বারাকপুরে চার নেতার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই

দীনেশ ত্রিবেদী, অর্জুন সিং ও গার্গী চট্টোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি।
দীনেশ ত্রিবেদী, অর্জুন সিং ও গার্গী চট্টোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি।

মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিবাহী কলকাতা শহরের উপকণ্ঠ বারাকপুর আসনে এবার চার রাজনৈতিক দলের চার প্রভাবশালী নেতা লড়ছেন। তৃণমূল, বিজেপি, বাম দল ও কংগ্রেসের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই—কেউ কাউকে ছাড়ার পক্ষপাতি নয়।

বারাকপুরে তৃণমূল নামিয়েছে বর্তমান বিদায়ী সাংসদ এবং সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীকে। বিজেপি নামিয়েছে এলাকার একসময়ের তৃণমূলের দোর্দণ্ড প্রভাবশালী নেতা অর্জুন সিংকে। অর্জুন সিং সম্প্রতি তৃণমূলে ছেড়ে ভিড়েছেন বিজেপিতে। বাম ফ্রন্টও নামিয়েছে তাদের শক্তিশালী নেত্রী গার্গী চট্টোপাধ্যায়কে। কংগ্রেসও এখানে দাঁড় করিয়েছে তাদের দলের আরেক নেতা মহম্মদ আলমকে। ফলে বারাকপুর এবার প্রভাবশালীদের লড়াই দেখতে যাচ্ছে।

জনমত সমীক্ষায় বারাকপুর আসনটিতে বিজেপির পক্ষ ভারী বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। অন্য তিন দলের মত ভিন্ন। তৃণমূল দাবি করেছে, এ আসনে এবারও জিতবেন তাদের প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী। তবে সিপিএম ও কংগ্রেস বলেছে, এত সহজে এবার আর জয় পাবে না তৃণমূল। জিততে হলে তাদের লড়তে হবে। লড়াই করে এবার জিততে হবে তাদের। জয়ের আশা তারাও করছে।

এই আসনের এবারের আলোচনা বিজেপির অর্জুন সিংকে ঘিরে। অর্জুন সিং কংগ্রেস ঘরানার একজন নেতা ছিলেন। বাবা সত্য নারায়ণ সিং ছিলেন এই এলাকার একজন কংগ্রেস বিধায়ক। অর্জুন সিং অবশ্য বাবার পথ ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে সেই ২০০১ সালে। হয়েছেন এই বারাকপুর কেন্দ্রের অধীন ভাটপাড়া বিধানসভা আসনের তৃণমূল বিধায়ক। চারবার ছিলেন তিনি বিধায়ক। ছিলেন ভাটপাড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান। হিন্দিভাষী এই নেতা এখানের হিন্দিভাষীদের একচ্ছত্র নেতা হিসেবে পরিচিত। বারাকপুর আসনে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি যোগ দেন বিজেপিতে। টিকিটও পান তিনি বিজেপির।

দীনেশ ত্রিবেদী গুজরাট ঘরানার মানুষ। তিনিও কংগ্রেস ঘরানার নেতা। ১৯৮০ সালে কংগ্রেসের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৯৮ সালে মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে যোগ দেন তৃণমূলে। ওই বছরই দলের একজন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০০৯ ও ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তিনি পরপর দুইবার এই বারাকপুর কেন্দ্রের তৃণমূলের টিকিটে সাংসদ হন। ২০১১ সালে তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী হন। রেল বাজেট ঘোষণা নিয়ে দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিতর্ক দেখা দিলে তিনি পদত্যাগ করেন রেলমন্ত্রীর পদ থেকে। পরে তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রীও হন।

সিপিএমের শক্তিশালী প্রার্থী হলেন সিপিএমের গার্গী চট্টোপাধ্যায়। কলেজে পড়ার সময়ই তিনি বামপন্থায় বিশ্বাসী হয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। যোগ দেন সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুতে। ২০১৩ সালে তিনি সিটুর প্রতিনিধি হয়ে একটি সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ায় যান। ২০১৬ সালে তিনি নৈহাটি বিধানসভা এবং ২০১৮–তে নোয়াপাড়া বিধানসভার উপনির্বাচনে বাম ফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে লড়েন। এই প্রথম তিনি এবার লোকসভার প্রার্থী হলেন।

এবার বারাকপুরে কংগ্রেসের হয়ে লড়ছেন মহম্মদ আলম। তিনি বরাবরই কংগ্রেসে ঘরানার নেতা ছিলেন। ২০১৩ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তিনি বিজেপির প্রার্থী হন পশ্চিমবঙ্গের ঘাটাল কেন্দ্রে। টালিউড তারকা দেবের সঙ্গে লড়ে হেরে যান তিনি। ২০১৬ সালে কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নানের হাত ধরে ফের ফিরে আসেন কংগ্রেসে। এবার পেয়ে গেছেন বারাকপুর আসনের টিকিট। মহম্মদ আলম বর্তমানে সঞ্জয় গান্ধী মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের পশ্চিমবঙ্গের কার্যকরী সভাপতি।

আগামী ৬ মে পঞ্চম দফায় নির্বাচন হবে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প শহরটিতে। বারাকপুর অঞ্চলজুড়ে রয়েছে বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান। অবাঙালি মানুষের প্রচুর বাস এখানে। কোন প্রভাবশালীর ভাগ্য খুলে, তা দেখতে উদ্‌গ্রীব হয়ে আছেন ভোটাররা।