রাহুল ও অমিত শাহর ভাগ্য নির্ধারণ আজ

রাহুল গান্ধী ও অমিত শাহ।
রাহুল গান্ধী ও অমিত শাহ।

দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে ভারতের রাজনৈতিক তাপ-উত্তাপ। এই অবস্থায় আজ মঙ্গলবার হচ্ছে ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার তৃতীয় পর্বের ভোট।

সারা দেশের ১৫ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত দুই অঞ্চলের মোট ১১৬টি আসনে প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হবে আজ। এই প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এবং দেশের বর্তমান শাসক দল বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ।

দক্ষিণ ভারতের কেরালার ওয়েনাডকে দ্বিতীয় আসন হিসেবে বেছে নিয়েছেন রাহুল। এই রাজ্যের মোট ২০ আসনে সব কটিতেই আজ ভোট।

গুজরাটেও ভোট হবে ২৬ আসনের সব কটিতে, যেখানকার রাজধানী গান্ধীনগর থেকে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা নবতিপর লালকৃষ্ণ আদভানিকে সরিয়ে এই প্রথম ভাগ্যপরীক্ষায় নেমেছেন অমিত শাহ। প্রচারের শেষ দিনে তাঁর একটাই আবেদন ছিল, আদভানির চেয়েও বেশি ব্যবধানে যেন জয় হয় তাঁর। গত ভোটে আদভানি জিতেছিলেন সাড়ে তিন লাখের ব্যবধানে। ঠিক এইভাবে রাজ্যবাসীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। বলেছেন, রাজ্যে একটি আসনেও দল যদি হারে, তাহলে বিরোধীরা সেটাই বড় করে তুলে ধরবে। আজ তাই গুজরাটে প্রধানমন্ত্রীসহ বিজেপির সম্মান রক্ষার লড়াই।

গুজরাট ও কেরালার সব আসন ছাড়া তৃতীয় পর্বে ভোট হচ্ছে আসামের ৪, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের ৫টি করে কেন্দ্র, ওডিশায় ৬, ছত্তিশগড়ে ৭, উত্তর প্রদেশে ১০ এবং কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রের ১০টি করে আসনে। এর বাইরে ভোট বলতে গোয়ায় ২ ও দাদরানগর হাভেলি ও দমন দিউয়ের একটি করে আসনে। ভোট হবে জম্মু-কাশ্মীরের একটি আসনেও।

উত্তর প্রদেশের যে ১০ আসনে এবার ভোট, সেগুলোর মধ্যে গত নির্বাচনে বিজেপি জিতেছিল ৭টিতে। বাকি ৩টি আসন পেয়েছিল সমাজবাদী পার্টি। এই ১০ আসন বলতে গেলে সমাজবাদীদের গড়। মৈনপুরিতে সমাজবাদী পার্টির প্রবীণ নেতা মুলায়ম সিং যাদব এবার জোটের হয়ে বিজেপির মোকাবিলা করছেন। দীর্ঘ শত্রুতা ভুলে এই আসনে এক জনসভায় একই মঞ্চে উপস্থিত হন মুলায়ম ও মায়াবতী। দুজনেই দুজনের প্রশংসা করে জোটবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা বড় করে তুলে ধরেছেন। তাঁরই দলের নেতা আজম খান লড়ছেন রামপুর আসন থেকে বিজেপির জয়া প্রদার বিরুদ্ধে। সমাজবাদী পার্টির হয়েই এই আসন থেকে জয়া প্রদা দুবার লোকসভায় জিতেছিলেন। বিতাড়িত হয়ে এবার তিনি বিজেপিতে। কর্ণাটকের গুলবর্গা থেকে দাঁড়িয়েছেন লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা মল্লিকার্জুন খারগে। আজ তাঁরও ভাগ্য নির্ধারিত হবে। একই রকমভাবে বোঝা যাবে কেরালার তিরুবনন্তপুরম থেকে কংগ্রেসের সাবেক মন্ত্রী শশী থারুর জিতবেন কি না, কিংবা মহারাষ্ট্রের বারামতী থেকে কংগ্রেসের শরিক এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারের কন্যা সুপ্রিয়া সুলের কপালে কী লেখা আছে।

তৃতীয় দফার ভোটের আগে দাবদাহের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক উত্তাপও বেড়েছে। নির্বাচন কমিশনের বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে যুযুধানপ্রত্যাশীরা একে অন্যকে আক্রমণ করেই চলেছেন।

আজম খানের প্রচারের ওপর নির্বাচন কমিশন নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও তাঁর ছেলে আবদুল্লা আজম খান বিজেপির প্রার্থী জয়া প্রদাকে আক্রমণ করে বলেছেন, ‘আমাদের আলীও চাই, বজরঙ্গবালিও চাই। কিন্তু আনারকলি চাই না।’

জয়া প্রদা পাল্টা বলেছেন, ‘যেমন বাপ, তেমন বেটা।’

মায়াবতী কড়া সমালোচনা করেছেন নির্বাচন কমিশনের। বলেছেন, ‘আমি বুঝে পাই না, মালেগাঁও বিস্ফোরণের অন্যতম অভিযুক্ত প্রজ্ঞা ঠাকুরকে কমিশন কেন বারবার নোটিশ পাঠাচ্ছে। ধর্মযুদ্ধে নামার কথা বলার পর কেন তাঁর মনোনয়ন বাতিল করছে না?’

প্রজ্ঞা ঠাকুর স্বাস্থ্যের কারণে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরেই বিজেপি তাঁকে মধ্যপ্রদেশের ভোপাল আসন থেকে মনোনয়ন দিয়েছে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কংগ্রেসের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং। বিরোধীদের অভিযোগ, বিজেপির একমাত্র লক্ষ্য ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটানো।

মেরুকরণের রাজনীতিই ক্রমে ক্রমে প্রাধান্য পাচ্ছে। ভোট শুরু হওয়ার আগে বিজেপির প্রচারের মূল সুর ছিল উন্নয়ন ও বিকাশ। কিন্তু প্রবল বিরোধিতার মুখে প্রচারের সেই অভিমুখ বিজেপি ঘুরিয়ে দিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণের চেনা ছকে ফিরে এসেছে। হিন্দুত্ববাদ, দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ, পাকিস্তান, পুলওয়ামা, বালাকোট সেনা অভিযান হয়ে দাঁড়িয়েছে শাসক দলের মূল হাতিয়ার।

গত রোববার রাজস্থানে প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, দেশের এত অস্ত্রসম্ভার দীপাবলি উদ্‌যাপনের জন্য নয়। আর গতকাল মহারাষ্ট্রে বলেছেন, সন্ত্রাসবাদীরাও বুঝে গেছে, দেশের কোথাও তারা বোমা ফাটালে পাতালে গিয়েও তাদের টেনে এনে খতম করবেন মোদি।

পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে গিয়ে একই সুরে অমিত শাহ বলেছেন, ‘আমাদের ৪০ জওয়ানকে মেরে ফেললে আমরা কি ওদের (পাকিস্তান) সঙ্গে কথা বলব? না। ওপার থেকে গুলি চললে এপার থেকে গোলা চলবে।’

এই রাজনৈতিক উত্তাপের মাঝেই কংগ্রেস দিল্লিতে ৭টির মধ্যে ৬ আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে গতকাল। বিজেপি জানিয়েছে চার প্রার্থীর নাম। বোঝাই যাচ্ছে, বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি দিল্লির ৭ আসনে জোটবদ্ধ হতে পারল না। এই ব্যর্থতায় বিজেপির পোয়াবারো।