অতীত স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে

হামলার পর সেন্ট সেবাস্তিয়ান ক্যাথলিক চার্চে যিশুখ্রিষ্টের ভাস্কর্যে রক্তের ফোঁটা দেখা যায়।   ছবি: রয়টার্স
হামলার পর সেন্ট সেবাস্তিয়ান ক্যাথলিক চার্চে যিশুখ্রিষ্টের ভাস্কর্যে রক্তের ফোঁটা দেখা যায়। ছবি: রয়টার্স

শ্রীলঙ্কার চার্চে ও হোটেলে সন্ত্রাসী হামলায় ২৯০ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক শ মানুষ আহত হয়েছে। গত রোববার সকালে এই হামলার ঘটনা ঘটে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আটটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নেগোম্ব, বাটিকুলা ও কোচচিকাডে এলাকায় এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। রাজধানী কলম্বোর তিনটি বিলাসবহুল হোটেলও এর লক্ষ্য ছিল। এর আগে ২০১৮ সালের মার্চে বৌদ্ধরা দেশটির মসজিদ, মুসলমানদের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং বাড়িঘরে হামলা চালায়।

মূলত দেশটির ১৫ লাখ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়। বিস্ফোরণগুলো একের পর এক ঘটে। কিন্তু দুটি বিস্ফোরণের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ছিল কম। ফলে হামলার শিকার এক দল অন্যদের সতর্ক করতে পারেনি। দেশটির প্রায় ২০০টি চার্চের মোর্চা ন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান ইভানজেলিক্যাল অ্যালায়েন্স। তারা জানিয়েছে, গত বছর হুমকি ও সংঘর্ষের মতো প্রায় ৮৬টি ঘটনা ঘটেছে খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে।

শ্রীলঙ্কায় ভ্রমণ করেন, এমন মানুষদের লক্ষ্য করে কলম্বোর হোটেলে হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলা ২০০৮ সালে ভারতের মুম্বাইয়ের হামলার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। ওই হামলায়ও বিলাসবহুল হোটেল, ব্যস্ত রেলওয়ে স্টেশন ও ইহুদি প্রচারকেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছিল। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুসারে শুধু হতাহতের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য মুম্বাইয়ের হামলা চালানো হয়নি। বিদেশি পর্যটকেরাও এর লক্ষ্য ছিল, যাতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব হয়। পরে ভারত চিহ্নিত করেছিল, পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়েবা ওই হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু মুম্বাইয়ের ওই হামলার সঙ্গে রোববারের শ্রীলঙ্কার হামলার পার্থক্য আছে। শ্রীলঙ্কায় বেশ কয়েকটি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে আর ভারতের শুধু মুম্বাইয়ে হামলা চালানো হয়েছিল।

সাম্প্রদায়িক সহিংসতার এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে শ্রীলঙ্কার। তবে এটি পরিষ্কার নয়, ইতিহাসের সেই পুনরাবৃত্তি ঘটল কি না। তামিলদের স্বাধীনতাকামীদের সশস্ত্র সংগঠন লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম (এলটিটিই) ১৯৭৬ সালে গঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে তারা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালায়। ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এলটিটিইকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা দেয়। ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধের অবসান হয়। জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে প্রায় ৪০ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয় এই গৃহযুদ্ধের শেষ ভাগে। কিন্তু সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা গত বছর আবারও বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে মুসলমানদের ওপর বৌদ্ধদের ওই হামলার ফলে তা বৃদ্ধি পায়। এর আগে ২০১৬ সালে সরকার বলেছিল, ৩২ জন শ্রীলঙ্কান আইএসে যোগ দিয়েছে।