সিপিআইএম-বিজেপি লড়াই দিনডোরিতে

লোকসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্র রাজ্যের একটি আসন থেকে লড়ছে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআইএম)। এটি দিনডোরি, প্রার্থী গাবিত জিবা পান্ডু। তিনি এখানকার স্থানীয় বিধায়ক। পরপর সাতবার একই কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে এসেছেন তিনি। ফলে তাঁকে ঘিরে প্রত্যাশা তুঙ্গে।

এই দিনডোরির চান্দোড় মার্কেটের ছোট্ট এক ঘরে সিপিআইএমের কার্যালয়। নির্বাচনকে ঘিরে এখানে ব্যস্ততা বেশ। সিপিআইএমের সমর্থকেরা বিশ্বাস করেন, এবার তাঁরাই জিতবেন এই আসনে। সিপিআইএম দলের সক্রিয় সদস্য প্রশান্ত দেওরে প্রথম আলোকে জানালেন, গাবিত জিবা কৃষকদের হয়ে প্রথম আওয়াজ তুলেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই গত বছর কৃষকেরা হেঁটে মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে মুম্বাই গিয়েছিলেন। ফলে তাঁর সম্ভাবনা বেশি। তিনি বলেন, ‘এখানে সব থেকে বড় সমস্যা জলের। নাসিকের জল আমরাই পাই না। এখানকার পূর্ব বাহিনী নদীগুলোর জল গুজরাটে সরবরাহ করা হয়। কৃষক থেকে সাধারণ মানুষ মোদি সরকারের ওপর ক্রুদ্ধ।’

সিপিআইএমের সচিব রাজারাম ঠাকরে চন্দভার বলেন, বিজেপি এবার যে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে, তাঁর ওপর মানুষের আস্থা কম। কারণ, এখানকার বিজেপির প্রার্থী ভারতী প্রভিন পাওয়ার কিছুদিন আগে রাষ্ট্রবাদী (ন্যাশনালিস্ট) কংগ্রেস পার্টির ছিলেন। কদিন আগেই তিনি বিজেপির শ্রাদ্ধ করেছেন। আজ আবার একই মুখে ভারতী বিজেপির জয়গান করছেন। একই অবস্থা রাষ্ট্রবাদী কংগ্রেসের। এবার লোকসভা নির্বাচনে তাদের প্রার্থী ধনরাজ আগে শিবসেনার বিধায়ক ছিলেন। এসব প্রার্থীর ওপর সাধারণ মানুষ কী করে ভরসা রাখবে?’ তবে দিনডোরি কেন্দ্রে সিপিআইএম ক্ষমতায় না এলেও তারা যে বিরোধী দলগুলোর গলায় কাঁটা হয়ে বিঁধবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

দিনডোরি আসনে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, এখানে ব্যক্তিকেন্দ্রিক নির্বাচন হয় না। দলভিত্তিক নির্বাচন হয়। এখন মোদিঝড় সর্বত্র। তাই এখানে বিজেপির আবার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা প্রবল। তবে অনেকের বক্তব্য বিজেপির অন্তঃকলহের প্রভাব নির্বাচনের ওপর পড়তে পারে। কারণ, বিজেপির বর্তমান সাংসদ চবন হরিশ্চন্দ্র দেওরামকে এবার মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তাই দলের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ভারতী নিজের দল থেকে সে রকম সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে শোনা গেছে। অনেকের মতে, ভারতী প্রার্থী হিসেবে খুব একটা লড়াকু নন। তাই এর ফায়দা বিরোধী দলগুলো নিতে পারে। দিনডোরি কেন্দ্রে যদি বিজেপি আবার ক্ষমতায় ফেরে, তা মোদিঝড়েই সম্ভবপর হতে পারে।

একদিকে ঝাঁ-চকচকে নাসিক শহর। আর অপরদিকে জরাজীর্ণ চান্দোড়। এখানকার বেশ কিছু গ্রাম আজ জনবসতিশূন্য। কাজ নেই, জল নেই, বিদ্যুৎ নেই, খাবার নেই সেই সব গ্রামে। এখানকার কৃষকেরা পেঁয়াজের চাষ করেই তাদের পেট ভরত। কিন্তু জলের অভাবে পেঁয়াজের ফলন বন্ধ। চাষের জমি শুকিয়ে কাঠ। কিছু গ্রামবাসী আজও আশায় বেঁচে আছে। তারা জানে না বিজেপি, কংগ্রেসকে। তারা শুধুই চায় যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের জলকষ্ট যেন চিরতরে দূর করে। স্থানীয় এক গ্রামবাসী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, অনেক পরিবার গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। এখন আমরা মাত্র কয়েকটা পরিবার এখানে পড়ে আছি। প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে গ্রামের মেয়েরা এক ঘড়া জল আনতে পারে। কত দল ক্ষমতায় এল গেল, কিন্তু আমাদের এখানে জলের কোনো সুরাহা হয়নি। উল্টো সমস্যা আরও বাড়ছে।’