক্তিভিত্তিক যুগ্ম সচিব পদে নির্বাচিত প্রার্থীদের নিয়োগপ্রক্রিয়া সাক্ষাৎকার পর্যায়ে রয়েছে। এই নিয়োগপ্রক্রিয়ার বিষয় অবশ্য হুট করে হচ্ছে না। ২০১৪ সাল থেকে এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ওই সময় কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন একাডেমি ও প্রাইভেট খাতের যোগ্য ব্যক্তিদের যুগ্ম সচিব পদে আইএএস পরীক্ষা বাদেই পাশাপাশি সুযোগ (ল্যাটেরাল এন্ট্রি) দেওয়ার বিষয়টি গ্রহণ করে। শুরুতে ১০ জনকে নির্বাচন করা হয়। তবে বিষয়টি বর্তমান ও সাবেক আমলাদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।

কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারে আইএএসের বাইরে জ্যেষ্ঠ পদে নিয়োগের ঘটনা আগেও ঘটেছে। এর আগে বিজয় কেলার অর্থসচিব, মনটেক সিং আহলুওয়ালিয়া বাণিজ্য ও অর্থসচিব হিসেবে কাজ করেছেন। রাম বিনয় শাহি ভারতের শক্তি বিভাগের সচিব, শংকর শেখর সিং উত্তর প্রদেশের মুখ্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

সরকারের বিভিন্ন খাতের বিশেষ দক্ষ কর্মী বাড়ানোর লক্ষ্যে ও উন্নত সরকারব্যবস্থা গড়তে এ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে একজন হচ্ছে অম্বর দুবে। তিনি ভারতের মহাকাশ ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক কেপিএমজি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের পরামর্শকের কাজ করেন।

নাম প্রকাশ না করে ভারত সরকারের সাবেক এক সচিব বলেছেন, এতে কোনো পার্থক্য তৈরি হবে না। বর্তমান বিধানকে বরাবরই আমলাতন্ত্র বাতিল করে দিয়েছে। পুরো সিস্টেম পরিচালনার বিষয়টি শিখতে কয়েক বছর লেগে যাবে।’

১০টি যুগ্ম সচিব পদ রাজ্য সরকারের সব ধরনের কর্মকর্তাদের জন্য উন্মুক্ত। এখানে বিভিন্ন খাতের দক্ষ ব্যক্তিরা যুক্ত হতে পারেন। প্রার্থীদের বয়স ৪০–এর ভেতর হতে হবে এবং ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে আবেদন করা যাবে। চাকরির জন্য তিন বছরের চুক্তি হবে। যোগ্যতার ভিত্তিতে তা পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।