অভিষেকের আগে দেহরক্ষীকে বিয়ে করলেন থাই রাজা

থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর উপপ্রধান সুথিদাকে বিয়ে করেছেন। ছবি: এএফপি
থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর উপপ্রধান সুথিদাকে বিয়ে করেছেন। ছবি: এএফপি

সিংহাসনে বসার কয়েক দিন আগে বিয়ে করলেন থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন। গতকাল বুধবার তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর উপপ্রধান সুথিদাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পরই স্ত্রীকে নতুন রানি উপাধি দিয়েছেন তিনি। রাজপরিবারের বিবৃতিতে বলা হয়, রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন রানি সুথিদা ভাজিরালংকর্ন আয়ুধ্যাকে রাজপরিবারে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন থেকে সুথিদা রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে সব ধরনের মর্যাদা ভোগ করবেন।

এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, আগামী শনিবার থাই রাজার বিয়ের অনুষ্ঠান ঘটা করে উদ্‌যাপন করা হবে। এর আগে থাই রাজপরিবারের বিবৃতিতে বলা হয়, থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন গতকাল তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর উপপ্রধান সুথিদাকে বিয়ে করেছেন। বিয়ের পরই স্ত্রীকে নতুন রানি উপাধি দিয়েছেন তিনি। বিবৃতি প্রকাশের পরই তা গতকাল রাতে রয়েল নিউজের অংশে সম্প্রচার করেছে থাইল্যান্ডের সব টেলিভিশন চ্যানেল। এ ঘোষণার ফলে সুথিদা এখন শুধু আর সুথিদা নন। তিনি এখন কুইন সুথিদা বা রানি সুথিদা ভাজিরালংকর্ন আয়ুধ্যা। সুথিদা রাজার চতুর্থ স্ত্রী।

গতকাল ব্যাংককের ডুসিট প্যালেসে রাজার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। বিয়ের দিনে রাজা পরেছিলেন সাদা পোশাক আর ঐতিহ্যবাহী থাই সিল্ক পোশাকে ছিলেন সুথিদা। গতকাল তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা, রাজপরিবারের সদস্য, রাজপ্রাসাদের উপদেষ্টারা।

রাজার সিংহাসনের বসা উপলক্ষে তিন দিনের উৎসব শুরু হবে শনিবার থেকে।

বিয়ের আগে রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন ও দেহরক্ষী সুথিদার মধ্য প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে বিদেশি গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত
বিয়ের আগে রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন ও দেহরক্ষী সুথিদার মধ্য প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে বিদেশি গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত

সুথিদা থাই এয়ারওয়েজের সাবেক ফ্লাইট অ্যাটেন্ড্যান্ট। সুথিদাকে নিজের দেহরক্ষীদের একটি ইউনিটের উপকমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেন রাজা ভাজিরালংকর্ন। এ সময় বা এরপরে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে বিদেশি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। তবে তাঁদের গভীর প্রেমের সম্পর্কের কথা কখনো রাজপরিবার বা রাজপ্রাসাদ থেকে স্বীকার করা হয়নি।

এর আগে রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন বিয়ে করেছিলেন তিনবার। তিন বিয়েতেই বিচ্ছেদ ঘটেছে। তাঁর সাত সন্তান।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে রয়েল থাই সেনাবাহিনীর একজন পূর্ণ জেনারেল হিসেবে সুথিদাকে পদোন্নতি দেন রাজা। এরপর ২০১৭ সালে তাঁকে তাঁর ব্যক্তিগত প্রহরীদের উপকমান্ডার নিয়োগ করেন। এ ছাড়া তিনি তাঁকে থানপুইং বিশেষণে ভূষিত করেন। থাইল্যান্ডে এটি হলো একটি রাজকীয় পদবি, যার অর্থ হলো লেডি।

বিয়ের পরই স্ত্রীকে নতুন রানি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে রাজপরিবার থেকে বিবৃতি প্রকাশ কর হয়েছে। বিয়ের পর সুথিদার নতুন নাম হয়েছে সুথিদা ভাজিরালংকর্ন আয়ুধ্যা। ছবি: রয়টার্স
বিয়ের পরই স্ত্রীকে নতুন রানি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে রাজপরিবার থেকে বিবৃতি প্রকাশ কর হয়েছে। বিয়ের পর সুথিদার নতুন নাম হয়েছে সুথিদা ভাজিরালংকর্ন আয়ুধ্যা। ছবি: রয়টার্স

৭০ বছর সিংহাসনে থাকার পর ২০১৬ সালের অক্টোবরে মহা ভাজিরালংকর্নের বাবা রাজা ভূমিবল আদুলাদেজ মারা যান। আদুলাদেজের মৃত্যুর ৫০ দিন পর নতুন রাজা হিসেবে ওই সময়ের যুবরাজ মহা ভাজিরালংকর্নের নাম ঘোষণা করা হয়। দেশটির পার্লামেন্টের আমন্ত্রণে রাজসিংহাসনে বসতে সম্মত হন মহা ভাজিরালংকর্ন। শনিবার সিংহাসনে বসলে তিনি হবেন চকরি রাজবংশের দশম রাজা। তিনি রাজা রামা এক্স নামেও পরিচিত।

১৯৪৬ সাল থেকে, অর্থাৎ সাত দশক ধরে থাইল্যান্ডের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন ভূমিবল। দেশের জনগণের হৃদয়েও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে শ্রদ্ধার আসনে ছিলেন তিনি। ১৯৪৬ সালে ভাইয়ের মৃত্যুর পর মাত্র ১৮ বছর বয়সে ভূমিবল থাইল্যান্ডের সিংহাসনে আরোহণ করেন। ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর ৮৮ বছর বয়সে মারা যান তিনি। ৬৭ বছর বয়সী যুবরাজ মহা ভাজিরালংকর্ন ভূমিবলের একমাত্র ছেলে।

ভূমিবল আদুলাদেজের মৃত্যুর পর থেকে মহা ভাজিরালংকর্ন সিংহাসনে আরোহণের আগ পর্যন্ত রাজপ্রতিভূ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক সেনাপ্রধান ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রেম তিনসুলানন্দা।