রয়টার্সের দুটি পুলিৎজার জয়

ছবি: রয়টার্স।
ছবি: রয়টার্স।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা গণহত্যা এবং যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়সন্ধানী মধ্য আমেরিকার অভিবাসীদের দুরবস্থা উন্মোচন করে পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার চিত্র উন্মোচনে ভূমিকা রাখেন রয়টার্সের স্থানীয় দুই সাংবাদিক। তাঁরা ৪৯০ দিন ধরে মিয়ানমারের কারাগারে বন্দী।

আমেরিকার জাতীয় পর্যায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পুলিৎজার পুরস্কার সাংবাদিকতার ‘নোবেল’ হিসেবে খ্যাত। গতকাল সোমবারের এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো দুটি করে পুলিৎজার পুরস্কার পেল রয়টার্স। রয়টার্সের প্রধান সম্পাদক স্টিফেন জে অ্যাডলার বলেন, ‘কাজের স্বীকৃতি পাওয়া অবশ্যই সন্তোষজনক। তবে এই মুহূর্তে আমাদের চেয়ে আমরা যাদের নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছি, তাদের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কাজেই রোহিঙ্গা এবং মধ্য আমেরিকার অভিবাসীদের দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে।’

অন্যান্য বিভাগে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দুক হামলা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পবিষয়ক তদন্তও প্রশংসিত হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও দ্য ওয়াশিংটন পোস্টও দুটি করে পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছে। রয়টার্স ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনের জন্য পুরস্কৃত হয়েছে। ইয়েমেন যুদ্ধের নৃশংসতা তুলে ধরায় এপিকে পুরস্কৃত করা হয়।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা গণহত্যার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য পুলিৎজার পায় রয়টার্স। দেশটির সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু রাখাইন রাজ্যের ইন ডিন গ্রামে বৌদ্ধদের হামলায় নিহত হন ১০ জন মুসলিম রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের অধিবাসী রয়টার্সের দুই তরুণ প্রতিবেদক ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ওউ মানুষের হাড়গোড় বেরিয়ে আসা এক গণকবরের খোঁজ পান। অপরাধী, সাক্ষী ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের কাছ থেকে সাক্ষ্য-প্রমাণ এককাট্টা করতে মাঠে নামেন তাঁরা। গ্রামবাসীর কাছ থেকে সাড়াজাগানো তিনটি ছবি উদ্ধার করেন তাঁরা। এর মধ্যে দুটি ছবিতে ফুটে ওঠে হাত-পা বাঁধা ১০ জন রোহিঙ্গা হাঁটু গেড়ে বসে আছে। তৃতীয় ছবিটিতে ওই ১০ জনের গুলিবিদ্ধ দেহ গণকবরের মধ্যে দেখা যায়।

২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রতিবেদনটি সম্পন্ন করার আগেই ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ওউকে গ্রেপ্তার করা হয়। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের পক্ষ থেকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। প্রতিবেদনটি যাতে প্রকাশিত হতে না পারে, সে জন্যই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে তাঁদের দুই সহকর্মী সাইমন লুইস এবং অ্যান্টনি স্লোডকাউস্কি ‘মিয়ানমারের হত্যাকাণ্ড’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি সম্পন্ন করেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। দেশের আনুষ্ঠানিক গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের দায়ে সেপ্টেম্বর মাসে ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ওউকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

অ্যাডলার বলেন, ‘ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ওউ এবং তাঁদের সহকর্মীরা অসাধারণ ও সাহসী কাজের স্বীকৃতি পাওয়ায় আমি রোমাঞ্চিত। আমাদের ফটোসাংবাদিকেরা ছবির মাধ্যমে দেখিয়েছেন বিশাল সব বাধা পেরিয়ে মানবতার জয় হতে বাধ্য। তবে আমাদের সাহসী সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ওউ এখনো কারাবাস করায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’

ব্রেকিং নিউজ ফটোগ্রাফি বিভাগে ‘আমেরিকায় পাড়ি জমানোর পথে’ শীর্ষক অ্যালবামে অবদান রাখেন রয়টার্সের ১১ জন সাংবাদিক। এই অ্যালবামে শরণার্থী এবং মধ্য আমেরিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়প্রার্থীদের দুর্দশার চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।

ট্রাম্পের কর ফাঁকি দেওয়া এবং ব্রেন্ট স্টেপ্লসের লেখা সম্পাদকীয়র জন্য পুরস্কার জিতেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। ইয়েমেনের দুর্ভিক্ষের চিত্র তুলে ধরে ফিচার ফটোগ্রাফিতে পুরস্কার পেয়েছেন দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের লরেঞ্জ টুগনোলি। নির্বাচনী প্রচারণার সময় গোপন অর্থের বিনিময়ে দুই নারীর মুখ বন্ধ রাখার ব্যাপারে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।