হুয়াওয়েকে ফাইভ-জির কাজ দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত, খবর প্রকাশের পরই বরখাস্ত ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী

গেভিন উইলিয়ামসন। ছবি সংগৃহীত
গেভিন উইলিয়ামসন। ছবি সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে গেভিন উইলিয়ামসনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল) আলোচনা ফাঁস করে দেওয়ার দায়ে গতকাল বুধবার তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণ করেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন-বিষয়কমন্ত্রী পেনি মোরডন্ট।

যুক্তরাজ্যে ‘ফাইভ-জি’ নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজটি চীনের কোম্পানি হুয়াওয়েকে দেওয়া উচিত হবে কি না, তা নিয়ে দেশটিতে বিতর্ক চলছে। হুয়াওয়ে চীন সরকারের পক্ষে বিভিন্ন দেশে গোয়েন্দাগিরি করে বলে অভিযোগ আছে। গত ২৩ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে হুয়াওয়েকে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক স্থাপনের আংশিক কাজ দেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে কেউ কেউ এর বিরোধিতা করেন। এই আলোচনা নিয়েই পরদিন স্থানীয় ‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে শুরু হয় তোলপাড়।

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত শীর্ষ কমিটির আলোচনা কী করে ফাঁস হলো, তা অনুসন্ধানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মার্ক সেডউইলকে দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। এক সপ্তাহের মাথায় তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গেভিন উইলিয়ামসনকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো।

লক্ষণীয় বিষয় হলো, তথ্য ফাঁসের দায়ে সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্রের পিছু নেয়নি মে সরকার। বরং গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যর্থতার কারণে মন্ত্রীকেই সরিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে ব্রেক্সিট নিয়ে গৃহবিবাদের জের ধরে টালমাটাল অবস্থা থেরেসা মে সরকারের। এমন ভঙ্গুর পরিস্থিতে নিজের অনুগত একজন মন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজের বলিষ্ঠতার প্রমাণ দিলেন তিনি।

নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্তর্জাতিক উন্নয়ন-বিষয়কমন্ত্রী পেনি মোরডন্ট। এর ফলে দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন নারী প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন। আর আন্তর্জাতিক বিষয়কমন্ত্রী হিসেবে পেনি মোরডন্টের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন রোরি স্টুয়ার্ট। স্টুয়ার্ট এত দিন বিচার বিভাগের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

উইলিয়ামসন ২০১৭ সাল থেকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিনকে দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মন্তব্য করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী মে বলেন, উইলিয়ামসনের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের যোগ্যতার বিষয়ে তিনি আস্থা হারিয়েছেন।

উইলিয়ামসন কঠোরভাবে অভিযোগ অস্বীকার করছেন।

বিবিসির নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিবেদক ফ্রাঙ্ক গার্ডনার বলেন, উইলিয়ামসনকে সরিয়ে দেওয়ার পেছনে একের অধিক উদ্বেগজনক বিষয় যুক্ত। উইলিয়ামসন ‘টেলিগ্রাফ’-এর সহকারী সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বলেও বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল’ হলো দেশটির নিরাপত্তাবিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের শীর্ষ ফোরাম। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এর সাপ্তাহিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য মন্ত্রী, সরকারি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা এর সদস্য। রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘জিসিএইচকিউ’, ‘এমআই ফাইভ’ ও ‘এমআই সিক্স’ এই কমিটির সঙ্গেই রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের বিষয়ে আলোচনা করে। কমিটির সদস্যদের গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়ে ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’-এর অধীনে মুচলেকা দিতে হয়।

বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে, উইলিয়ামসন ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট’ ভঙ্গ করেছেন কি না, সে বিষয়ে ফৌজদারি তদন্ত হওয়ার।

বিবিসির নিরাপত্তাবিষয়ক আরেক প্রতিনিধি গর্ডন কোরেরা বলেন, হুয়াওয়ে নিয়ে তথ্য ফাঁস গুরুতর স্পর্শকাতর কোনো বিষয় নয়। কিন্তু এটি মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষতিসাধন করেছে। ফাইভ-জি স্থাপনের কাজে হুয়াওয়েকে যুক্ত করার বিষয়ে মিত্রদেশ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুতর আপত্তি আছে। তথ্য ফাঁসের ঘটনায় সরকার নিজের সিদ্ধান্তের বিষয়ে মিত্রদের কাছ থেকে সমর্থন আদায়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য তুলে ধরার সুযোগ হারিয়েছে। তাই বেড়েছে বিপত্তি। হুয়াওয়েকে কাজ দেওয়া হলে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো যুক্তরাজ্যের সঙ্গে তথ্য ভাগাভাগি অব্যাহত না রাখার হুমকি দিয়েছে।