মমতার স্বপ্ন কি পূরণ হবে?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

ভারতের বিভিন্ন জনমত জরিপ প্রতিষ্ঠান বারবার তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে এবার পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের আসন। বাড়বে বিজেপির আসন। সেসব জনমত সমীক্ষাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনো রাজ্যের বিভিন্ন স্থান চষে বেড়াচ্ছেন আর বলছেন, এবার পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনেই জিতছে তৃণমূল। দুই দফায় যে পাঁচটি আসনে নির্বাচন হয়েছে, সেই পাঁচটি আসনেও তাঁরাই জিততে চলেছে। বিজেপিও পাল্টা দিয়ে বলেছে, প্রথম দফার নির্বাচনে পাঁচটি আসনেই জিতছে এবার বিজেপি। বিজেপির কথাকে আদৌ আমলে না নিয়ে মমতা ঘোষণা দিচ্ছেন, এবার ৪২ আসনই পাচ্ছে তাঁর দল তৃণমূল। তবে মমতা এ ঘোষণা আরও ছয় মাস আগে থেকে দিচ্ছেন।

মমতা বলেছেন, এই রাজ্যের ৪২ আসনে তিনি জয়ী হয়ে মোদিকে হটিয়ে জনগণের সরকার গড়বেন। আর তিনিই হবেন মোদিবিরোধী সরকার গড়ার প্রধান কারিগর। আর মমতার দলের নেতারা আরও একটু সংযোজন করে বিভিন্ন নির্বাচনী জনসভায় ঘোষণা দিচ্ছেন, ৪২ আসন পেলেই মমতা হবেন ভারতের প্রথম বাঙালি প্রধানমন্ত্রী। ভারতের লোকসভায় ৫৪৩ আসনের মাত্র ৪২টি আসনে জয়লাভ করে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন মমতা। কিন্তু বাস্তবে তা কতটুকু সম্ভব, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা বিতর্ক রয়েছে। কেউ বলছেন মমতার এটা প্রচারের হাতিয়ার। তিনি ৪২ আসন পেলেই যে কংগ্রেস এবং বিজেপি–বিরোধীরা তাঁকে প্রধানমন্ত্রী মেনে নেবেন, তাঁর ঘোষণা এখনো মমতার জোটের পক্ষ থেকে আসেনি। তবুও মমতা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।

আর ৪২ আসনে জয়ের কথা বলতে গিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করতে পিছপা হচ্ছেন না মমতা। তিনি এখন আদৌ পাত্তা দিচ্ছেন না বাম দলকে। তাঁর কথা, ওরা শেষ হয়ে গেছে। আবার এ কথাও বলছেন, কংগ্রেস এখন সাইবোর্ডের দল হয়েছে। তবে তিনি যে বিজেপিকে পাত্তা দিচ্ছেন, তা তাঁর কথাবার্তায় স্পষ্ট আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, তার যত রাগ ও মন্তব্য, সিংহভাগ বিজেপির দিকেই।

সবচেয়ে বড় কথা হলো কংগ্রেসের দুর্গ মুর্শিদাবাদ এবং মালদহের পাঁচটি আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের জেতা যে কঠিন হয়ে পড়েছে, সেটা হয়তো মমতা নিজেও বুঝে গেছেন। তাই এই দুই জেলার পাঁচ আসন ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য নানান বেফাঁস মন্তব্য বলে যাচ্ছেন। এই পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটি আসনই ছিল কংগ্রেসের আর একটি বাম দলের। তাঁদের দলের কোনো আসন ছিল না। এবার কেবল কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নূরকে ভাগিয়ে মমতা তাঁর দলে নিয়ে বাজিমাত করতে চাইছেন। তবে মৌসম বেনজিরের সেই আসনে জয়ের জন্য তীব্র চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

এদিকে জনমত সমীক্ষা এমন কোনো নিশ্চিত ইঙ্গিত দেয়নি যে মমতা এবার মালদহ আর মুর্শিদাদের কংগ্রেস দুর্গ ভেঙে তছনছ করে দেবেন? অথচ মমতা মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর আসনের কংগ্রেস প্রার্থী বিদায়ী সাংসদ অধীর চৌধুরী এবং মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর আসনের কংগ্রেস প্রার্থী ও বর্তমান বিদায়ী সাংসদ সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ছেলে অভিজিৎ মুখার্জির বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন নতুন অস্ত্র তুলেছেন মমতা। বলেছেন, এই অধীর চৌধুরী ও অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে জেতানোর জন্য মাঠে নেমেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস বা রাস্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ। আর এ অভিযোগ তুলে মমতা এখন প্রকাশ্যেই এই দুই প্রার্থীকে ঘায়েল করতে চাইছেন। কংগ্রেস বলেছে, এই মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলায় অর্ধেকের বেশি সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটার। সেই ভোটকে করায়ত্ত করার জন্য এবার কংগ্রেসের সঙ্গে আরএসএসকে জড়াচ্ছে তৃণমূল। তবে এতে লাভ হবে না মমতার। এই পাঁচ আসনের মধ্যে দুটি আসনে বিজেপির দুই সংখ্যালঘু মুসলিম প্রার্থী রয়েছেন।

এদিকে মমতার ৪২–এ ৪২ পাওয়ার যে স্বপ্ন, তাঁর কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপির বিদায়ী সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া। তিনি এবার বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে বিজেপির প্রার্থী। গত নির্বাচনে জিতেছিলেন দার্জিলিং থেকে। আলুওয়ালিয়া প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে তিনি নিশ্চিত হয়ে এ কথা বলছেন যে ৪২–এ ৪২ আসন পাবেন? তবে কি তিনি সব আসনের জয়ের আগেই ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করে রেখেছেন? তাই তো তিনি বিজেপিকে মাঠে নামতে দিচ্ছেন না। সভা করতে দিচ্ছেন না। মিছিলে বাধা দিচ্ছেন। এরপরেই তিনি কটাক্ষ করে বলেন, ‘৪২ আসনে জয় নয়, এবার ৪২ আসনেই হারবেন। এবার তো জোয়ার এসেছে বিজেপিতে।’

সারদা–কাণ্ডে আমানত লুট: মমতার বিরুদ্ধে তদন্ত হবে
মুর্শিদাবাদের বহরমপুর আসনে কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে তৃণমূলের একটানা প্রচারে ক্ষুব্ধ অধীর চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘এবার কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে মমতার বিরুদ্ধে তদন্ত হবে। আমি মমতাকে চোর বলেছি। কারণ তিনি সারদা আর রোজভ্যালি–কাণ্ডে গরিব মানুষের ক্ষুদ্র আমানত লুট করেছেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত হবে।’

অন্যদিকে কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সোমেন মিত্র পাল্টা দাবি করে বলেছেন, এবার মমতা তাঁর ডিগ্রি পাসের প্রমাণ দিক। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, মমতা মিথ্যাচার করছেন। ৪২ আসনে জেতা যেমন কঠিন, তেমনি ৪২ আসন নিয়ে সরকার গড়া আরও কঠিন। মোদি হারলেও তাই কংগ্রেস অথবা বিজেপি জোটের শরিক দলের সমর্থন ছাড়া কারও সরকার গড়া সহজ হবে না।