গুয়াহাটিতে ভোট দিলেন 'ভাড়াটিয়া' মনমোহন

আসামের গুয়াহাটিতে ভোট দেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও তাঁর স্ত্রী গুরশরণ সিং কাউর। ছবি: সংগৃহীত
আসামের গুয়াহাটিতে ভোট দেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও তাঁর স্ত্রী গুরশরণ সিং কাউর। ছবি: সংগৃহীত

মনমোহন সিংয়ের স্থায়ী ঠিকানা ভাড়া বাড়ি। আসামের রাজধানী গুয়াহাটির সরুমটরিয়াতে রাজ্যের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী হীতেশ্বর শইকিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া তিনি। টানা ১০ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন এই বাড়ির ভাড়াটিয়া হিসেবেই। এর আগে, ভারতের অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই এই বাড়িটিই তাঁর স্থায়ী ঠিকানা। আজ মঙ্গলবার গৌহাটির এই স্থায়ী ঠিকানার বাসিন্দা হিসেবেই ভোট দিলেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী গুরশরণ কাউরও।

১৯৯১ সালে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্বাচিত হন মনমোহন সিং। ভারতের জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হতে আসামকেই তিনি বেছে নেন। স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী হীতেশ্বর শইকিয়ার বাড়ি। শইকিয়া মারা যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রী হেমপ্রভা বা ছেলে দেবব্রত, কেউই ভাড়াটে বদল করতে চাননি। ১৯৯১, ১৯৯৫, ২০০১, ২০০৭ ও ২০১৩ সালে রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন মনমোহন। বাড়ির বর্তমান গৃহকর্তা, রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনমোহন সিংয়ের মতো ব্যক্তিত্ব শুধু তাঁদের নয়, গোটা আসামের জন্যই গর্ব। কারণ আসামের সাংসদ হিসেবেই তিনি দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ভারতের সম্মান বাড়িয়েছেন।’

আজ ভোট দিয়ে সোজা চলে আসেন ভাড়া বাড়িতে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন। দেবব্রত জানিয়েছেন, রাতেই দিল্লি উড়ে যাবেন তাঁদের ভিভিআইপি ভাড়াটিয়া।

এদিকে, উত্তর-পূর্ব ভারতে মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে আসামের ৪টি ও ত্রিপুরার ১টি আসনে ভোট গ্রহণ। তবে ৫টার পরও বুথে বুথে লম্বা লাইন চোখে পড়ে। বড় ধরনের কোনো গোলমালের খবর নেই। আসামে বিকেল ৫টা অবধি ভোট পড়েছে ৭১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ত্রিপুরাতেও ৭৭ দশমিক ২৮ শতাংশ ভোট পড়েছে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। প্রতিটি বুথেই ছিল পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনীর মোতায়েন। দু-একটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া নির্বাচন ছিল অবাধ ও শান্তিপূর্ণ।

ভোট গ্রহণ পর্ব শেষ হতেই আসামের বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা দেবব্রত শইকিয়ার দাবি, ১৪টির মধ্যে ১০টিতে তাঁদের জয় নিশ্চিত। অন্যদিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত দাশও একই দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, বিজেপি ও তাঁদের সহযোগী দল মিলে ১০টি আসনে জয় হচ্ছেই। পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা কেন্দ্রের বর্তমান সাংসদ তথা সিপিএ প্রার্থী জিতেন চৌধুরি দাবি করেছেন, মোটের ওপর শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। জয়ের বিষয়ে তিনি আশাবাদী। প্রথম আলোর কাছে একই দাবি করেছেন কংগ্রেসের মহারাজকুমারী প্রজ্ঞা দেববর্মণ এবং বিজেপির রেবতী মোহন ত্রিপুরা। অন্যদিকে, ত্রিপুরার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক শ্রীরাম তরণীকান্তের দাবি করেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণের খবর এসেছে। বড় ধরনের কোনো গোলমালের খবর নেই।

আজ শেষ হলো উত্তর-পূর্ব ভারতের ২৫টি আসনের ভোট গ্রহণ। গতবার এই ২৫টির মধ্যে কংগ্রেস ও বিজেপি পায় ৮টি করে আসন। ২টি পেয়েছিলেন বামেরা। আর ৭টি ছিল আঞ্চলিক দলগুলোর দখলে। এবার কোন দল কটি আসন পাবে, সেটা জানা যাবে ২৩ মে, ভোট গণনার দিন। এই এক মাস স্ট্রং রুমে রাখা থাকবে এদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী মোট ৬৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য।