আরামবাগে জোর লড়াই সাবেক ও বর্তমান সাংসদের

অপরূপা পোদ্দার, শক্তিমোহন মালিক, তপন কুমার রায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
অপরূপা পোদ্দার, শক্তিমোহন মালিক, তপন কুমার রায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার আরামবাগ আসনটি ঘিরে এবার সাবেক ও বর্তমান সাংসদের জোর লড়াই চলছে।

সিপিএমের সাবেক সাংসদ শক্তিমোহন মালিকের সঙ্গে লড়াই হচ্ছে তৃণমূলের বর্তমান সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের।

কাল সোমবার ভারতের লোকসভার পঞ্চম দফার নির্বাচন হবে। এ ধাপে পশ্চিমবঙ্গের সাতটি আসনের মধ্যে সবার নজরে রয়েছে আরামবাগ আসনটি।

আরামবাগ আসনটি তফসিলি সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত। এই আসনের অন্তর্গত রয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থভূমি তারকেশ্বর। এর কাছাকাছি হুগলির আলোচিত সিঙ্গুরের অবস্থান। সিঙ্গুরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টাটাবিরোধী আন্দোলনের জেরে টাটা তাদের ন্যানো গাড়ির কারখানা সরিয়ে নিয়েছিল গুজরাটে।

আরামবাগ আসনটি এর আগে ছিল বাম দলের হাতে। ২০০৯ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে জিতেছিলেন বামফ্রন্টের শরিক দল সিপিএমের প্রার্থী শক্তিমোহন মালিক। ২০১৪ সালে তিনি তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দারের কাছে হেরে যান। এবার এই আসনে তৃণমূলের টিকিটেই আবার লড়ছেন অপরূপা পোদ্দার। পশ্চিমবঙ্গের চাঞ্চল্যকর নারদ ঘুষ মামলায় তাঁর নামও ছিল। স্ট্রিং অপারেশনে তাঁর ঘুষ গ্রহণের ছবি ফাঁস হয়। এখনো সেই মামলা চলছে। তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সিপিএম প্রার্থী শক্তিমোহন মালিক। এ আসনে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন তপন কুমার রায়। পেশায় তিনি শিক্ষক। আর কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন সমাজসেবী জ্যোতি দাস।

তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার ২০১৪ সালে প্রথম সাংসদ হন। পেশায় তিনি একজন সমাজসেবী। ২০০৩ সাল থেকে তিনি ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ২০১০ সালে তিনি রিষড়া পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান হন।

শক্তিমোহন মালিক পেশায় একজন শিক্ষক। ছাত্রজীবন থেকে তিনি জড়িয়ে আছেন বামপন্থীদের সঙ্গে। ২০০৯ সালে আরামবাগ আসন থেকে তিনি লোকসভার সাংসদ হন। ২০১৪ সালে তিনি তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দারের সঙ্গে লড়ে হেরে যান।

বিজেপির প্রার্থী তপন কুমার রায় বিজেপির রাজ্য কমিটির শিক্ষা সেলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১১ সালে তিনি যুক্ত হন বিজেপির সঙ্গে। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক।

আর কংগ্রেসের প্রার্থী জ্যোতি দাস কংগ্রেস পরিবারের মেয়ে। বিয়ের পর তিনি স্বামীর সঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হন। এবার তিনি প্রথম সাংসদ পদে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, আরামবাগ আসনে এবার লড়াই হবে তীব্র। তৃণমূল, সিপিএমের পাশাপাশি বিজেপিও এ আসনে প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে।

জয়ের ব্যাপারে তিনটি দলের প্রার্থীই জোর আশাবাদী। অপরূপা পোদ্দার ভাষ্য, এই রাজ্যে দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) উন্নয়ন দেখে আর কেউ মুখ ঘুরাতে পারবেন না। দিদিকেই ভোট দেবেন। মানুষ এখন বিজেপি আর বাম দলকে চাইছেন না। এ দুটি দলের অস্তিত্ব নিয়েই টানাটানি। আর কংগ্রেস তো একটি ক্ষয়িষ্ণু দল।

শক্তিমোহন বলছেন, জনগণ এখন বুঝতে পারছেন, দেশ গড়ার জন্য বাম দলের বিকল্প নেই। জনগণ তৃণমূল ও বিজেপির শাসন দেখেছেন। তাই তাঁরা আবার ঘুরে আসছেন বামপন্থী দলের দিকে।

বিজেপি প্রার্থী তপন রায় আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন, দেশজুড়ে এবারও উঠেছে মোদিঝড়। সেই ঝড়ে উড়ে যাবে বিরোধীরা। এই রাজ্যে, এই আসনে এবার পতাকা ওড়াবে বিজেপি।

আর কংগ্রেস প্রার্থী জ্যোতি দাস বলেছেন, এবার কিছুই বলা যাচ্ছে না। জনগণ দেখেছেন ওদের শাসন। তাই এবার এখানকার জনগণ চুপচাপ কংগ্রেসের হাত প্রতীকে ভোট দেবেন।