মানুষের নতুন প্রজাতির সন্ধান

হাত ও পায়ের আঙুল নির্দেশ করছে, গাছে চড়াটা হোমো লুজোনেন্সিস প্রজাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ছবি: রয়টার্স
হাত ও পায়ের আঙুল নির্দেশ করছে, গাছে চড়াটা হোমো লুজোনেন্সিস প্রজাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ছবি: রয়টার্স

ফিলিপাইনে আদিম মানুষের একটি নতুন প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। দেশটির লুজোন শহরে খননের সময় ওই প্রজাতির সন্ধান পান তাঁরা।

বিজ্ঞানীরা ২০০৭ সালে ওই খননকাজ শুরু করেন। এখন পর্যন্ত ওই প্রজাতির দাঁত ও হাত-পায়ের হাড় উদ্ধার করেছেন তাঁরা। তাঁদের ধারণা, ওই নমুনার মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে কয়েকজন কিশোরের হাড় রয়েছে। বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচারের বরাতে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি।

বিবিসির ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, লুজোনের কাজাও গুহায় আবিষ্কৃত ওই প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে হোমো লুজোনেন্সিস। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন, প্রজাতিটি আনুমানিক ৫০ হাজার থেকে ৬৭ হাজার বছর আগে ফিলিপাইন এসেছিল।

কাজাও গুহা। এখানেই আবিষ্কৃত হয় হোমো লুজোনেন্সিসের দাঁত ও হাড়। ছবি: রয়টার্স
কাজাও গুহা। এখানেই আবিষ্কৃত হয় হোমো লুজোনেন্সিসের দাঁত ও হাড়। ছবি: রয়টার্স

হোমো লুজোনেন্সিসের দৈহিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে আদিম ও আধুনিক উভয় প্রজাতির মানুষের মিল রয়েছে। প্রজাতিটির হাত ও পায়ের আঙুলের হাড় বাঁকা থাকায় বিজ্ঞানীদের ধারণা, গাছে চড়া ওই প্রজাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এসব নমুনা বিজ্ঞানীদের এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে এ অঞ্চলে মানুষের বিবর্তন হয়েছিল অত্যন্ত জটিল ধাপে।

হোমো লুজোনেন্সিস প্রজাতির আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলেছে। জন্ম দিয়েছে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের। আগে ধারণা করা হতো, আধুনিক মানুষের বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা হোমো ইরেকটিসই ১৯ লাখ বছর আগে প্রথম আফ্রিকা ত্যাগ করে অন্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। তবে অন্য কোনো প্রজাতি সে সময় আফ্রিকা ত্যাগ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আসতে পারে, হোমো লুজোনেন্সিস পাওয়ার আগে তেমন ধারণা করেননি বিজ্ঞানীরা। আবার সে সময় লুজোনে ঢোকার জন্য অবশ্যই সমুদ্র পাড়ি দেওয়া লাগত। কিন্তু কীভাবে এত আগে ওই প্রজাতি সমুদ্র পাড়ি দিল, সে সমস্যার সমাধান করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।

হোমো লুজোনেন্সিসের দাঁত। ছবি: রয়টার্স
হোমো লুজোনেন্সিসের দাঁত। ছবি: রয়টার্স

অন্যদিকে, ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপে পাওয়া যায় হোমো ফ্লোরোসিয়েন্সিস নামের একটি আদিম প্রজাতি। বামন আকৃতির ওই প্রজাতির ডাকনাম দেওয়া হয়েছিল হবিট। এই হবিটদের সঙ্গেও হোমো লুজোনেন্সিসের বেশ মিল রয়েছে।

লন্ডন ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের অধ্যাপক ক্রিস স্টিংগার বলেন, ‘২০০৪ সালে ক্ষুদ্র হোমো লুজোনেন্সিসের অসাধারণ আবিষ্কারগুলো প্রকাশিত হওয়ার পর আমি বলেছিলাম, মানববিবর্তনের ওই ধারা এই অঞ্চলের অন্য দ্বীপগুলোয় পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’