অভিজৎ-অসিত আর দুই রাম খেলিছে তো বেশ

অসিত মাল, রামচন্দ্র ডোম ও রামপ্রসাদ দাস। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
অসিত মাল, রামচন্দ্র ডোম ও রামপ্রসাদ দাস। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা আসনের ৪২টির মধ্যে একটি হচ্ছে বোলপুর আসন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবাহী শান্তিনিকেতনের অবস্থান এই বোলপুর আসনেই। বীরভূম জেলায় লোকসভার দুটি আসনের একটি বোলপুর আর অন্যটি বীরভূম। এই বোলপুর আসনটি তফসিলি সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত; যদিও বীরভূম আসনে তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন চিত্রতারকা শতাব্দী রায়। 


বোলপুর আসনে লড়ছেন তৃণমূলের অসিত মাল, সিপিএমের রামচন্দ্র ডোম, বিজেপির রামপ্রসাদ দাস আর কংগ্রেসের অভিজিৎ সাহা। সিপিএমের রামচন্দ্র ডোম বাদে এই আসনে অন্য তিন প্রার্থী নতুন।

রামচন্দ্র ডোম সিপিএমের দীর্ঘদিনের এক পরীক্ষিত সেনা। পেশায় চিকিৎসক। প্রচুর সুনাম এলাকায়। এই সুনামের জোরে সেই ১৯৮৯ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি এই আসনের একটানা সাংসদ ছিলেন। সবশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি হেরে যান তৃণমূল প্রার্থী অনুপম হাজরার কাছে। অনুপম হাজরা ছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর অনুপম হাজরার সঙ্গে টক্কর শুরু হয় তৃণমূলের নেতাদের। অনেকটা দূরে চলে যান অনুপম হাজরা। নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। এ বছরের জানুয়ারি মাসে তৃণমূল তাঁকে বহিষ্কার করে। আর মার্চ মাসের ১২ তারিখ অনুপম হাজরা যোগ দেন বিজেপিতে। বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিনি মনোনয়ন পান কলকাতার যাদবপুর আসনে। অন্যদিকে, তৃণমূল এই আসনে প্রার্থী করে দলের নেতা অসিত মালকে। অসিত মাল আগে কংগ্রেস করতেন। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই আসনেই অসিত মাল কংগ্রেস প্রার্থী হয়ে লড়েছিলেন সিপিএম প্রার্থী রামচন্দ্র ডোমের বিরুদ্ধে। এবার আবার সেই অসিত মাল এই আসনেই লড়ছেন সেই পুরোনো সিপিএম প্রার্থী রামচন্দ্র ডোমের বিরুদ্ধে। তবে তিনি লড়ছেন দলবদল করে, কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়ে।

অন্যদিকে, বিজেপির হয়ে এবার এই আসনে লড়ছেন অধ্যাপক রামপ্রসাদ দাস। রামপ্রসাদ দাস আবার এই আসনে গত বছরের বিজয়ী অনুপম হাজরার বন্ধু। একই বিষয়ে পড়াশোনা করেছে দুজন। এখন দুজনেই বিজেপির ঝান্ডা তুলে ধরেছেন। রামপ্রসাদ দাস ২০১৩ সালে যোগ দেন বিজেপিতে। ২০১৬ সালে বিজেপির টিকিটে বীরভূমের দুবরাজপুর আসনে বিধায়ক পদে লড়ে হেরে যান।

বোলপুর আসনে এবার কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন অভিজিৎ সাহা। তিনি একজন ব্যবসায়ী। কংগ্রেসের সঙ্গে জড়িত বহুদিন ধরে। ফলে এই বোলপুর আসনে এবার মূল লড়াইতে চলে এসেছেন তিন প্রার্থী। তৃণমূলের অসিত মাল, সিপিএমের রামচন্দ্র ডোম আর বিজেপির রামপ্রসাদ দাস। এই আসনে হবে ত্রিমুখী লড়াই।

তৃণমূল, সিপিএম ও বিজেপির প্রার্থীরা প্রত্যেকেই এবার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। সিপিএম প্রার্থী রামচন্দ্র ডোম বলেছেন, অবাধ ভোট হলে এই বোলপুরের মানুষ তাঁকে ফিরিয়ে নেবেনই। কারণ, তিনি কাজ করেছেন বোলপুরের মাটিতে, বোলপুরের মানুষের জন্য।


জয়ের ব্যাপারে একদম নাছোড়বান্দা তৃণমূল প্রার্থী অসিত মাল। গত নির্বাচনে তৃণমূল বিপুল ভোটে হারিয়ে দিয়েছিলেন সিপিএম প্রার্থী রামচন্দ্র ডোমকে। এবার তার কোনো ব্যত্যয় হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বোলপুরের মানুষ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের সঙ্গে আছেন।


আর বিজেপি প্রার্থী রামপ্রসাদ দাস বলেন, দেশে তো এখন মোদি হাওয়া বইছে। মানুষ চাইছে ফের ক্ষমতায় আসুক মোদিজি। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী এবার তাঁর দল জিততে চলেছে এই আসনে।


কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ সাহা মনে করেন, ত্রিমুখী এই লড়াইয়ের ফাঁকফোকর দিয়ে তাঁর জয়ের পথ খুলে যেতে পারে।

এই আসনে একটানা ২০ বছর সাংসদ ছিলেন সিপিএমের রামচন্দ্র ডোম। সবশেষ তিনি ২০০৯ সালেও লড়েছিলেন এই আসনে। কংগ্রেস প্রার্থী অসিত মালকে হারিয়ে জয়ীও হয়েছিলেন। তবে ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায় মমতা আসার পর তিনি তছনছ করে দেন সিপিএমের সাজানো বাগানকে। ফলে ২০১৪ সালের নির্বাচনে রামচন্দ্র ডোম হেরে যান তৃণমূল প্রার্থী অনুপম হাজরার কাছে। এই আসনে এবার লড়াই হবে ত্রিমুখী। সেই ডোম, রাম আর মালের মধ্যে। ২৯ এপ্রিল চতুর্থ দফায় ভোট হবে এই বোলপুর আসনে।