ত্রিপোলিজুড়ে হামলা-বিস্ফোরণ

ত্রিপোলির বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের সংঘর্ষ ও হামলা হয়। ছবি: রয়টার্স
ত্রিপোলির বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের সংঘর্ষ ও হামলা হয়। ছবি: রয়টার্স

লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির শহরতলিতে গতকাল শনিবার সারা রাত হামলা ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত লিবীয় সরকারের সঙ্গে দেশটির পূর্বাঞ্চলের বাহিনীর সঙ্গে কয়েক সপ্তাহ ধরে সংঘর্ষ চলছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে জানা যায়, গতকাল অন্তত ১০ মিনিট ধরে ত্রিপোলির আকাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল একটি উড়োজাহাজ। সেখান থেকে গুলিবর্ষণ চলছিল। উড়োজাহাজ থেকে একধরনের শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

গতকাল গভীর রাতে আবারও উড়োজাহাজের শব্দ পায় স্থানীয় লোকজন। ১০ মিনিট ধরে চক্কর দেয় উড়োজাহাজটি। উড়োজাহাজ থেকে ভারী বিস্ফোরক ফেলা হয়। এটি কোনো ড্রোন ছিল কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ত্রিপোলির বাসিন্দারা ড্রোন হামলার কথা বলেছেন। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ত্রিপোলির ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বেশ কয়েকবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। রাজধানীর দক্ষিণে সাবা জেলায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের অনুগত সেনাশিবিরেও হামলা চালানো হয়েছে।

ত্রিপোলির একমাত্র সক্রিয় বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ২৫ লাখ অধিবাসীর শহরটি বর্তমানে আকাশপথে সারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রাজধানীর ২০০ কিলোমিটার পূর্বাঞ্চলের শহর মিসরাতার বিমানবন্দরটি অবশ্য চালু রয়েছে।

গাদ্দাফির সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান হাফাত লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এলএনএ) নামে নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠন করেন। দুই সপ্তাহ আগে থেকে হাফাত এলএনএ দিয়ে হামলা চালিয়ে লিবিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে এখন পর্যন্ত এলএনএ সরকারের দক্ষিণ প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে পেরে ওঠেনি।

ত্রিপোলির বাসিন্দাদের ড্রোন হামলার কথা যদি সত্যি হয়, তবে তা অত্যাধুনিক এক যুদ্ধের সূচনা করবে। সামরিক সরঞ্জামের দিক থেকে পিছিয়ে থাকা এলএনএর ভরসা কেবল সোভিয়েত নির্মিত বুড়িয়ে যাওয়া জেট বিমান। ২০১১ সালে মুয়াম্মার গাদ্দাফির শেষ সময়ে কেনা সে বিমানগুলো লক্ষ্য নির্ধারণ করে গুলি চালাতে ব্যর্থ। স্থানীয় এবং সামরিক বাহিনীর সূত্রে জানা যায়, হেলিকপ্টারও নেই তাদের।

এর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মিসরের সহায়তায় লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল দখলে নিয়ে বিমান হামলা চালিয়েছেন হাফতার। মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাতে জানা যায়, ২০১৪ সালে দেশ দুটি হাফতারের মিত্রশক্তিকে সাহায্য করতে ত্রিপোলিতে বিমান হামলা চালায়। তখন থেকে এলএনএকে বিমান এবং হেলিকপ্টারসহ নানাবিধ সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লিবিয়ার আট বছরের সংঘাতের ইতিহাসে হাফতারকে এগিয়ে রাখতে চাইছে তারা। এমনকি ২০১৭ সালে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের শহর আল খাদিমে একটি বিমানঘাঁটি তৈরি করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।

ত্রিপোলিতে গতকালের এই হামলার ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। এর এক দিন আগেই দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়।