জার্মানিতে হিটলারি কায়দায় নব্য নাৎসিদের মিছিল

সাক্সেন রাজ্যের প্লাউন শহরে গত ১ মে নব্য নাৎসিদের মিছিল। ছবি: সংগৃহীত।
সাক্সেন রাজ্যের প্লাউন শহরে গত ১ মে নব্য নাৎসিদের মিছিল। ছবি: সংগৃহীত।

পয়লা মে বিশ্ব শ্রমিক দিবসে জার্মানির একটি ছোট শহরে নব্য নাৎসিরা ৭৪ বছর আগে হিটলারের এনএসডিপি বা ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির অনুকরণে মিছিল করেছে।

জার্মানির পূর্বাঞ্চলে সাক্সেন রাজ্যের ছোট শহর প্লাউনে ১ মে প্রায় ৩০০ নব্য নাৎসি হিটলারি কায়দায় পতাকা হাত ও মশাল নিয়ে অর্ধদিন মিছিল ও সভা করে। ঘটনার দুদিন পর এই ধরনের মিছিলের অনুমতি দেওয়ার জন্য জার্মানির বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংবাদমাধ্যম স্থানীয় প্রশাসনের সমালোচনা করছে।

প্লাউন শহরে ‘তৃতীয় পথ’ নামের স্থানীয় নব্য নাৎসিদের ছোট দল ১ মে বিশ্ব শ্রমিক দিবসে জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা তাদের প্রায় ৩০০ অনুসারী সকাল থেকে বিকেল অবধি শহরজুড়ে নানা কর্মসূচি পালন করে। খয়েরি রঙের টি-শার্ট পরে বড় বড় ড্রাম বাদ্য, পতাকা, নানা রকম ফেস্টুন ও মশাল হাতে নিয়ে নব্য নাৎসিরা হিটলারের ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির অনুকরণে মিছিল করেছে। নব্য নাৎসিদের এই মিছিল থেকে যাতে কোনো অঘটন না ঘটে, সে জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ১৩০০ পুলিশ নিয়ে মিছিলটি অনুসরণ করে।

১৯৩৩ সালের ৩০ জানুয়ারি হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে জার্মানিজুড়ে তাঁর দল ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির অনুসারীরা তাঁদের শক্তি ও ত্রাস কায়েমের জন্য এই ধরনের মিছিলের আয়োজন করতেন।

সাক্সেন রাজ্য পার্লামেন্টে বাম দলের নেতা রিকো গেবহার্ট ও নেত্রী ইয়ানিনা ফাউ তাঁর রাজ্যে এই ধরনের মিছিলের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘আমাদের শাসনতন্ত্রে পরিষ্কার করে হিটলারের পার্টির অনুকরণে একই রঙের পোশাক, পতাকা, ড্রাম বাদ্য ও মশাল নিয়ে মিছিল নিষিদ্ধ থাকলেও প্লাউন শহরে সেই ঘটনা ঘটেছে। এই রাজ্যের সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক, পরিবেশবাদী সবুজ দল ও ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট দলের নেতারাও এই মিছিলে বিরুদ্ধে একই ধরনের সমালোচনা করেছেন।’

সাক্সেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোলান্ড ভল্ফ জানিয়েছেন, আইনের চোখে নিষিদ্ধ না হলে জার্মানিতে সব ধরনের দলে মিছিল বা সভা করার অনুমতি রয়েছে, তবে প্লাউন শহরে ‘তৃতীয় পথ’ নামের নব্য নাৎসি দলটি আইনের ফাঁকের অপব্যবহার করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘নব্য নাৎসিদের ঠেকাতে আমাদের আসল কাজ হলো সামাজিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।’

তবে সব দলের নেতারা রাজ্য পার্লামেন্টে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এই বিষয়ে তাঁর সুস্পষ্ট বক্তব্যর দাবি করেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ও সংবাদমাধ্যম হিটলারি কায়দায় নব্য নাৎসিদের মিছিলের সমালোচনা করে বলেছে, পুলিশ ইচ্ছা করলে এই ধরনের মিছিল ঠেকাতে পারত।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে পূর্বাঞ্চলের কেমনিজ শহরের কেন্দ্রে প্রায় সাত হাজার নব্য নাৎসি ও বর্ণবাদী রক্ষণশীলেরা বিক্ষোভ করে শরণার্থী, অভিবাসীবিরোধী ও চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণসহ দাঙ্গা হাঙ্গামা করেন। পরে পুলিশ নব্য নাৎসিদের বেশ কিছু সদস্যকে আইনে আওতায় এনে সাজা দেয়। জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী জার্মানিজুড়ে প্রায় ১২ হাজার সহিংস নব্য নাৎসি রয়েছেন।