রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের চড়া মূল্য

মাইথ্রিপালা সিরিসেনা  ও রনিল বিক্রমাসিংহে
মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ও রনিল বিক্রমাসিংহে

শ্রীলঙ্কায় ইস্টার সানডের দিন গত রোববার সংঘটিত ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলাকে গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য হয়তো ঠেকাতে পারত। কিন্তু গোয়েন্দা তথ্য উপেক্ষা করায় বয়ে গেল রক্তবন্যা। গোয়েন্দা তথ্যের এই উপেক্ষার পেছনে দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের জের আংশিকভাবে হলেও দায়ী বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

শ্রীলঙ্কার সরকারও স্বীকার করেছেন, হামলার বিষয়ে গোয়েন্দা সতকর্তা অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের বড় ধরনের ঘাটতি ছিল। বিশ্লেষকদের মত, দীর্ঘদিন ধরে চলা রাজনৈতিক সংকটকে এর জন্য দায়ী করা যায়।

ইস্টার সানডের দিন যে হামলা চালানো হলো, সে বিষয়ে সতর্কতায় কোনো অস্পষ্টতা ছিল না। ১১ এপ্রিল একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে শ্রীলঙ্কার পুলিশপ্রধান এক সতর্কতা জারি করে বলেন, স্থানীয় চরমপন্থী গোষ্ঠী ন্যাশনাল তৌহিদ জামায়াত (এনটিজে) ‘গুরুত্বপূর্ণ গির্জাগুলোতে’ আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছে। এই সতর্কতা নিয়ে সরকারের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তা আলাপ–আলোচনা করেছেন। কিন্তু এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বা উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী কিছুই জানলেন না। শ্রীলঙ্কার কর্দমাক্ত রাজনৈতিক দৃশ্যের সঙ্গে পরিচিত এমন মানুষের কাছে এটি খুব সামান্যই বিস্ময়ের। এই মলিন রাজনৈতিক দৃশ্য প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের মধ্যে বিবাদে প্রভাবিত।

প্রেসিডেন্ট পদটি ছাড়াও শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা, আইন ও শৃঙ্খলাবিষয়ক মন্ত্রীর পদে রয়েছেন সিরিসেনা।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের শ্রীলঙ্কাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যালান কিনান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চলমান লড়াইয়ের অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট নানাভাবেই তাঁকে দুর্বল করে রাখার চেষ্টা করেছেন। এর মধ্যে একটি পুলিশ বাহিনীকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা।’ কিনান আরও বলেন, ‘এটি খুবই স্বাভাবিক, প্রেসিডেন্টের সমর্থক নন, এমন মন্ত্রীদের সঙ্গে পুলিশ তথ্য বিনিময় করবে না।’

সরকারি কিছু সূত্র এএফপিকে বলেছে, দেশের সংকটাপূর্ণ এ অবস্থায়ও প্রধানমন্ত্রীকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেননি প্রেসিডেন্ট। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর জরুরি বৈঠক আহ্বানের পর প্রাথমিকভাবে সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব তাতে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, তাঁরা প্রেসিডেন্টের কাছেই শুধু জবাবদিহি করবেন।

কলম্বোভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি অল্টারনেটিভসের প্রধান পাইকিয়াসোদি সারাভানামুত্তু বলেন, এই রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের অর্থ নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ বা সতর্কতা একটি অকার্যকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দেওয়া। সারাভানামুত্তু প্রশ্ন করে বলেন, ‘এই দুজন (প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী) কী করছেন?’ তাঁদের অভিযুক্ত করে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী উভয়ের ব্যক্তিগত রেষারেষি নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের ওপর কালো ছায়া ফেলছে। নেতাদের দায়িত্ব জনগণকে সুরক্ষা দেওয়া, কিন্তু তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন। আর তাঁদের ব্যর্থতার মূল্য সাধারণ মানুষ দিয়েছে নিজেদের জীবন দিয়ে।