শ্রীলঙ্কা হামলায় অভিযুক্ত দুবার ভারতে যান

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলায় জড়িত একজন দুবার ভারত সফরে গিয়েছিলেন। তবে ভারত ওই আত্মঘাতী হামলাকারীর সফরের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে নারাজ।

নয়জন আত্মঘাতী হামলাকারীর একজন মোহাম্মদ মোবারক আযান। তিনি ২০১৭ সালে দুবার ভারতে এসেছিলেন। ভারতের একজন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে হিন্দুস্তান টাইমসকে এসব কথা বলেন। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ মোবারক আযানের ভারত সফরের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে নারাজ।

শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, শ্রীলঙ্কার গির্জা ও হোটেলে আক্রমণকারীদের মধ্য দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন মোবারক আযান। তিনি হামলার দিন বোমায় নিজেকে উড়িয়ে দেন। অপর হামলাকারী হলেন জাহরান হাশিম। তিনি দেশটির উগ্রপন্থী ইসলামি গোষ্ঠী ন্যাশনাল তৌহিদ জামায়াতের (এনটিজে) নেতা। তিনি এই হামলার প্রধান সন্দেহভাজন। হাশিম ২০১৪ সালে কাত্তানকুদিতে এনটিজে প্রতিষ্ঠা করেন। হাশিমও ভারতের কেরালা ও তামিল নাড়ুতে গেছেন।

শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ এখনো বাকি আত্মঘাতী হামলাকারীদের নাম–পরিচয় প্রকাশ করতে পারেনি।

এর আগে দেশটির প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী রুয়ান ওয়াইজেবর্ধনে বলেছিলেন, শ্রীলঙ্কায় ইস্টার সানডেতে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের একজন যুক্তরাজ্যে পড়ালেখা করেছেন। অস্ট্রেলিয়ায় একটি কোর্স করার আগে যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করেন এক হামলাকারী। অস্ট্রেলিয়ায় পোস্টগ্র্যাজুয়েট শেষে তিনি শ্রীলঙ্কায় ফিরে আসেন। তিনি বলেন, অধিকাংশ হামলাকারী সুশিক্ষিত। তাঁরা মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাঁরা আর্থিকভাবে যথেষ্ট স্বাধীন। তাঁদের পরিবারের আর্থিক অবস্থাও বেশ ভালো।

শ্রীলঙ্কার পুলিশ বলেছে, হামলাকারী সবাই শ্রীলঙ্কান। তারা নয়জন হামলাকারীর মধ্যে একজন নারীকে শনাক্ত করেছে। ওই নারীর নাম ফাতিমা ইব্রাহিম। তিনি শ্রীলঙ্কার কোটিপতি ব্যবসায়ী ইনসাফ আহমদ ইব্রাহিমের স্ত্রী।

ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীর বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম ফার্স্টপোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলাকারী হিসেবে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) তাদের যে আট সদস্যের ছবিসংবলিত ভিডিও প্রকাশ করেছে, তাতে ফাতিমাও আছেন। ওই ছবিতে সাতজনকে এক সারিতে ও পেছনে একজনকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা যায়। ভারতের গোয়েন্দারা বলছেন, পেছনে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন, তিনি ফাতিমা। আর ফাতিমার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্বামী ইনসাফ।

ফার্স্টপোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলার দিন রাতে ইব্রাহিমের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এ সময় অন্তঃসত্ত্বা ফাতিমা তাঁর তিন সন্তানকে নিয়ে আত্মঘাতী হন। ইনসাফের পরিবার তাঁর আরেক ভাই ইলহাম ইব্রাহিমের সঙ্গে তিনতলাবিশিষ্ট ওই অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ইব্রাহিম পরিবার শ্রীলঙ্কার শীর্ষ ব্যবসায়ীদের অন্যতম। ইনসাফ ইব্রাহিমের বাবা মোহাম্মদ ইউসুফ ইব্রাহিম কোটিপতি মসলা ব্যবসায়ী। ইনসাফের মূল ব্যবসা তামা দিয়ে তৈরি পণ্য। ভারতের গোয়েন্দারা বলছেন, তাঁর এক কারখানায় হামলার বোমাগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে।

দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় গত রোববার ধারাবাহিক বোমা বিস্ফোরণে ২৫৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত অন্তত ৫০০ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৯ জন বিদেশি নাগরিক। রোববার তিনটি গির্জা ও তিনটি বড় হোটেলে একযোগে বিস্ফোরণ ঘটে। ওই দিন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডে উপলক্ষে গির্জায় প্রার্থনা চলছিল। ওই সময় এসব বিস্ফোরণ ঘটে। ওই দিনই পরে আরও দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

হামলার তিন দিন পরে গত মঙ্গলবার আইএস হামলার দায় স্বীকার করে। তবে দায় স্বীকার করলেও এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনটি। এর মধ্য গত শুক্রবার রাতে শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে আত্মঘাতী তিনজনসহ ১৫ জন নিহত হন। দ্বীপদেশটিতে এ হামলা জড়িত সন্দেহে ১০০ জনকে আটক করেছে।

হামলার আগে ভারত দুবার শ্রীলঙ্কাকে সতর্ক করলেও পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেনি শ্রীলঙ্কার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এই ব্যর্থতার জন্য প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকেই দায়ী করেছেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। তাঁর দাবি, বিক্রমাসিংহের আমলেই শ্রীলঙ্কার গোয়েন্দা সংস্থা দুর্বল হয়েছে। তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের সময় অভিযুক্ত সামরিক কর্মকর্তাদের বিচারে সব মনোযোগ দেওয়ায় শ্রীলঙ্কার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দুর্বল হয়ে গেছে।